সর্বসেরা না হলেও বড় টুর্নামেন্ট খেলার মানসিকতা আছে ইতালির

২০১৬ ইউরোয় আপাতত যে ক’টা ম্যাচ হয়েছে, তার মধ্যে একটাই বোধহয় চিত্রনাট্য মেনে চলেনি। সেটা সোমবার রাতের ইতালি বনাম বেলজিয়াম ম্যাচ।

Advertisement

পিটার শিল্টন

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ১০:৫২
Share:

২০১৬ ইউরোয় আপাতত যে ক’টা ম্যাচ হয়েছে, তার মধ্যে একটাই বোধহয় চিত্রনাট্য মেনে চলেনি। সেটা সোমবার রাতের ইতালি বনাম বেলজিয়াম ম্যাচ। ওই ফলাফলটাকে একটা অঘটন বলাই যায়। বেলজিয়াম এখন বিশ্বের দু’নম্বর টিম। ২০১৪-র ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। তার উপর ইউরো জেতার অন্যতম দাবিদার। তবে আমার মাঝে মধ্যেই মনে হয় যে, ক্ষমতার বিচারে ওরা নিজেদের সেরাটা ঠিকঠাক দিতে পারে না।

Advertisement

অন্য দিকে ইতালি যেন সব সময়ই বড় ম্যাচ জেতার রাস্তা খুঁজে বের করে। ওদের টিমে প্রচুর প্রতিভা, তার সঙ্গে জিয়ানলুয়িগি বুফন নামক এক দারুণ, দারুণ গোলকিপার। সোমবার বুফনের বিপক্ষ গোলকিপার, মানে বেলজিয়ামের থিবাউ কুর্তোয়াও বেশ ভাল। কিন্তু দিনের শেষে কে ক’টা গোল খেল, সেটাই আসল। সেখানে বেলজিয়ামের রক্ষণ মোটেও টানা ভাল করতে পারেনি। সহজ গোল গলানোর একটা প্রবণতা আছে ওদের টিমের। ইংল্যান্ডও মাঝে মধ্যে যেটা করে। ফর্মবুকের বিচারে সোমবারের ম্যাচটাকে তাই অঘটনই বলতে হবে। এই ইতালীয় টিম সর্বসেরা হয়তো না, কিন্তু এরা পূর্বসূরিদের একটা জিনিস পেয়েছে— বড় টুর্নামেন্টের মনোভাব।

এটার একটা ভাল উদাহরণ হতে পারে সোমবার ইতালির দ্বিতীয় ওই গোল, যখন বেলজিয়াম ১-১ করার জন্য লড়ছিল। গোলটা যে ভাবে সেট করল, তাতেই বোঝা যায় ইতালির ফুটবল কতটা পরিণত। আন্তোনিও কান্দ্রেভা ঠান্ডা মাথায় নিঃস্বার্থ ভাবে বলটা গ্রাজিয়ানো পেল্লেকে চিপ করল এমন হাইটে, যেখান থেকে ভলিতে গোল আসতই। আর এটা করল এমন পরিস্থিতিতে যেখানে ও নিজেও গোল করতে পারত। বহু বার ফুটবলারদের দেখেছি ভাল সুযোগের অপেক্ষায় বল পায়ে না রেখে আগেভাগেই গোলের শট নিয়ে ফেলতে। কিন্তু কান্দ্রেভার দুর্দান্ত ক্রস দারুণ ফিনিশের সুযোগ তৈরি করে দিল। এটা করতে কিন্তু প্রতিভা লাগে।

Advertisement

ইতালি যেন সব সময়ই বড় ম্যাচ জেতার রাস্তা খুঁজে বের করে।
ওদের টিমে প্রচুর প্রতিভা, তার সঙ্গে জিয়ানলুয়িগি বুফন নামক এক দারুণ, দারুণ গোলকিপার।

অন্য যে ম্যাচে আমার আগ্রহ ছিল সেটা হল আয়ারল্যান্ড বনাম সুইডেন। সত্যি বলছি, ভেবেছিলাম ওই ম্যাচটা আয়ারল্যান্ড জিতবে। ম্যাচে বিনোদন খুব একটা ছিল না, তবে কঠিন ছিল। আয়ারল্যান্ড নিজেদের শক্তি অনুযায়ী খেলছিল, যাতে বিপক্ষের অসুবিধে হয়। ওদের কোচ, নটিংহাম ফরেস্টে আমার প্রাক্তন সতীর্থ মার্টিন ও’নিল এই স্টাইলটাই ওদের মজ্জায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। ওঁর কোচিংয়ে যে সব দল ছিল তারা সবাই জমাট। সবাইকেই হারানো কঠিন। তা সে লেস্টার সিটি হোক বা সেল্টিকস। আর শেষ পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডকে নড়িয়ে দিল জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচের জাদুকরের মতো ওই মুভটা। চোখের নিমেষে জ্লাটান বার লাইনের কাছে চলে এসে আত্মঘাতী গোলটা করতে বাধ্য করল। ইউরোয় বেশি দূর এগোতে গেলে ছন্দে থাকা ইব্রাহিমোভিচকে দরকার সুইডেনের।

ইংল্যান্ড-রাশিয়া ম্যাচ দেখে বেশ হতাশই হলাম। ইংল্যান্ড স্পষ্টত বেশি ভাল খেলছিল, বেশি সুযোগও তৈরি করছিল। রাশিয়া যে একমাত্র সুযোগ পেল, সেটা থেকেই গোল করে দিল। অথচ আমরা যে অত সুযোগ তৈরি করলাম, সেগুলো ফিনিশ করার এক জনকে পেলাম না। ড্যানিয়েল স্টারিজ বা অ্যাডাম লালানা পরপর গোল করার লোক নয়। রুনি অনেকটা নীচে নেমে এসে খেলছিল, যদিও ও দারুণ একটা সুযোগ পেয়েছিল। আমাদের প্রধান ভরসা বলতে হ্যারি কেন আর দেলে আলি। কেন খারাপ খেলেনি, তবে এটা ওর ভাল ম্যাচগুলোর মধ্যে থাকবে না। এই ধরনের পরিস্থিতিতে জেমি ভার্ডির মতো প্রমাণিত গোল স্কোরারকে দলে দেখলে ভাল লাগবে। ও রহিম স্টার্লিংয়ের জায়গায় আসতে পারে। কারণ ভার্ডি ভাল ফিনিশার।

জার্মানি আর স্পেন— দুটো টিমই নড়বড়ে ভাবে ইউরো শুরু করেছে। তবে ওরা এ রকমই করে থাকে, বিশেষ করে জার্মানি। মানসিক শক্তির বিচারে জার্মানির চেয়ে ভাল টিম যে হতে পারে না, তার প্রমাণ ওরা বহু বার দিয়েছে। এক-আধটা ফ্রেন্ডলিতে হারতে পারে, কিন্তু বড় টুর্নামেন্টের জার্মানি একেবারে অন্য টিম। অবশ্যই আমি চাই ইংল্যান্ড ভাল করুক। কিন্তু এ বার ইউরোয় আমার দুই ফেভারিট জার্মানি আর স্পেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন