যত চর্চা সেই পুণের বাইশ গজ নিয়েই

ডুপ্লেসির আশঙ্কা পুণেতে বল আরও ঘুরবে, বিঘ্ন ঘটাতে পারে বৃষ্টি

এ বারও  ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের আগে যত কাণ্ড সেই বাইশ গজকে ঘিরে। বিতর্কিত সেই সালগাওকর নির্বাসন কাটিয়ে ফিরে এসেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু টেস্টের  পিচ তৈরির দায়িত্বে তিনিই।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

পুণে শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৬
Share:

মহড়া: বুধবার পুণের নেটে আগ্রাসী মেজাজে ব্যাটিং করলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। এএফপি

সেই পুণে। সেই বিতর্কিত পিচ প্রস্তুতকারক পাণ্ডুরং সালগাওকর। সংবাদমাধ্যমের গোপন তদন্তের সামনে মুখ খুলে যিনি বলে ফেলেছিলেন, উপর মহলের নির্দেশে পিচের চরিত্র পাল্টে ফেলা হয়েছিল। যার জেরে ছ’মাসের জন্য নির্বাসনের সাজাও পেতে হয় তাঁকে।

Advertisement

এ বারও ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের আগে যত কাণ্ড সেই বাইশ গজকে ঘিরে। বিতর্কিত সেই সালগাওকর নির্বাসন কাটিয়ে ফিরে এসেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু টেস্টের পিচ তৈরির দায়িত্বে তিনিই। কেমন আচরণ করবে বাইশ গজ? সেই আলোচনাতেই ব্যস্ত পুণে এবং ভারতীয় ক্রিকেট মহল।

শেষ আটচল্লিশ ঘণ্টায় পিচকে কেন্দ্র করে নানা নাটক দেখে নেওয়া গেল। মঙ্গলবার থেকে যতটা সবুজ মনে হচ্ছিল, তার অনেকটাই উধাও হয়ে গিয়েছে বুধবার। হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে দু’একবার কথা বলতে দেখা গেল পিচ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে। যদিও শাস্ত্রী এবং বিরাট কোহালি জোর দিয়ে বলছেন, পিচের চরিত্র নির্ধারণে তাঁরা হস্তক্ষেপ করবেন না। মঙ্গলবার দলের বোলিং কোচ বি অরুণ এমনকি, এমনও বলে যান যে, ‘‘নিজেদের সুবিধা মতো পিচের চরিত্র ঠিক করে নেওয়া বিশ্বের এক নম্বর দলের পক্ষে শোভা পায় না।’’

Advertisement

তা বলে ঘরের মাঠে ভারত খেলবে আর বাইশ গজে সবুজ ভাবও থাকবে, সেটাও যে অপ্রত্যাশিত। যত বিতর্কই তাড়া করুক না কেন, পুণেতে তাই স্পিন-বন্ধু পিচের বাইরে অন্য কিছু কেউ আশা করছে না। ২০১৬ ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এ মাঠেই ১০১ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। সবুজ পিচে কাসুন রাজিতার সুইং সামলাতে ব্যর্থ হয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একই মাঠে ১০৫ ও ১০৭ রানে অলআউট হয়েছিল বিরাট কোহালির নেতৃত্বাধীন টেস্ট দল। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৩১ উইকেট পেয়েছিলেন স্পিনারেরা। বাঁ-হাতি স্পিনার স্টিভ ও’কিফ একাই পেয়েছিলেন ১২ উইকেট। ৩৩৩ রানে হেরেছিল ভারত। তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল ম্যাচ। আইসিসি পুণের পিচকে ‘পুয়োর’ রেটিং দেয়।

তবে এ বার আইসিসি টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের নতুন নিয়ম অনুযায়ী খারাপ পিচ হলে ভুগতে হতে পারে আয়োজক দেশকে। যদি পিচকে খেলার অযোগ্য মনে করে আইসিসি এবং ম্যাচ ভেস্তে যায়, সে ক্ষেত্রে আয়োজক দেশের পয়েন্ট কেটে নেওয়া হবে। আইসিসি-র নতুন এই নিয়ম নিয়ে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি। পুণেতে মঙ্গলবারই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন নিয়ম সত্যিই আকর্ষণীয়। আগে খারাপ পিচ বানানো হলে আয়োজক দেশকে সতর্ক করা হত। এখন পয়েন্টও কাটা হবে।’’ এই নিয়মের চাপে কোনও দলই ঘরের মাঠে পিচকে খুব বিকৃত করার ঝুঁকি নেবে না।

সমস্যায় পড়তে চাইবেন না পিচ প্রস্তুতকারক সালগাওকরও। ২০১৭-র অক্টোবরে ভারত-নিউজ়িল্যান্ড ওয়ান ডে ম্যাচের আগে ‘পিচ-বিকৃতির’ অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের গোপন তদন্তের সামনে তিনি নিজেই মুখ খুলে বলে ফেলেন, পিচের চরিত্র পরিবর্তন করা হয়েছিল। আইসিসি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ছ’মাসের জন্য নির্বাসিত করেছিল তাঁকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি হওয়ায় পিচে ভিজে ভাব বেশি ছিল। মহারাষ্ট্র রঞ্জি ট্রফি দলের ক্রিকেটার অঙ্কিত বাওনে বলছিলেন, ‘‘পুণের পিচে ঘাস না থাকলে একেবারে ব্যাটসম্যানদের স্বর্গে পরিণত হয়। শুরুর দু’ঘণ্টা পেসাররা সাহায্য পায়। কারণ, লাল মাটির পিচে বল বাউন্স করে বেশি। একই পিচে তৃতীয় দিন থেকে সাহায্য পেতে শুরু করে স্পিনারেরা। সকাল ও রাতের তাপমাত্রায় বড় ফারাক থাকার জন্য দ্রুত ভাঙতে শুরু করে পিচ।’’ দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি অবশ্য মঙ্গলবার পিচ দেখে বলেছিলেন, ‘‘বিশাখাপত্তনমের চেয়ে বল বেশি ঘুরবে এখানে। আমরাও প্রস্তুত। টস জেতা গুরুত্বপূর্ণ।’’

বুধবার একই পিচ দেখে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালির প্রতিক্রিয়া, ‘‘গত তিন দিন পুণের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। শেষ রাতে বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা ভিজে ভাব ফিরেছে পিচে।’’ বিশাখাপত্তনমে যে একাদশ নিয়ে বিপক্ষকে ২০৩ রানে হারিয়েছিল ভারত, এ ম্যাচেও সেই একাদশ নিয়েই নামার ইঙ্গিত অধিনায়কের। বলছিলেন, ‘‘খুব প্রয়োজন না পড়লে প্রথম একাদশ বদলানোর কারণ দেখছি না।’’

পুণেতে টেস্টের মেজাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে বৃষ্টি। মঙ্গলবার সারা রাত বৃষ্টি হওয়ার পরে অনুশীলন করতে সমস্যা হয়নি ভারতীয় দলের। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বুধবার রাতেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হয়েছে। যা চলতে পারে টেস্টের পঞ্চম দিন পর্যন্ত। আগের মতো কোনও টেস্ট সিরিজ হলে হয়তো এতটা চিন্তার কিছু ছিল না। কিন্তু এই ম্যাচ যে টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের অঙ্গ। ম্যাচ ভেস্তে যাওয়া মানে যে পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়া। দেশের মাঠে মোটামুটি নিশ্চিত জয়ের বদলে বাতিল ম্যাচ কী করে আর কোহালির মুখে হাসি ফোটাবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন