দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজটা ভারত জিতে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেল। ঋদ্ধিমান সাহা নিয়ে আমরা এত দিন বলতাম। বলতাম যে, এই মুহূর্তে দেশের শ্রেষ্ঠ উইকেটকিপার ও। এ বার গোটা ক্রিকেটবিশ্ব দেখল ভারতের এক নম্বর উইকেটকিপার কে?
চলতি সিরিজে একটা নয়, ঋদ্ধির বেশ কয়েকটা ক্যাচ নিয়ে হইচই হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে এবি ডে’ভিলিয়ার্সের ক্যাচ। কোটলায় পিয়েডের ক্যাচ। ঋদ্ধির রিফ্লেক্স কোন পর্যায়ে গিয়েছে, ওই সব ক্যাচ তার এক একটা প্রমাণ। আমার কাছে অবশ্য নাগপুরে ডেন ভিলাসের ক্যাচটা বেঙ্গালুরু-কোটলার আগে থাকবে। যে ভাবে লেগ সাইডে ভিলাসের ক্যাচটা ঋদ্ধি নিয়েছিল, সেটা টেকনিক্যাল দিক থেকে সিরিজ সেরা। কিন্তু ঘটনা হল, একজন উইকেটকিপারের কাছে ক্যাচটাই সব নয়। ক্যাচগুলো হচ্ছে ঋদ্ধির কিপিংয়ের একটা অংশ যা দর্শকরা দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু যেটা দেখতে পাচ্ছে না তা হল ক্যাচ ধরা বাদে ওর বাকি এফর্ট। যা কোহলির টিমের যে কোনও বোলার বলে দেবে। বলতে চাইছি, অন্য সময়টা যখন ও নিছকই বল ধরছে। উমেশ যাদব বা অশ্বিনরা কিন্তু এখন জানে যে, বোলিং নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করলে কোনও অসুবিধে নেই। ভুল লাইনে পড়লেও বাই খাওয়ার ভয় নেই। ঋদ্ধি ঠিক ধরে নেবে!
আসলে গত তিন-চার বছর ধরে ঋদ্ধিমান যে কিপিংটা করছে, তুলনাহীন। কেউ কেউ বলবেন, এমএস ধোনির চেয়ে ভাল কিপার হিসেবে নিজেকে ইতিমধ্যে প্রমাণ করে ফেলেছে কি না ঋদ্ধি। আমি তুলনায় যাব না। কারণ দু’জনে কোনও তুলনা হয় না। ধোনি এক রকম। ঋদ্ধি আর এক রকম। কিন্তু এটা অবশ্যই বলব যে, টেস্ট ক্রিকেটে কিপার ধোনিকে আমি অন্তত মিস করছি না। কারণ, ঋদ্ধি আগে অসাধারণ কিপার ছিল। এখন তার চেয়েও কয়েক পা এগিয়ে গিয়েছে!
টেকনিক্যালি কয়েকটা বদলও এনেছে ঋদ্ধি। নিজে কিপার ছিলাম বলেই যেগুলো ধরতে পারছি। যেমন, আগে কিপ করার সময় ওর হাঁটু কিছুটা সোজা থাকত। এখন হাঁটু ভাঁজ করে কিপ করছে। এতে বেশিক্ষণ নীচে থাকতে পারছে। বলের সঙ্গে সঙ্গে মুভ করছে। হাঁটু কিছুটা সোজা থাকলে যেগুলো সম্ভব হত না। তখন আগে দাঁড়িয়ে পড়ার একটা প্রবণতা চলে আসত। আমার তো মনে হয় না যে, কিপিং নিয়ে আর কোনও উন্নতির জায়গা ওর আছে বলে।
শুধু একটা ব্যাপার। কিছুটা ক্লিশে হয়ে গিয়েছে, তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি। ঋদ্ধিকে একটা বড় রান এ বার করতে হবে। ও যে পারছে না তা নয়। ও ভাল শুরু করছে। কিন্তু পঁচিশ তিরিশে আটকে যাচ্ছে। এই সিরিজে শুধু রাহানে আর শেষ টেস্টে কোহলি ছাড়া কেউ তেমন রান পায়নি। সেখানে একটা পঞ্চাশ যদি ও করে রাখত, ইমপ্যাক্টটা একশোর মতো হত। সবচেয়ে বড় কথা হল, টেস্টে কোহলি পাঁচ বোলারে খেলতে পছন্দ করে। কোটলায় চার বোলারে খেলেছে ঠিকই, কিন্তু নিয়মিত সেই ফর্ম্যাটে ও চলবে বলে মনে হয় না। ঋদ্ধিকে কিন্তু তখন ছ’নম্বরে ভরসা দিতে হবে ক্যাপ্টেনকে। আমি ওকে ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখেছি বলে জানি যে, ও ব্যাটিংয়েও পারবে। কিন্তু আমি জানলে তো হবে না। গোটা দেশের ভরসা পেতে হলে ওকে একটা বড় রান করতে হবে।
আর করলে এখনও ছুটকো-ছাটকা যে কথাগুলো ঋদ্ধিমান সাহাকে নিয়ে ওঠে, ওগুলো বলার সাহস আর কেউ পাবে না।