সেলিব্রেশন। ক্যানবেরায় ঝড় তুলে স্যামির সঙ্গে। ছবি: টুইটার।
ম্যাচ উইনাররা এ রকমই। যখন ফর্মে থাকে না, তখন হাহাকার। আর ফর্মে ফিরলে বিস্ফোরণ আর হইচই। ক্রিস গেইলও সে রকমই ম্যাচ উইনার। মঙ্গলবারের ইনিংসটার পর কে বলবে, এই মানুষটারই গত কুড়ি মাস ধরে ওয়ান ডে-তে কোনও সেঞ্চুরি ছিল না?
খোদ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের প্রেসিডেন্ট যখন কোনও ক্রিকেটারের অবসরের দাবিতে সায় জানিয়ে সাধারণ ক্রিকেটভক্তের পোস্ট রি-টুইট করেন, তখন সে কী অসম্ভব চাপের মধ্যে মাঠে নামে, তা একজন ক্রিকেটার হিসেবে বুঝতে পারি। তার উপর টানা চোট-আঘাত। মঙ্গলবারও ব্যাট করতে করতে ওর পায়ের পেশিতে টান ধরেছিল। এই চাপ ও ফিটনেস সমস্যা নিয়েও যে গেইল এমন একটা বিধ্বংসী ইনিংস খেলতে পারল, সেটা ওর ক্ষমতারই প্রতিফলন। তা সেটা যতই জিম্বাবোয়ে ম্যাচে হোক।
কিন্তু বিপক্ষের জন্য এটাই সবচেয়ে খারাপ খবর নয়। আমি উল্টো দিকের অধিনায়ক হলে গেইলের খুনে ব্যাটিংয়ের থেকে আরও বেশি চিন্তায় থাকতাম ওর ঠান্ডা খুনির মতো মানসিকতাটা নিয়ে। যেটা মঙ্গলবার শুরু থেকেই দেখলাম ক্যানবেরায়। শুরুতে কোনও ঝুঁকি নয়। উইকেট যেতে পারে, এমন কোনও বিপজ্জনক শট খেলাও নয়। গেইল কিন্তু বড় ইনিংস খেলার মানসিকতা নিয়েই নেমেছিল। প্রথম ২৪ রান করে ২৬ বলে। এর পর রান-আ-বল হিসেবে ব্যাট করে গেল হাফ সেঞ্চুরি পর্যন্ত। ওর একশো আসে ১০৫ বলে। তার পর থেকেই গতি বাড়াতে শুরু করে ও।
ওর এই স্ট্র্যাটেজিটা গত বছর আইপিএলের সময়ও দেখছিলাম। মানছি, এই স্ট্র্যাটেজি ওকে ধারাবাহিকতা এনে দেয়নি। কিন্তু এ দিন যেন একটু বেশি মাত্রায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দেখাচ্ছিল। হয়তো অনেকের কাছে অনেক কিছু প্রমাণ করার আছে ওর। কারণ যাই হোক না কেন, এই খুনি মানসিকতাটাই কিন্তু সবচেয়ে ভয়ের।
প্রথম বলেই ওর বিরুদ্ধে ওঠা এলবি-র আবেদন নাকচ হয়ে গিয়েছে। দু’শোয় পৌঁছনোর অনেক আগে নো-বলের জন্য ওর আউট বাতিল হয়ে গিয়েছে। এগুলো বাদ দিয়ে নিজেকে সেট করে নেওয়ার পর যদি গেইলের স্ট্রোকগুলোর কথা ভেবে দেখেন, মনে হবে স্বপ্ন দেখছি। যে ১৬টা ছয় মেরেছে তার বেশির ভাগই অন সাইডে। পুল-হুক-স্লগ সুইপে। শুরুতে তাড়াহুড়ো না করে পরের দিকে এই ঝড় বইয়ে দেওয়ার মানসিকতাটাই মারাত্মক।
আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে-তে ডাবল সেঞ্চুরি মানেই বিশাল কীর্তি। আজ পর্যন্ত পাঁচটার বেশি হয়নি। ভারতীয়দের একচেটিয়া ক্লাবে এই প্রথম কোনও বিদেশি সুযোগ পেল। সচিন, সহবাগ, রোহিত কারটা বেশি ভাল, কারটা কম, সেই তুলনায় যাচ্ছিই না। প্রত্যেকটাই সমান কৃতিত্বের, সমান উপভোগ্য। প্রতিটা ডাবল সেঞ্চুরিই ব্যাটসম্যানের জাত চিনিয়ে দিয়েছে যেমন, তেমনই এ দিনেরটাও বুঝিয়ে দিল ক্রিস গেইল কোন জাতের ব্যাটসম্যান।
ওর ফর্মে ফেরাটা যে বিশ্বকাপেই ঘটল, তার জন্য ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট ফ্যানরা উত্সব পালন করতেই পারে। কারণ, এমনিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমটা খারাপ খেলছে না। এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচে তিনশো করল। তার উপর গেইলও ফর্মে। তা যতই জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে হোক না কেন। এই অবস্থায় ভারতেরও কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবতে হবে।
বিপক্ষ হিসেবে ক্যারিবিয়ানরা অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো মারাত্মক, এ কথা বলছি না। তবে সমীহ আদায় করে নেওয়ার মতো খেলছে ওদের ব্যাটসম্যানরা। গেইল, স্যামুয়েলস, সিমন্স, স্যামি, ব্র্যাভোরা ফর্মে। কিন্তু বোলিংয়ে গভীরতা কম থাকায় বড় রান তুলেও আয়্যারল্যান্ডের কাছে হেরেছে। টেলর, হোল্ডার ছাড়া চোখ বুজে ভরসা করার মতো বোলার তেমন নেই ওদের দলে। বোলিংটা আর একটু ধারালো হলে দলটা আরও মারাত্মক হয়ে উঠত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৭২-২ (গেইল ২১৫, স্যামুয়েলস ১৩৩*)
জিম্বাবোয়ে ২৮৯ (শন উইলিয়ামস ৭৬, টেলর ৩-৩৮)।