উৎসবের ইডেনে আজ থেকে কোহালি-পক্ষ

ক্লাবহাউস লোয়ার টিয়ারে দাঁড়ালে ওটা বারবার চোখে পড়ছে। একটা স্ট্যান্ড। তার ঠিক মাঝ বরাবর থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সূর্যের আলোয় বড় সুন্দর লাগে, অদ্ভুত ঝকঝক করে।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১১
Share:

ক্লাবহাউস লোয়ার টিয়ারে দাঁড়ালে ওটা বারবার চোখে পড়ছে। একটা স্ট্যান্ড। তার ঠিক মাঝ বরাবর থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সূর্যের আলোয় বড় সুন্দর লাগে, অদ্ভুত ঝকঝক করে।

Advertisement

ইডেন বেল।

শুক্রবার ক্লাবহাউস লোয়ার টিয়ারের টিকিট যদি আপনার হাতে থাকে, একটু খেয়াল রাখবেন পিছনে। খেলা শুরুর আগে ওখানে দেখতে পাবেন এক দীর্ঘকায় ক্রিকেট-কিংবদন্তিকে। শনিবার থেকে এক এক জন করে মহারথী ইডেন বেল বাজিয়ে মাঠে নামবেন ঠিকই, কিন্তু উদ্বোধনটা ওই কাঁচাপাকা চুল, ছ’ফুট উচ্চতার মহানায়ককে দিয়েই হচ্ছে।

Advertisement

কপিলদেব নিখাঞ্জ!

কানপুরে ভারতের পাঁচশোতম টেস্টের উৎসব উদযাপনে কম কিছু হয়নি। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-সহ বারো প্রাক্তন ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। গ্যালারিতে পাঁচশো কেজি লাড্ডু থেকে পাঁচশো টি শার্ট বিতরণ, পাঁচশো রঙিন বেলুন ওড়ানো— বেশ কিছু জিনিস হয়েছে। প্রেক্ষাপট বিচারে ভারতের পাঁচশোর পাশে দেশের মাঠে আড়াইশোর ঐশ্বর্যের ঝাড়বাতি তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ। কিন্তু দেবীপক্ষের ইডেন টেস্টের আবহ দেখলে সময়-সময় বিভ্রম হবে যে, সত্যি সত্যি আড়াইশোতম-র উৎসব উদযাপন ইডেনে হচ্ছে তো? নাকি পাঁচশো টেস্টের আসল উৎসবটা ইডেনে হচ্ছে?

বৃহস্পতিবারের মেঘলা দুপুরে ইডেন গ্যালারি ধরে কেউ হাঁটলে নিশ্চিত শব্দটা কানে আসত। একটানা, অবিরাম। ঠক-ঠক-ঠক। অবশ্য ইডেন গ্যালারির ‘কে’ আর ‘এল’ ব্লকের পাশ দিয়ে হাঁটলে শুধু শব্দ নয়, প্রচুর ছড়ানো-ছিটোনো জিনিসপত্র পড়ে থাকতে দেখাও যাবে। গেট তৈরি হচ্ছে পরপর, স্টল বসছে একটার পর একটা। জায়গাটার একটা নাম দেওয়া হয়েছে— দ্য কার্নিভাল এরিয়া। শুক্রবার থেকে একটার পর একটা ঘটনা ঘটবে সেখানে।

যেমন, চোখের সামনে আচমকা আবির্ভূত হবে ম্যাজিশিয়ান। টেস্টের মধ্যে মুহূর্তে ‘গিলি গিলি গে’!

যেমন, নবনির্মিত লাউঞ্জে অপেক্ষা করবে প্লে স্টেশনের উত্তেজনা। টেস্ট দেখতে দেখতে একঘেয়ে লাগলে, যেখানে ঢুকে নিজেকে একটু ‘চার্জ’ করে নেওয়া যাবে। মোটর রেস থেকে ফুটবল, যে কোনও কিছুর পৃথিবীতে ঢুকে পড়া যাবে।

যেমন, ঘুরতে-ঘুরতে আবিষ্কার করা যাবে আস্ত একটা মঞ্চ। নিরন্তর গানবাজনার সঙ্গে যেখানে মাঝে-মাঝে উঠে পড়বে ‘ফ্ল্যাশমব’।

পুরোটাই ক্রিকেট-দর্শকের কাছে টেস্ট ক্রিকেটের আকর্ষণ বাড়ানোর প্রচেষ্টা। মোট ষাট লক্ষ খরচ হচ্ছে। অর্ধেক আয়োজক সংস্থা দেবে, অর্ধেক দেবে বোর্ড। কিন্তু সে তো কানপুরও পেয়েছিল। কানপুর তো পারত এমন সৌন্দর্যের মোড়কে টেস্ট ক্রিকেটকে পেশ করতে। মাত্র তিন-চারটে বলা হয়েছে এখনও পর্যন্ত, পড়ে রয়েছে আরও অগুণতি। নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমীকে তা যেমন টানবে, তেমন টানবে সাত বছরের খুদেকেও। শুক্রবার লাঞ্চের সময় কোনও ক্রিকেট-বিশুদ্ধবাদী যদি ‘কে’ ব্লকের দিকে যান, একটা ‘টক শো’ পেয়ে যাবেন। কপিল-কুম্বলে-ভিভিএসকে নিয়ে এক ‘টক শো’। আবার কোনও স্কুলপড়ুয়া ঘুরতে-ঘুরতে ও দিকে চলে গেলে তাকে যে কপিল-কুম্বলেদের ক্রিকেট-চর্চায় ঢুকে পড়তে হবে তার কোনও মানে নেই। ইচ্ছে করলে সে নিজের মুখ রাঙিয়ে নিতে পারবে জাতীয় পতাকার রঙে, পারবে একটা কোহালি-ছাঁট নিতে, পারবে ক্রিকেট-নায়কদের কাটআউটের পাশে দাঁড়িয়ে একটা সেলফি তুলতেও!

এক কথায়, সনাতনী টেস্ট ক্রিকেট আর আধুনিক বিনোদনের মোহিনী মোহনা।

যে মোহনায় ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসকে স্মরণ করাও আছে। ১৯৩২ সাল থেকে ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের যে রাজপথ বিস্তৃত হয়েছে আজ পর্যন্ত, ভারত-নিউজিল্যান্ড টেস্টে তাকেও ধরবে ইডেন। দেখতে পাওয়া যাবে, ১৯৩২ সালের ভারতীয় টিমের প্রত্যেকের কার্টুন। ’৫২-র লিডস টেস্টে ফ্রেডি ট্রুম্যানের দাপটে ভারতের ‘জিরো ফর ফোর’ হয়ে যাওয়ার সেই কুখ্যাত ছবি। কোথাও আবিষ্কার করা যাবে, ’৬৯-৭০ সালের ক্রুদ্ধ ইডেনকে। বিল লরির টিমের বিরুদ্ধে টিকিট-স্বল্পতায় ভোগা ইডেন যে রুদ্রমূর্তি ধরেছিল। পুরোটাই ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস নিয়ে ছবির প্রদর্শনী (বোরিয়া মজুমদার আয়োজিত)।

অতএব? অতএব, এমন একটা টেস্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে ইডেন যা আবহে অন্তত ভারতের পাঁচশোতম টেস্টকে হারিয়ে দেবে। প্রশ্ন শুধু একটা। এত কিছু হচ্ছে যাঁদের কথা ভেবে, আসবেন তো তাঁরা? দেবীপক্ষের লগ্নে তাঁরা আসবেন তো ইডেনের কোহালি-পক্ষ দেখতে? প্রথম দিন শোনা গেল, টিকিট বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার। সিএবি-র কেউ কেউ আশা করছেন, শেষ পর্যন্ত হাজার দশেক দাঁড়াবে।

তেত্রিশ হাজারের গ্রিন পার্ক টেস্টের পাঁচ দিন রোজ হাজার সাত-আট হাজির করে দিত। ইডেনের দর্শকআসন কিন্তু ঠিক তার দ্বিগুণ, প্রায় ছেষট্টি হাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন