একা কুলদীপই সিরিজে তফাত গড়ে দিতে পারেন

তেইশ বছরের ছেলেটির হাত থেকে বেরোনো গুগলিগুলো শেষ পর্যন্ত ভিতরে ঢুকে আসবে, না ডান দিকে, না বাঁ দিকে যাবে, সেটাই কেউ বুঝতে পারছিলেন না।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০৪:১০
Share:

বিধ্বংসী: ২৫ রানে ছয় উইকেট। ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে মাঠ ছাড়ছেন কুলদীপ। পাশে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ছবি: এপি

বৃহস্পতিবার ট্রেন্টব্রিজে প্রথম ওয়ান ডে-তে কুলদীপ যাদবের ছয় উইকেট পাওয়া ও রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি দেখতে দেখতে একটাই কথা মনে হচ্ছিল, ভারতের এই দাপট এক বছর পরে এই ইংল্যান্ডেই বিশ্বকাপে বিরাট কোহালিদের সাফল্যের ইঙ্গিত হয়ে উঠতে পারে। এমন পারফরম্যান্স দেখালে কে আটকাবে ভারতকে?

Advertisement

যে ইংল্যান্ড এই মাঠে শেষ দুই ওয়ান ডে-তে ৪৮১ ও ৪৪৪ রান তুলেছে, সেই ইংল্যান্ড কিনা কুলদীপের বলের দুরন্ত ঘূর্ণিতে বিপর্যস্ত! আর কুলদীপের দেখানো রাস্তায় হেঁটে ভারতকে জয় এনে দিলেন রোহিত শর্মা। সঙ্গে পান অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে (৭৫)। ইংল্যান্ডের দেওয়া ২৬৯ রানের লক্ষ্যে ভারত পৌঁছে যায় ৫৯ বল বাকি থাকতে। দু’উইকেট হারিয়ে।

জস বাটলার ও বেন স্টোকস ছাড়া কেউই কুলদীপের বোলিংয়ে টিকে থাকতে পারেননি এ দিন। তাও এই দুই ব্যাটসম্যান ভারতের চায়নাম্যান বোলারকে কোনও রকমে সামলান। এক বারের জন্যও কেউ বাউন্ডারির বাইরে পাঠাতে পারেননি কুলদীপের বল। অন্যদের কথা তো ছেড়েই দিন। তাঁরা ওঁর বল তো বুঝতেই পারেননি।

Advertisement

আরও পড়ুন: মদ্রিচদের এই অদম্য মনের জোরই ফারাক গড়ে দিয়েছে

তেইশ বছরের ছেলেটির হাত থেকে বেরোনো গুগলিগুলো শেষ পর্যন্ত ভিতরে ঢুকে আসবে, না ডান দিকে, না বাঁ দিকে যাবে, সেটাই কেউ বুঝতে পারছিলেন না। প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচেই বোঝা গেল এই সিরিজে এই একটি ছেলেই দু’দলের মধ্যে তফাত গড়ে দিতে পারেন। আর কিছুটা যুজবেন্দ্র চহালও। ডানহাতি বলে চহালের বল তাও কিছুটা বোঝা যায়। কিন্তু কুলদীপ বাঁহাতি বলে তিনি ক্রমশ কঠিন ও রহস্যময় হয়ে উঠছেন। যা সারা সিরিজে জো রুটদের ভোগাবে বলেই মনে হচ্ছে।'

দুরন্ত: সেঞ্চুরি করে রোহিত শর্মা। বৃহস্পতিবার ট্রেন্টব্রিজে। ছবি: রয়টার্স

দশ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ছ’-ছ’টা উইকেট পান উত্তর প্রদেশের এই বাঁহাতি স্পিনার। ফেরান জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, বেন স্টোকস, জস বাটলার, ও ডেভিড উইলিকে। ওয়ান ডে-র ইতিহাসে কোনও বাঁহাতি স্পিনারের এটাই সেরা পারফরম্যান্স। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ভারতীয়দের অন্যতম সেরা বোলিংও। স্টুয়ার্ট বিনি (৬-৪), অনিল কুম্বলে (৬-১২) ও আশিস নেহরার (৬-২৩) পরে কুলদীপ।

ওঁর বোলিংয়ে অযথা ঝুঁকি নিতে গেলেই যে বিপদ, তা জানতেন বাটলার, স্টোকসরা। ওঁদের অতি সচেতন ব্যাটিং দেখেই তা বোঝা যায়। বাকি ৪০ ওভারে বড় রান ঠিক তুলে দেবেন বলে বোধহয় ভেবেছিলেন ওঁরা। কারণ, ট্রেন্টব্রিজের উইকেটটা ব্যাটিংয়ের পক্ষে ভালই। রোহিত ও বিরাটের আত্মবিশ্বাসী ও মসৃণ ইনিংস দেখেই তা বোঝা যায়।

এমনিতেই রোহিত জাত ব্যাটসম্যান। প্রথম দশ ওভারে ক্রিজে টিকে গেলে ওকে আর কেউ আটকাতে পারে না। ১৫টি চার ও চারটি ছয় মেরে দর্শনীয় সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থেকে যান। এটা তাঁর ১৮ নম্বর ওয়ান ডে সেঞ্চুরি। এই ব্যাটিং স্বর্গেও কুলদীপের বোলিংয়ের কোনও সদুত্তর ছিল না রয়, রুট, বেয়ারস্টোদের কাছে!

আধুনিক প্রযুক্তির ভিডিয়ো বিশ্লেষণ কুলদীপের এই রহস্য হয়তো উন্মোচন করবে। কিন্তু ওঁর হাত ও হাওয়ায় বলের গতিবিধি দেখে ব্যাটসম্যানকেই বুঝতে হবে কুলদীপের বল। সেখানে প্রযুক্তির কোনও হাত নেই। সব শেষে বলি, বিদেশে আর অশ্বিনের রেকর্ড যখন এমন কিছু ভাল না, তখন টেস্টেও কুলদীপকে এক বার সুযোগ দিয়ে দেখা যেতেই পারে। বিরাট তো তরুণদেরই তুলে আনতে চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন