অশোক মলহোত্র

স্টোকস, আর্চার বোঝাল কেন ইংল্যান্ড ফেভারিট

গত এক বছর ধরে ইংল্যান্ড দারুণ ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু বিশ্বকাপে ওদের শক্তি আরও বেড়ে গিয়েছে দলে জোফ্রা আর্চার আসায়। আইপিএলেই নজর কেড়েছিল আর্চার। বলে যেমন গতি আছে, তেমন বুদ্ধি করে স্লোয়ারটাও দিতে পারে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০৪:১০
Share:

আগ্রাসী: জোফ্রা আর্চারের গতিতে বিধ্বস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা। গেটি ইমেজেস

ইংল্যান্ডকে এই বিশ্বকাপের এক নম্বর ফেভারিট বলা হচ্ছিল। যে ভাবে ওরা বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল, তাতে মনে হচ্ছে, ভুল কিছু বাছা হয়নি। প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে উড়িয়ে দিল অইন মর্গ্যানের ইংল্যান্ড।

Advertisement

গত এক বছর ধরে ইংল্যান্ড দারুণ ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু বিশ্বকাপে ওদের শক্তি আরও বেড়ে গিয়েছে দলে জোফ্রা আর্চার আসায়। আইপিএলেই নজর কেড়েছিল আর্চার। বলে যেমন গতি আছে, তেমন বুদ্ধি করে স্লোয়ারটাও দিতে পারে। এত দিন ইংল্যান্ডের বোলিং নিয়ে আমার প্রশ্ন ছিল। ওদের পেসারদের মধ্যে দারুণ গতিতে বল করতে পারে, এমন কেউ ছিল না। আর্চার আসাতে সেই সমস্যাটা মিটল।

ইংল্যান্ডের ৩১১ রান রান তাড়া করতে নেমে আর্চারের বাউন্সারটা যখন হাসিম আমলার হেলমেটের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে গলে গিয়ে কপালে লাগল, তখনই মনে হয় কেঁপে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘণ্টায় প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বলটা এসে আঘাত করে আমলাকে। ওর মতো টেকনিক্যালি নিখুঁত ব্যাটসম্যানও সামলাতে পারেনি আর্চারের বিষাক্ত বলটা। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে। আমলার শুরুতেই ওই ভাবে বেরিয়ে যাওয়াটা কিন্তু বড় ধাক্কা দিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এর পরে আমলা যখন নামল, তখন কিন্তু ম্যাচ বেরিয়ে গিয়েছে। মাত্র ৩৯.৫ ওভারে ২০৭ রানে শেষ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর্চার ২৭ রানে তিন উইকেট নিল। দুটো করে উইকেট নিল বেন স্টোকস এবং লায়াম প্লাঙ্কেট।

Advertisement

ওভালের এই ম্যাচে সব কিছুই ঠিকঠাক করল স্টোকস। ব্যাট হাতে প্রথমে ইংল্যান্ডকে টানল। শেষ দিকে তিন ওভার বল করে ১২ রানে দু’উইকেট নিল। আর অবিশ্বাস্য একটা ক্যাচ ধরল। রশিদের বলে ফেহলুকওয়েওর। আমার দেখা অন্যতম সেরা ক্যাচ। এর চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স কোনও অলরাউন্ডার বোধ হয় করতে পারে না।

স্টোকসের পাশাপাশি এই ম্যাচের অন্যতম নায়ক আর্চারও। স্টোকসের থেকে এ রকম খেলা ইংল্যান্ড আশা করেই থাকে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে যে আর্চার এতটা চমকে দেবে ভাবা যায়নি। অথচ একটা সময় এই বিশ্বকাপে খেলার কথাই ছিল না আর্চারের। ইংল্যান্ড যে প্রাথমিক দলটা করেছিল, তাতে এই ফাস্ট বোলারকে রাখেনি। সেটা বড় ভুল ছিল নির্বাচকদের। আর্চার কিন্তু যে কোনও দিন ইংল্যান্ডের বাকি পেসারদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। শেষ পর্যন্ত ভুল শুধরে নিয়ে আর্চারকে চূড়ান্ত দলে রাখে ইংল্যান্ডের নির্বাচকেরা। যার ফল পাওয়া গেল।

এই ইংল্যান্ড দলটায় প্রায় সব কিছুই আছে। প্রথমে ব্যাট করে ওরা আট উইকেটে ৩১১ রান তুলল। দুরন্ত ফর্মে থাকা জনি বেয়ারস্টো ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই কট বিহাইন্ড হয়ে যায়। প্রথম ওভারেই লেগস্পিনার ইমরান তাহিরকে দিয়ে শুরু করিয়ে চমকে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডুপ্লেসি। তাহিরও দ্বিতীয় বলে উইকেট তুলে নেয়।

চমকের অবশ্য ওখানেই শেষ। এর পরে ইংল্যান্ড খেলাটা ধরে নেয়। জেসন রয় এবং জো রুট মিলে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ গড়ে ইংল্যান্ডকে ঠিক রাস্তায় নিয়ে আসে। বাকি কাজটা ঠিকঠাক করে দেয় বেন স্টোকস (৭৯ বলে ৮৯)। তবে আমি একটা সময় ভেবেছিলাম, ইংল্যান্ড গোটা ২০ কম রান তুলেছে। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম ওদের এখন আর্চার আছে।

প্রথম সাত ওভারে ২৭ রান দিয়ে তিন উইকেট তুলে নিল এই পেসার। আর্চারের এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। আর অভিষেক ম্যাচে ও বুঝিয়ে দিল, এই বিশ্বকাপে ওর ওপরে নজর রাখতেই হবে। আমার তো মনে হয়, এই বিশ্বকাপের সেরা তিন পেসারের মধ্যে এক জন হবে আর্চার।

ইংল্যান্ডের বোলিং নিয়ে আমার প্রশ্ন ছিল। মনে হচ্ছিল, ওদের স্পিন আক্রমণ সে রকম নয়। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই দেখলাম, স্পিনাররা ভালই বল করে গেল। সে ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড বোলিংয়েও কোনও দুর্বলতা চোখে পড়ল না। আর দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পর্কে একটা কথাই বলব। এই দল নিয়ে ডুপ্লেসিদের কিন্তু বেশি দূর যাওয়া কঠিন। ব্যাটিংয়ে গভীরতা বড্ড কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন