ফাইনালে ফ্রান্সের কাঁটা ডিপ ডিফেন্স

ইউরোতে জার্মানি-ইতালির পরেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচ ছিল বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনাল। রাত জেগে ম্যাচটা দেখার পরে তাই জার্মানির জন্য যেমন কষ্ট হচ্ছিল, তেমনই ফ্রান্সের জন্য আনন্দ।

Advertisement

চুনী গোস্বামী

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

ইউরোতে জার্মানি-ইতালির পরেই সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচ ছিল বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনাল।

Advertisement

রাত জেগে ম্যাচটা দেখার পরে তাই জার্মানির জন্য যেমন কষ্ট হচ্ছিল, তেমনই ফ্রান্সের জন্য আনন্দ।

যোগ্য দল হিসেবে ফাইনালে উঠল ফ্রান্স। তাই ওদের কোনও রকম ভাবে ছোট না করেই একটা কথা এখানে যোগ করতে চাই। আমার মতে, ০-২ হারলেও দুর্ভাগ্যের শিকার জার্মানি।

Advertisement

দুর্ভাগ্য। শব্দটাকে হয়তো অনেক ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন অনেকে ভেবে নিতে পারে ফ্রান্স খারাপ খেলেছে, ভাগ্যের জোরে জিতেছে। কিন্তু আমার কথার মানে সেটা নয়। বরং আমি বলতে চাইছি, জোয়াকিম লো-র ভাগ্য খারাপ যে তাকে ভাঙাচোরা দল নিয়ে এ রকম হাইভোল্টেজ সেমিফাইনালে নামতে হল। তিনটে থার্ডে তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ছিল না। ডিফেন্সে হুমেলস, মাঝমাঠে খেদিরা, ফরোয়ার্ডে গোমেজ। তবু জার্মানির থেকে সব সময় একটু বেশি আশা করা যেতেই পারে।

যেমন আমি করেছিলাম। জার্মানি তো আর কোনও দিন ব্যক্তিনির্ভর টিম নয়। রোনাল্ডো, মেসি বা গ্যারেথ বেলের মতো কোনও একজনের ভরসায় হা করে তাকিয়ে বসে থাকে না। আমার কাছে জার্মানি মানে টিমগেম। কিন্তু সেই শক্তিকেও ভেঙে চুরমার করে দিল ফ্রান্স। শুরুর পনেরো-কুড়ি মিনিট বাদ দিলে বাকি সময়ে যেটা অবাক করেছে আমাকে, সেটা হল জার্মানির চরম অপ্রত্যাশিত কাঁপুনি! বিশেষ করে গ্রিজম্যানের পেনাল্টি গোলটার পরে।

একজন কোচের বিচার হয় তার ম্যাচ রিডিং ক্ষমতা দেখে। লো-কে অসম্মান না করেই বলছি, দিদিয়ের দেশঁর নিখুঁত পরিকল্পনার চক্রব্যূহে ধরা পড়ে গেল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মান কোচ। লো-র দলের সব দুর্বল জায়গায় একেবারে ছক কষে আঘাত করেছে দেশঁ। আর সেটা করেছে স্রেফ ‘পজিশনাল প্লে’ দিয়ে। অর্থাৎ জায়গার ফুটবলার জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজের কাজটুকু নিখুঁত করে গেল। জার্মানির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে খেদিরা না থাকায়। লো-র ৪-২-৩-১ ছকে ক্রুজের সঙ্গে ডিফেন্সিভ ব্লকারের ভূমিকায় এত দিন ইউরোয় খেলছিল খেদিরা। কিন্তু এই প্রথম ওই জায়গায় খেলল সোয়াইনস্টাইগারের পাশে ক্যান। নিটফল, বল ডিস্ট্রিবিউশন বন্ধ।

উল্টো দিকে, ফ্রান্সের সাপ্লাই লাইন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল পোগবার পাওয়ার ফুটবলে। যে ভাবে জার্মানদের পা থেকে বল স্ন্যাচ করেছে, বল বাড়িয়েছে পোগবা, তাতে গ্রিজম্যান-পায়েতদের বল সাপ্লাই পেতে কোনও অসুবিধে হয়নি। ডিফেন্সিভ থার্ড আর অ্যাটাকিং থার্ডের মধ্যেও সুন্দর সমন্বয় রাখছে পোগবা। এই পরিশ্রমটা যদি ফাইনালেও করতে পারে, তা হলে জার্মানির মতো পর্তুগালেরও বিপদ দেখতে পাচ্ছি।

আসলে পোগবার দাপটেই ফ্রান্স আরও চাপ বাড়াতে থাকে জার্মান ডিপ ডিফেন্সে। একটা সময় তো বোয়াতেংদের ডিফেন্স ছেড়ে উঠে এসে বল তৈরি করতে হল মুলারদের জন্য। আর মুলার? গোল নষ্টের সেই পুরনো অভ্যেস ছাড়তে পারল কোথায়! এই টুর্নামেন্টে জার্মানির অভিশাপ বোধহয় মুলার। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল শুটিং বুট বাড়িতে ফেলে এসেছে!

লো-র জায়গায় আমি জার্মান কোচ হলে এই ম্যাচে দু’টো বিষয়ের দিকে বাড়তি নজর দিতাম। প্রথমত, পায়েতের সঙ্গে গ্রিজম্যানকেও কড়া ম্যান মার্কিংয়ে রাখতাম। আর দ্বিতীয়— পোগবাকে এতটা খোলা জায়গা দিতাম না অপারেট করতে। ফুটবলার দেশঁর আটানব্বইয়ের ফ্রান্সের সঙ্গে কোচ দেশঁর এই ফ্রান্সের পার্থক্য হল, এরা ব্যক্তিনির্ভর নয়। এদের কোনও অঁরি হয়তো নেই। কিন্তু জিরু-পায়েত-গ্রিজম্যান আছে। এদের জিদান নেই। সিসোকো-পোগবা-মাতুইদি আছে। একজন গ্রেটের কাজ একাধিক ভাল ফুটবলার ভাগ এই ফ্রান্সের শক্তি টিমগেম।

এত সবের পরেও অবশ্য বলব, ফাইনালে ফ্রান্সের দুর্বলতা হতে পারে ডিপ ডিফেন্স। সেমিফাইনালে কসিয়েলনি-সাগনা-উমতিতিকে হয়তো সে ভাবে কড়া পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়নি। কেন না জার্মানিতে এখন মিরোস্লাভ ক্লোজের মতো ফিনিশার নেই, প্রকৃত স্ট্রাইকারও নেই। তাই সামনে যখন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো স্কোরার ঘুরঘুর করবে, তখন কতটা স্বছন্দে ফরাসিরা তাদের গোলপোস্ট রক্ষা করে সেটাই দেখার। ডিপ ডিফেন্সে এভরা নিজের জায়গা ছেড়ে নড়াচড়া করতে পারছে না। আর বাকি তিনের তো চূড়ান্ত পরীক্ষা রবিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন