নায়ক: সবুজ-মেরুন শিবিরকে জয়ে ফেরালেন হেনরি। ফাইল চিত্র
মিনার্ভা এফসি ০ • মোহনবাগান ১
ডার্বি হারের সত্তর ঘণ্টার মধ্যে প্রবলভাবে ঘুরে দাঁড়াল মোহনবাগান। গতবারের চ্যাম্পিয়নকে শুধু হারানোই নয়, পঞ্চকুলায় আই লিগের সেরা ম্যাচ খেললেন সম্ভবত হেনরি কিসেক্কারা।
গোলের জন্য আশি মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলেও, এই ম্যাচে অন্তত পাঁচ গোলে জিততে পারতেন পালতোলা নৌকার সওয়ারিরা। তিন তিনটি বল পোস্টে লেগে ফেরা ছাড়াও মোহনবাগানের একটি ন্যায্য গোল দেননি রেফারি। দেওয়া হয়নি একটি নিশ্চিত পেনাল্টিও। ফলে তিন ম্যাচ পর জয়ে ফিরেও ক্ষোভে ফুটছেন দিপান্দা ডিকারা। রেফারির বিরুদ্ধে। শাস্তির ভয়ে কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী ম্যাচের পর রেফারিং নিয়ে তোপ না দাগলেও, ডার্বির মতোই খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মণিপুরের রেফারি রবিচন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে ফেডারেশনে অভিযোগের চিঠি জমা দিয়েছে মোহনবাগান। তাতে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘‘একটি গোল ও একটি পেনাল্টি থেকে মোহনবাগানকে বঞ্চিত করেছেন রেফারি।’’
সনি নর্দে নেই। কিংসলে ওবুমনেমে লাল কার্ড দেখে বাইরে। ফলে বিদেশি স্টপার ছাড়াই ভাঙাচোরা রক্ষণ নিয়ে নেমেছিল মোহনবাগান। মনে করা হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে যুবভারতীতে হারিয়ে যাওয়া উইলিয়াম ওপোকুরা নিজেদের মাঠে মোহনবাগানকেও বিপদে ফেলবে। হল ঠিক উল্টোটা। হেনরি কিসেক্কাকে একটু বাঁ দিকে পাঠিয়ে এবং কার্যত পাঁচ জনকে মাঝমাঠে নামিয়ে পল মুনস্টেরারের দলকে কোণঠাসা করে দিলেন মোহনবাগান কোচ। এবং সেটা এতটা কার্যকর হল যে, বিরতির আগে প্রায় বলই ধরতে হয়নি সবুজ মেরুন গোলকিপার শঙ্কর রায়কে। উল্টে আক্রমণের ঢেউ তুলে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করে দেন ওমর এলহুসেইনিরা। দিপান্দা ডিকার দু’টি শট পোস্টে লেগে ফেরে। ম্যাচের সেরা হেনরিও নষ্ট করেন কয়েকটি সুযোগ। তবে সব চেয়ে বিতর্কিত ঘটনাটি ঘটে বিরতির পাঁচ মিনিট আগে। মিনার্ভা বক্সের বাইরে থেকে করা মোহনবাগান মিডিও ওমরের ফ্রি কিক গোললাইন থেকে ফেরান কেসেইডো রদরিগেজ। কলম্বিয়ান স্টপার যখন বল ফেরান, তখন টিভিতে পরিষ্কার দেখা গিয়েছে বলটির বেশির ভাগ অংশই গোল লাইন পেরিয়ে গিয়েছিল। দেশের অন্যতম নামী ফুটবলার রেনেডি সিংহ ছিলেন টিভির এ দিনের ভাষ্যকার। তিনিও রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মোহনবাগান ফুটবলাররা একযোগে গোলের দাবি করেন রেফারির কাছে। কিন্তু রবিচন্দ্র তাতে কান দেননি। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর মিনিট চারেক পর ফের হেনরির শট নিজেদের বক্সে হাত দিয়ে থামান মিনার্ভার আকাশদীপ সিংহ। রেফারি খেলা চালিয়ে যান। পেনাল্টির দাবিতে সরব হন ইউতা কিনোয়াকিরা। একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট হওয়ার পর যখন ডিকা-হেনরিরা দিশাহারা, খেলা গড়াচ্ছে শেষের দিকে, তখনই গোল পায় মোহনবাগান। মিনার্ভার তিন ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে ডিফেন্স চেরা পাস বাড়ান ওমর। বল পাওয়ার পর হেনরি তা নিয়ে সোজা দৌড়ে চলে যান দুরূহ কোণে। সেখান থেকেই অসাধারণ প্লেসিং শটে গোল করেন উগান্ডার স্ট্রাইকার।
আরও পড়ুন: দুই প্রধানকে এ বার আইএসএলে দেখছে ফুটবল ফেডারেশন
ম্যাচের শেষ দিকে ওপোকুর একটা সুযোগ ছাড়া মিনার্ভা কার্যত প্রতিপক্ষের গোলের সামনে তেমন চাপই বাড়াতে পারেনি।। সারাক্ষণ তারা মোহনবাগানকে স্রেফ রুখে গিয়েছে। মাঝমাঠ দখলে নিয়ে নেওয়ায় জন্য ওমরকে এগিয়ে দিয়েছিলেন সবুজ মেরুন কোচ। মিনার্ভা ফুটবলাররা বল পেলেই তা কাড়ার দায়িত্বে ছিলেন মিশরের ফুটবলারটি। সেকেন্ড বল ধরছিলেন ইউতা। ফলে মোহনবাগান রক্ষণের উপর চাপ পড়ছিলই না। ম্যাচের শেষে শঙ্করলাল বলেন, ‘‘হেনরিকে বাঁ দিকে খেলানোটা আমার সিদ্ধান্ত। আরও আগে গোল পাওয়া উচিত ছিল।’’
আরও পড়ুন: সেরা হয়ে সতীর্থদের প্রশংসা মেসির মুখে
এ দিনের ম্যাচে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন হেনরি। গোল পাচ্ছেন না বলে তিনি প্রচণ্ড চাপেও ছিলেন। গোল পেয়ে প্রচন্ড উচ্ছ্বসিত দেখাল তাঁকে। বলেও দিলেন, ‘‘গোল করতে পেরে ভাল লাগছে। আরও গোল করতে হবে।’’ হেনরি ম্যাচের সেরা না হলে হতে পারতেন ওমরও। মিনার্ভাকে হারিয়ে দেওয়ায় ছয় নম্বরে উঠে এল শঙ্করলালের দল।
মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, অরিজিৎ বাগুই (অমে রানাডে), কিম কিমা, গুরজিন্দর কুমার, অভিষেক আম্বেকর, আজহারউদ্দিন মল্লিক (শেখ ফৈয়াজ), ইউতা কিনোয়াকি, সৌরভ দাশ, ওমর এলহুসেইনি, হেনর কিসেক্কা, দিপান্দা ডিকা।