‘মেয়ে হয়ে আবার গা দেখানো জার্সি পরবে কেন?’

স্বপ্ন ছাড়েননি রামলা আলি। ব্যাগের মধ্যে বক্সিংয়ের সরঞ্জাম আর পোশাক নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। রিংয়ে গিয়ে ট্রেনিং করতেন লুকিয়ে। এমনকি, চ্যাম্পিয়নশিপে নামতেন কাউকে জানতে না দিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:২৪
Share:

প্রেরণা: জীবনসংগ্রামে হাল ছাড়তে শেখেননি রামলা।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়ায় রাস্তায় পড়ে ছিল তাঁর ভাইয়ের মৃতদেহ। নৌকায় চড়ে তাঁদের পরিবার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। মা চাননি তিনি বক্সিং করুন। রক্ষণশীল সমাজ প্রশ্ন তুলেছিল, মেয়ে হয়ে আবার গা দেখানো জার্সি পরবে কেন?

Advertisement

তবু স্বপ্ন ছাড়েননি রামলা আলি। ব্যাগের মধ্যে বক্সিংয়ের সরঞ্জাম আর পোশাক নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। রিংয়ে গিয়ে ট্রেনিং করতেন লুকিয়ে। এমনকি, চ্যাম্পিয়নশিপে নামতেন কাউকে জানতে না দিয়ে। এ ভাবেই জীবনসংগ্রামে হাল না ছেড়ে তিনি হয়েছেন ইংল্যান্ডের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন। যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়াতে কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে বক্সিং দুনিয়ার সেরা তারকা মেয়েদের ‘নতুন আলি’।

এ বার সেই দুঃসাহসিক বক্সারকে দেখা যাবে ভারতে। দিল্লিতে বক্সিংয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আসর বসছে নয়াদিল্লিতে ১৫-২৪ নভেম্বর। ষষ্ঠ খেতাবের লক্ষ্যে নামছেন মেরি কম। কিন্তু ভারতের বক্সিং রানি ছাড়াও সকলের মুখে ঘুরছে একটিই নাম— রামলা আলি। দিল্লি থেকে ফোনে শুক্রবার আনন্দবাজারকে বললেন রামলা, ‘‘আমি খুব উত্তেজিত ভারতে বক্সিং রিংয়ে নামা নিয়ে।’’ জীবনে কখনও হাল না ছাড়া এই মন্ত্র কী করে পেলেন? জিজ্ঞেস করায় অবাক করার মতোই জবাব দিলেন তিনি, ‘‘আমি কিন্তু শুরুতে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগতাম। একেবারেই নিজের উপর আস্থা ছিল না। মনে হত, কিছুই পারব না। হার না মনোভাব বলুন বা বক্সিং রিংয়ে জেতার মানসিকতা— সে সবই পরে গড়ে উঠেছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: হরমনপ্রীতের সেঞ্চুরির ঝড়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয় দিয়ে শুরু ভারতের

সোমালিয়া থেকে তাঁদের পালিয়ে যাওয়াকে বলা হয় ‘দ্য গ্রেট এস্কেপ’। ৯-১০ দিনের সেই ভয়াবহ নৌকো যাত্রার কথা খুব বেশি মনে করতে চান না রামলা। শুধু এটুকু মনে আছে যে, যাত্রাপথে খাদ্যের অভাবে অনেকে মারা গিয়েছিলেন। ‘‘আমার নিজেরও বাঁচার কথা ছিল না। মা ভেবেছিল, আমি মরেই গিয়েছি,’’ বলে ওঠেন রামলা। তাঁর জীবনে সব চেয়ে বড় সহায় হয়ে দেখা দেন স্বামী এবং কোচ রিচার্ড মুর। কে এই রিচার্ড মুর? না, চেলসির প্রাক্তন কোচ ডেভ সেক্সটনের নাতি। খেলাধুলোর পরিবার থেকেই উঠে আসা রিচার্ডকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, রামলাকে বিয়ে করতে হলে কখনও ওকে বক্সিংয়ে নামতে দিতে পারবে না। দিল্লিতে রামলার সঙ্গে এসেছেন রিচার্ডও। সেই কথা মনে করে তিনি বললেন, ‘‘আমি কথা তো দিয়ে দিয়েছিলাম যে, ঠিক আছে, নামতে দেব না। কিন্তু আমি নিজেও জানতাম, সেটা কিছুতেই হবে না। ও ঠিক বক্সিং করবে। আর আমিও করতে দেব।’’

ইংল্যান্ডে থাকায় রিচার্ড ও রামলা নানা খেলার ব্যাপারেই খোঁজ রাখেন। রিচার্ড যেমন বলেই ফেললেন, ‘‘আমার কাছে বিশ্বের খেলাধুলোয় সব চেয়ে আকর্ষক ইভেন্ট আইপিএল। এমন দুর্ধর্ষ প্রতিযোগিতা আমি দেখিনি। ইংল্যান্ডে সব ধরনের খেলা হয়। ফুটবলে ইপিএল রয়েছে। টেনিস রয়েছে। ক্রিকেট রয়েছে। কিন্তু ভারতে আইপিএল নিয়ে যা হয়, সেটা বোধ হয় সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে।’’ আইপিএল নানা নতুন মুখকে তুলে এনে চমক দেখিয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটের কোটপতি লিগেও রামলা আলির মতো রুদ্ধশ্বাস অভিযানের কাহিনি পাওয়া যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন