পাকিস্তান। নামটাতেই যেন ঝাঁঝিয়ে উঠছেন। তা সে আমদাবাদের পুলিশ কমিশনারই হোন বা আন্তর্জাতিক কবাডি সংস্থার প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে এখন ব্রাত্য পাকিস্তান। আমদাবাদে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া কবাডি বিশ্বকাপের দু’দিন আগে তাই নজিরবিহীন ভাবে ছেঁটে ফেলা হল পাকিস্তানকে।
আন্তর্জাতিক কবাডি সংস্থার তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হল যে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির ফলে, টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা।
আন্তর্জাতিক কবাডি সংস্থার প্রেসিডেন্ট জনার্দন সিংহ গেহলত বুধবার আনন্দবাজারকে জানালেন যে উরি হামলা এবং সার্জিকাল স্ট্রাইকের পর, তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। ‘‘এখন পাকিস্তান ভারতের মাটিতে খেললে মানুষ ভালভাবে নেবেন না, তাই কোনও রকম বিতর্ক এড়াতেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত। দিন কয়েক আগেই সেই সিদ্ধান্তের কথা পাকিস্তানকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে,’’ আমদাবাদ থেকে বলছিলেন গেহলত।
কয়েক মাস আগে প্রো-কবাডি লিগেও পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ভারতীয় কবাডি সংস্থা। তবে, আন্তর্জাতিক স্তরের কোনও ইভেন্টে এ রকম ঘটনা এই প্রথম।
পাকিস্তান কবাডি ফেডারেশনের প্রধান রানা মহম্মদ সারওয়ারের অবশ্য দাবি, এ বিষয়ে তাঁদের কিছুই জানায়নি আন্তর্জাতিক সংস্থা।
‘‘আমরা কোনও ইমেল পাইনি এখনও। পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি, যদিও হাতে সময় প্রায় নেই বললেই চলে,’’ ইসলামাবাদ থেকে আনন্দবাজারকে বলছিলেন সারওয়ার।
ভারতে আসার জন্য সপ্তাহ তিনেক আগে ভিসার আবেদন করে পাকিস্তান টিম, কিন্তু এখনও সেই আবেদনে সাড়া মেলেনি। ‘‘রাজনীতির সঙ্গে খেলাকে কখনওই মেলানো উচিত নয়। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপে ভাল খেলার, অথচ এ বার আমাদের ছেলেরা খেলবে না, বিশ্বাস হচ্ছে না,’’ বলছিলেন সারওয়ার।
পাকিস্তান ফেডারেশনের পক্ষ থেকে খেলোয়াড়দের অবশ্য এখনও ট্রেনিং চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ‘‘গোটা টিম এই ঘটনায় হতবাক। আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে এ রকম ব্যবহার আশা করিনি আমরা,’’ একটু উত্তেজিত হয়েই জানালেন সারওয়ার।
আন্তর্জাতিক কবাডি সংস্থার কর্তাদের দাবি, সপ্তাহ কয়েক আগেই পাকিস্তানকে এই সিদ্ধান্ত তাঁরা জানিয়েছিলেন। ‘‘এটা নিয়ে অহেতুক জল ঘোলা করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে দুই দেশের যা সম্পর্ক, তাতে খেলা হওয়া অসম্ভব। আমরা বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই,’’ বলছিলেন গেহলত।
গত মাসে ভিয়েতনামে ভারতকে হারিয়ে এশিয়ান বিচ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। এবং বোধহয় সেই কারণেই আত্মবিশ্বাসে ফুটছিলেন খেলোয়াড়রাও। ‘‘এই সিদ্ধান্তটা মানা যাচ্ছে না। গত কয়েক মাসের পরিশ্রমের তা হলে কোনও মূল্যই রইল না। আমরা এত ভাল ফর্মে ছিলাম,’’ পাকিস্তান ক্যাপ্টেন নাসির আলির গলায় আক্ষেপের সুর।
ভারতীয় কবাডি সংস্থার পক্ষ থেকে খেলোয়াড়দের এই বিষয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। ‘‘পুলিশের তরফ থেকেও আমাদের জানানো হয় এই পরিস্থিতিতে কোনও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত,’’ আন্তর্জাতিক সংস্থার সিইও দেওরাজ চতুর্বেদী বলছিলেন। যোগাযোগ করা হলে, আমদাবাদের পুলিশ কমিশনার শিবানন্দ ঝা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
মার্চ মাসে টি-২০ বিশ্বকাপের আগে ধরমশালায় ম্যাচ খেলতে অস্বীকার করে পাকিস্তান। পরে অবশ্য কলকাতায় ম্যাচ সরিয়ে দেওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেয় আম্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা। ২০০৮-এ মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার পর থেকে আইপিএলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের খেলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিসিসিআই।
তবে, এই প্রথম কোনও বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে এ রকম ভাবে ‘দূরে সরিয়ে’ রাখা হল পাকিস্তানকে। এবং বোধহয় সেই কারণেই পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের গলায় তীব্র হতাশা। ‘‘বিশ্বকাপ হবে, আর আমরা খেলব না, এটা ভাবতে পারছি না। এর পর তো যে কেউই বাদ পড়তে পারে,’’ বলছিলেন ক্যাপ্টেন নাসির।
আসলে এ ভাবে স্বপ্নভঙ্গ হবে তাঁরা দুঃস্বপ্নেও বোধহয় ভাবেননি!