আইসিসি বনাম ভারতীয় বোর্ডের যুদ্ধে নয়া মোড়

আইসিসি বনাম ভারতীয় বোর্ডের যুদ্ধ আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে আগামী কয়েক দিনে। ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে যে, বর্তমানে আইসিসি-র সঙ্গে আট বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ সম্প্রচারকারী চ্যানেল এ বার আসরে নেমে পড়তে পারে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪৪
Share:

আকর্ষণ: ক্রিকেট বাজারে তুঙ্গে কোহালিদের চাহিদা। —ফাইল চিত্র।

আইসিসি বনাম ভারতীয় বোর্ডের যুদ্ধ আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে আগামী কয়েক দিনে। ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে যে, বর্তমানে আইসিসি-র সঙ্গে আট বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ সম্প্রচারকারী চ্যানেল এ বার আসরে নেমে পড়তে পারে।

Advertisement

ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থায় বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী আয় করে ভারতের বাজার থেকে। ভারতীয় জনতা এখন সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে। দু’বছর আগে ধোনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী খেলোয়াড়দের তালিকায় মারিয়া শারাপোভাদের সঙ্গে প্রথম কুড়ির মধ্যে ছিলেন। এখন কোহালিও সে দিকে এগোচ্ছেন। এর থেকেই বোঝা যায়, ভারতীয় তারকাদের আবেদনই সবচেয়ে বেশি।

অথচ, জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় দলের অংশগ্রহণ নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হবে ইংল্যান্ডে। সেখানেও প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় দর্শক। তার উপর ভারতের বিপুল টিভি বাজার। আইপিএল থেকে শুরু করে যে কোনও বড় টুর্নামেন্টেই এ দেশে দারুণ টিআরপি। কোহালিদের নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় তাই ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন।

Advertisement

বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ভারতকে নিয়ে চলতে থাকা টালবাহানার ব্যাপারে জানতে চেয়ে আইসিসি-কে চিঠি পাঠাচ্ছে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সম্প্রচারকারী চ্যানেল। এই অভাবনীয় পত্রাঘাতে পাল্টা চাপে পড়ে যেতে পারে আইসিসি। কারণ টিভি স্বত্ব বিক্রি করেই সবচেয়ে বেশি মুনাফা ঢোকে নিয়ামক সংস্থার কোষাগারে।

আরও পড়ুন:পঞ্জাবকে ২৬ রানে হারিয়ে দিল হায়দরাবাদ

আট বছরের জন্য আইসিসি-র অডিও-ভিস্যুয়াল স্বত্ব কিনেছে স্টার ইন্ডিয়া ও স্টার মিডল-ইস্ট। তাদের চুক্তি ২০২৩ পর্যন্ত। এখনই সম্প্রচারকারী চ্যানেলের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, আইসিসি-র কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা লিখবেন যে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু হতে আর এক মাস মতো বাকি রয়েছে। অথচ, ভারত এখনও তাদের দল ঘোষণা করেনি। ভারত খেলবে কি খেলবে না, পরিষ্কার করে জানাও।

এন শ্রীনিবাসন আইসিসি চেয়ারম্যান থাকাকালীন ভারতীয় বোর্ডের জন্য সর্বোচ্চ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। সেটা সম্ভব হয়েছিল এই ঐতিহাসিক টিভি চুক্তির জন্যই। শশাঙ্ক মনোহরের নেতৃত্বাধীন আইসিসি এখনও ভারতকে বেশি অর্থ দিতে রাজি আছে। যেমন লা লিগায় অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশি টাকা পায় বার্সেলোনা বা রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু আইসিসি বলেছে, ভারতের দাবি মতো ৫৭ কোটি মার্কিন ডলার (৩৬৬২ কোটি টাকা) দেবে না, ৪০ কোটি মার্কিন ডলার (২৫৭০ কোটি টাকা) পর্যন্ত দিতে রাজি। ভারত দুবাইয়ের সভায় এই রফায় রাজি হয়নি। তার পরেই ভোটাভুটিতে ১-৯ হেরে ফেরেন ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধিরা।

প্রশ্ন উঠেছে এ বার কী হবে? আগামী জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কি কোহালিরা নামবেন? এখনও পর্যন্ত ভারত তাদের দল ঘোষণা না করায় বিভ্রান্তি বেড়েছে। ঘটনা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়, লোঢা সুপারিশ মিলিয়ে ভারতীয় বোর্ড এখন নেতৃত্বহীন। বিভক্ত ভারতীয় বোর্ডে আইসিসি-র থাপ্পর নিয়ে দু’টি মত। কট্টরপন্থীরা বলছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কট করো। এই অংশের নেতৃত্বে শ্রীনিবাসন। তাঁর বিরোধী অর্থাৎ পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের কর্তারা মনে করছেন, অতটা কড়া প্রতিক্রিয়া এখন না দেখানোই ভাল। বোর্ডের প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের সুরও নরমপন্থার। সামনের সপ্তাহের শুরুর দিকেই বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভা হতে পারে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

এর মধ্যেই শ্রীনিবাসন বোর্ড সদস্যদের বোঝাচ্ছেন যে, ভারতের টাকা কমিয়ে দেওয়াটা আইসিসি-র দিকে থেকে চুক্তি লঙ্ঘণ। দরকারে আইনি পদক্ষেপ করা যেতে পারে। এক বোর্ড সদস্য বলছিলেন, ‘‘চুক্তিতে লেখা ছিল আমরা ৫৭০ মিলিয়ন ডলার পাব। সেটা দেখিয়ে বিনিয়োগকারীদের আনা হল। এখন ভারতের টাকাটাই কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা তো ভয়ঙ্কর কথার খেলাপ। চুক্তি ভঙ্গ করা হচ্ছে।’’ কেউ কেউ দাবি তুলেছেন, আইসিসি-কে এই মর্মে চিঠি লিখুক ভারতীয় বোর্ড। যদি তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হয়, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু বিভক্ত মিলিয়ন ডলার ক্রিকেট বোর্ডে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? সেটাই যে মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন