উৎসব: লাল-হলুদ জার্সিতে অভিষেক ম্যাচেই গোল। উচ্ছ্বসিত ইস্টবেঙ্গলের নতুন তারা জোবি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
তাঁর বাড়ি যেখানে সেই তিরুঅনন্তপুরমের সমুদ্রতীরে জেলেরা জাল শুকোতে দেয়। সেখানেই ছোটবেলায় বল নিয়ে দৌড়োদৌড়ির শুরু।
সেই জাল দেখার পরপর মাঠের জাল চেনা। মৎসজীবী বাবার সঙ্গে কোনওদিন সমুদ্রে যাননি মাছ ধরতে। কিন্তু জালটা চিনেছেন ভাল। কোথা থেকে বল জালে জড়াতে হয়, চেনা হয়ে গিয়েছে কেরলের হয়ে সন্তোষ ট্রফি বা জাতীয় গেমসে খেলার সময়। হ্যাটট্রিক দুটো। তাঁর একটি কলেজে থাকার সময়। তিনি— জোবি জাস্টিন লাল-হলুদ সমর্থকদের সমুদ্রগর্জনে প্রথম নেমেই জাল চিনে ফেললেন।
কলকাতায় আসার আগে আই এম বিজয়নের আশীর্বাদ নিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের নতুন প্রতিশ্রুতিমান তারকা জোবি। ফোন করেছিলেন কালো হরিণকে। সোমবার লাল-হলুদ জার্সিতে প্রথম গোলের পর মিডিয়া সেন্টারে বসে বলছিলেন, ‘‘বিজয়ন আমার আইডল। আসার আগে ওঁকে ফোন করেছিলাম। বলেছিলেন, ‘ভাল একটা মঞ্চ পেয়েছ। সফল হওয়ার চেষ্টা করো।’’ এ দিন রাতেই বাড়ি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘ওঁকে ফোন করেছিলাম। আশীর্বাদ করলেন। বললেন আরও ভাল খেলতে হবে।’’
মাথায় চুল সামলাতে হেয়ার ব্যান্ড বাঁধেন। দাঁতের আকৃতি ঠিক রাখতে ক্লিপ লাগিয়েছেন। হাসলে সেই ক্লিপ থেকে আলো ঠিকরে বোরোয়। গোলের পর সেলিব্রেশনটাও বেশ অভিনব। দু’হাতের আঙুল দু’দিকে ছড়িয়ে। জিভ বের করে। কাউকে কি নকল করলেন গোলের পর? জোবি হেসে বললেন, ‘‘না, না। সে রকম কিছু নয়। কোথায় যেন কাকে করতে দেখেছিলাম ম্যাচের পরে। সেটাই করলাম।’’তিরুঅনন্তপুরমের ভিট্টুকাড গ্রামে বেড়ে ওঠা জোবির। কেরলের নামী ফুটবলার বিনু জোসের মতো বহু ফুটবলার উঠে এসেছেন ওই গ্রাম থেকে। সেখানে খেলতে খেলতেই বাণিজ্যে স্নাতক। জীবনের প্রথম হ্যাটট্রিক অবশ্য সর্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় টুনার্মেন্টে খেলতে গিয়ে। পরে সন্তোষ ট্রফিতেও গোল করেন। বলছিলেন, ‘‘টাইটেনিয়ামে প্রথম খেলি। তারপর চাকরি পেয়ে যাই কেরল ইলেকট্রিক সিটি টিমে। খেলোয়াড় কোটায়।’’ সেই চাকরি বাজি রেখেই স্টাইলিশ জোবির ফুটবলের মক্কায় আসা। জানেন না চাকরিটা আর আছে কি না।
আরও পড়ুন: লাল-হলুদ ঝড়ে বেলাইন রেল
মাঠ জুড়ে খেলেন। রোমিং স্ট্রাইকার। হঠাৎ নেমে আসেন নীচে। আবার সমান গতিতে পৌঁছে যান বিপক্ষ গোলের সামনে। এ দিন বারাসতে ‘এ’ লাইসেন্স পরীক্ষা শেষে ইস্টবেঙ্গল মাঠে এসেছিলেন রেনেডি সিংহ। জোবি জাস্টিনকে দেখে বলছিলেন, ‘‘ছেলেটার (জোবি) গতি আছে। গোলের সামনে পৌঁছে যায়। চেহারাটা ভাল। তারকা হয়ে যাবে।’’ নেমেই গোল। সামনে ডার্বি জানেন? ‘‘ওটা খেলার জন্যই তো তৈরি হচ্ছি। ওই ম্যাচটায় গোল করতে হবে,’’ বলার সময় গলায় অদ্ভুত প্রত্যাশা জোবির। জোড়া গোলদাতা সুহেইরকে নিয়ে এসে বসেছিলেন মিডিয়ার সামনে। বলছিলেন, ‘‘কলকাতায় প্রথম গোলটা পরিবারকে উৎসর্গ করছি। গোল করার পরে বাবা-মার কথা মনে হচ্ছিল খুব।’’ পরিবার নিয়ে আবেগ বেরিয়ে পড়ে মুহূর্তে।
প্লাজা চলে এলে তাঁর জায়গা আর সুরক্ষিত নয়। ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিলের মনোভাবে স্পষ্ট যতই খারাপ খেলুন, প্লাজাকে বসাবেন না তিনি। তখন প্লাজার সঙ্গী হতে সারাদিন একসঙ্গে থাকা বন্ধু সুহেইরের সঙ্গেই লড়তে হবে তাঁকে। বলছিলেন, ‘‘কলকাতায় এসেছি প্রতিষ্ঠা পেতে। লড়াইটা সুহেইরের সঙ্গে নয়, নিজের সঙ্গে। আরও গোল করতে হবে। আজ অনেক গোল মিস করেছি।’’