নোভাক জোকোভিচ। ছবি: এক্স (টুইটার)।
ফরাসি ওপেনের পর উইম্বলডন। আরও একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম। আরও একটা শততম জয়। ৩৮ বছর বয়সেও পেশাদার টেনিসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মাইলফলক স্পর্শ করছেন নোভাক জোকোভিচ। গড়ছেন নতুন নতুন কীর্তি।
স্বদেশীয় মিয়োমির কেমানোভিচকে সরাসরি সেটে হারিয়ে উইম্বলডনের চতুর্থ রাউন্ডে উঠেছেন জোকার। ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিকের পক্ষে ম্যাচের ফল ৬-৩, ৬-০, ৬-৪। সময় নিয়েছেন ১ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট। বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড়ের কাছে এই ফল সাধারণ। নেহাতই সাধারণ। টেনিস বিশ্বেরও নতুন করে আলোড়িত হওয়ার মতো কিছু নেই এমন জয়ে। তবু এই জয় জোকারের কাছে তৃপ্তির। টেনিসপ্রেমীদের চর্চার বিষয়। টেনিসের ইতিহাসে জায়গা পাওয়ার স্বাভাবিক দাবিদার।
গত মাসেই ফরাসি ওপেনে ১০০টি ম্যাচ জেতার নজির গড়েছিলেন জোকোভিচ। তার আগে শততম খেতাব জয়েরও নজির গড়েছিলেন। শনিবার উইম্বলডনেও ১০০তম ম্যাচ জিতলেন জোকোভিচ।। আগামী অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম রাউন্ডে জিতলে, বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামেও একই কীর্তি গড়বেন। এমন কৃতিত্ব রজার ফেডেরারের নেই। রাফায়েল নাদালের নেই। অ্যান্ডি মারের তো নেই-ই। টেনিসের ইতিহাসেই কারও নেই।
যে কীর্তি ওয়েটিং লিস্টে রয়েছে, তা বাদ রেখেও বলা যায় জোকারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম অভিযান এক বিরল মুহূর্তের অপেক্ষায়। চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামেই ১০০টি করে ম্যাচ জিতে ফেললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ ইউএস ওপেনেও তাঁর জয়ের সংখ্যা ৯০। সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ। বাকি শুধু বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার।
শনিবার জয়ের পর উচ্ছ্বাসে মেতেছেন জোকোভিচ। সেই উচ্ছ্বাসে তাঁর সঙ্গী ছিল মেয়ে তারা। বাবার মাইলফলক ছোঁয়া জয়ের পর সেন্টার কোর্টের গ্যালারিতে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে সাত বছরের তারা। বাবার জয়ের আনন্দে নাচছিল সে। তা দেখে ভাষণ থামিয়ে জোকোভিচও সঙ্গ দিলেন মেয়েকে। তারার হাতের মুদ্রা অনুকরণ করলেন হাসি মুখে। বাবা-মেয়ের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ভাসলেন উইম্বলডনের দর্শকেরা। উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানালেন। সব মিলিয়ে তৈরি হল অন্য রকম মুহূর্ত।
ফেডেরার এবং মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা ছাড়া কেউ উইম্বলডনে এর আগে ১০০টি ম্যাচ জিততে পারেননি। জোকার এই তালিকায় তৃতীয়। বিশেষ এই জয়ের নেপথ্যে রয়েছে পাঁচ ডজন উইনার। জবাবে কেমানোভিচের র্যাকেট থেকে এসেছে ১৮টি। রয়েছে ১৬টি ‘এস’ সার্ভিসও। তাঁর ২৫ বছরের প্রতিপক্ষের ‘এস’ সার্ভিসের সংখ্যা ৩। জোকারকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়ে টেনিস শুরু করেন কেমানোভিচ। হয়তো নিজের আদর্শের টেনিসজীবনকে অনুসরণও করছেন। কিন্তু অনুকরণ অসম্ভব। না হলে ৩৮ বছরের প্রবীণের কাছে এত সহজে আত্মসমর্পণ করতেন না ২৫ বছরের তরতাজা তরুণ। জোকোভিচকে হারিয়ে উইম্বলডনের প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে উঠবেন, তা সম্ভবত কেমানোভিচ নিজেও ভাবেননি। তবু এমন সহজ জয়ে জোকোভিচের কৃতিত্ব কমবে না। প্রতিটি পয়েন্টের জন্য লড়ে গিয়েছেন শেষ পর্যন্ত।
কত দিন খেলবেন জোকোভিচ। তিনি নিজে একাধিক বার বলেছেন, যত দিন সর্বোচ্চ পর্যায়ে সমানে সমানে লড়াই করতে পারছেন, তত দিন অবসরের কথা ভাববেন না। বাবা-মার কথাও শুনতে রাজি নন। টেনিস ছাড়া এখনও কিছু ভাবতে পারেন না। হয়তো আগের মতো ধারাবাহিকতা থাকছে না। ২০২৩ সালের ইউএস ওপেনের পর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারেননি। ক্রমতালিকায় পিছিয়ে পড়ছেন বার বার। তার পরও টেনিস সার্কিটে জোকোভিচ এখনও সমীহ পান। তাঁকে হারাতে কঠিন লড়াই করতে হয় তরুণদের। খানিকটা মন্থর হলেও কোর্ট কভারিংয়ে পাল্লা দিতে পারেন যে কারও সঙ্গে। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ জিতেও তো এক কীর্তি গড়েছিলেন। বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড় হিসাবে টানা ১৯ বার উইম্বলডনের তৃতীয় রাউন্ডে খেললেন! যত দিন টেনিস বল তাঁর র্যাকেটের কথা শুনবে, শরীর সঙ্গ দেবে, তত দিন জোকোভিচ খেলবেন।
৪২৮ সপ্তাহ বিশ্বের এক নম্বর ছিলেন সার্ব তারকা। টেনিস খেলে যা যা জেতা যায়, সব জিতেছেন। নতুন করে জেতার কিছু নেই তাঁর। যত দিন খেলবেন, তত দিন নতুন নতুন কীর্তি গড়বেন। উইম্বলডনের শততম জয় তাঁর কীর্তিমালার উজ্জ্বল রত্ন হয়ে থাকবে।