সাংবাদিক বৈঠকে মোহনবাগান কর্তারা। —নিজস্ব চিত্র।
শেষ পর্যন্ত ডার্বি হচ্ছে না। মরসুমের প্রথম বড় ম্যাচ থেকে বঞ্চিত হতে হল ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের সমর্থকদের। ম্যাচ যুবভারতী থেকে সরে যাওয়ায় সমস্যায় এমনিতেই পড়তে হত সমর্থকদের কিন্তু তাও তো হত। কিন্তু এ বার সেটাও হচ্ছে না। মোহনবাগান, আইএফএ-র চিঠির লড়াই শেষে বাগান কর্তারা জানিয়ে দিলেন ম্যাচ একদিন পিছিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর না করলে খেলা সম্ভব নয়। আইএফএ নিজের সিদ্ধান্তেই থেকে গেল। যার ফল ওয়াক ওভার পেয়ে যাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ম্যাচ বুধবারই হচ্ছে। দিন বদল সম্ভব হচ্ছে না।’’ প্রশ্ন ওঠে আইএফএ সচিব, মোহনবাগান সভাপতির গোপন বৈঠক নিয়েও। যার পর উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়কে বিশ্বাসঘাতক আখ্যা দিয়েছিলেন মোহনবাগান ক্লাবকর্তারা। তার পাল্টা দিয়ে উৎপলবাবু বলেন, ‘‘তা হলে তো এটা আরও বড় বিশ্বাসঘাতকতা যে গোপন মিটিংয়ের কথা বাইরে বলে দেওয়া হল।’’
মঙ্গলবার নিয়ম মেনেই বিকেলে অনুশীলন করিয়েছিলেন কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হল না। ডার্বি না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল মোহনবাগান। যদিও ইতিমধ্যেই ডার্বি খেলতে কল্যাণীতে পৌঁছে গিয়েছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। অনুশীলনও করেছে। আজ ওখানে থেকে, বুধবার ম্যাচ খেলেই ফেরার কথা। কিন্তু, মোহনবাগানের না খেলার সিদ্ধান্তে সব পরিকল্পনাই ভেস্তে গেল। যদিও এমন কিছু হবে তা জানাই ছিল।
সাংবাদিক সম্মেলন এসেছিলেন মোহনবাগান সভাপতি টুটু বসু, সচিব অঞ্জন মিত্র, সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু অর্থ-সচিব দেবাশিস দত্ত ও ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বার বার ইস্টবেঙ্গলের দিকেই ঘুরিয়ে আঙুল তুললেন তাঁরা। নাম না করে বলে দিলেন, ইস্টবেঙ্গলের শক্তির সামনেই মাথা নোয়ালো আইএফএ। মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র জানিয়ে দিলেন, “আমরা মনে প্রাণে চেষ্টা করেছিলাম খেলতে। এখনও চাই। সে কারণে আইএফএ-র কাছে এক দিন সময় চেয়েছিলাম। কারণ আমাদের প্লেয়াররা ওই মাঠের সঙ্গে পরিচিত নয়। আইএফএ সচিব কোনও অজ্ঞাত কারণে জোড় করে এই ম্যাচটি করাতে চাইছেন ওই দিনে।”
পাশাপাশি টিকিট নিয়েও আবার প্রশ্ন তুলল মোহনবাগান ক্লাব। সন্ধ্যে ছ’টায় মোহনবাগানের তরফে দাবি করা হল এখনও পর্যন্ত পুলিশ অনুমতি দেয়নি ম্যাচ করার। তার আগে কী করে টিকিট বিক্রি সম্ভব হল। মোহনবাগানের সাংবাদিক সম্মেলন চলার মধ্যেই খবর এল পুলিশের অনুমতি পেয়ে গিয়েছে কল্যাণী স্টেডিয়াম। যদিও আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিরাপত্তা বিষয়ে অস্থায়ী গ্যালারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যে কারণে সেই গ্যালারির পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। মাঠ নিয়ে পুলিশেনর অনুমতি আগেই পাওয়া হয়ে গিয়েছিল। তাই নতুন করে পাওয়ার কিছু ছিল না।’’
মোহনবাগানের তরফে দেবাশিস দত্তর প্রশ্ন, “এটা কি খেপ খেলা হচ্ছে? যদি কোনও ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করে দেওয়ার পরিকল্পনা থাকে তা হলে কিছু বলার নেই।” মোহনবাগানের দাবি, এখনও পুলিশের অনুমতি পায়নি কল্যাণী স্টেডিয়াম। যদিও সেটা সঠিক ছিল না। ‘অশুভ আঁতাত’, ‘ময়দানি শক্তির হাতের পুতুল’ বলে উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুললেন ক্লাব কর্তারা। মোহনবাগানের অভিযোগ, কেন টালিগঞ্জ ম্যাচ ১৪র পর দেওয়া হবে? কারণ তার মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের সব ম্যাচ শেষ হয়ে যাবে। সব প্লেয়ার আইএসএল খেলতে চলে যাবে। মোহনবাগান সচিব বলেন, “মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ কোনও সাধারণ খেলা নয়। এটা আবেগ। এটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যায় না।’’
মোহনবাগানের কাল না খেলার চিঠি আইএফএ-তে যেতেই আইএফএ থেকেও দিন বদল সম্ভব নয় জানিয়ে দেওয়া হল। এই বার্তা মোহনবাগানের কাছে পৌঁছতেই বুধবার বিকেলে নিজেদের মাঠে অনুশীলন ডাকল মোহনবাগান। তার মানে ওয়াক ওভার দিচ্ছে মোহনবাগান। কাল মাঠে নামবে ইস্টবেঙ্গল। নিয়ম মেনে পয়েন্ট পেয়ে যাবেন মেহতাবরা। কাল তিন পয়েন্ট পেয়ে গেলে কলকাতা আবারও নিশ্চিত করে ফেলবে দল। এই নিয়ে পর পর সাতবার।
যা খবর শেষ বেলায় সরাসরি কল্যাণীতে পৌঁছে যেতে পারে মোহনবাগান। নেমে পড়তে পারে মাঠে। কাল অনুশীলন হবে বলে বাতিল করার সিদ্ধান্তেই নতুন করে জল ঘোলা হতে শুরু করেছে। কর্তারা কী ভাবছেন সেটা এখনও পরিষ্কার নয় প্লেয়ারদের কাছেই।
আরও খবর
আবারও অনিশ্চিত ডার্বি, ৪৮ ঘণ্টা সময় চায় মোহনবাগান