Sports News

রক্তাক্ত কাশ্মীর ঘুরে দাঁড়াতে চায় ফুটবলকে অস্ত্র করে

আজ সেই স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার দিন। একটা ড্র, রিয়েল কাশ্মীর এফসি-র সামনে খুলে দেবে আই লিগ খেলার দরজা। কাশ্মীর থেকে আই লিগ খেলবে কোনও দল, এই প্রথম। ভাবলেই শিহরণ হচ্ছে শামিম মেহরাজের। রিয়েল কাশ্মীর এফসি-র মালিক।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ১৭:১১
Share:

প্রতিদিন কার্ফু! প্রতিদিন মৃত্যু।

Advertisement

রক্তমাখা রাস্তা দেখতে দেখতেই স্কুলের পথে হেঁটে যায় শিশুরা। সেখানে ফুটবল, ক্রিকেট তো বিলাসিতাই!

তা-ও কখনও কখনও এক-দু’জন করে কাশ্মীরের সেই বোমাগুলির মধ্যে থেকেই উঠে এসেছে ভারতীয় খেলার জগতে। ঠিক যেমনভাবে আফগানিস্তানের মাটিতে খেলে পেশাদার হয়ে ওঠার কথা ভাবতে ভাবতে অনেক নৃশংসতার মধ্যেও উঠে আসেন রশিদ খানেরা। যে ভাবে লড়াই করে টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পায় আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। সে ভাবেই কাশ্মীর থেকে কোনও দলআই লিগ খেলার স্বপ্নও দেখে।

Advertisement

আজ সেই স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার দিন। একটা ড্র, রিয়েল কাশ্মীর এফসি-র সামনে খুলে দেবে আই লিগ খেলার দরজা। কাশ্মীর থেকে আই লিগ খেলবে কোনও দল, এই প্রথম। ভাবলেই শিহরণ হচ্ছে শামিম মেহরাজের। রিয়েল কাশ্মীর এফসি-র মালিক। নিজে সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘদিন। এখন কাশ্মীরেই চলে তাঁর সংবাদপত্র ‘কাশ্মীর মিরর’। ভেবেছিলেন, কাশ্মীরের ছেলেদের ফুটবলমুখী করলে কমবে নাশকতা। ছেলেরা জঙ্গি না হয়ে ফুটবলে মন দেবে। সবে দু’বছর বয়স তাঁর ক্লাবের। আর তাতেই আই লিগ খেলার স্বপ্ন দেখছে উপত্যকা।

আরও পড়ুন
সাইলেন্ট কিলারকে স্ম্যাশ করে নিখার গর্গের স্বপ্নের লড়াই

এই কাশ্মীর দলে চার জন বাঙালিওরয়েছেন। তার মধ্যে দীর্ঘদিন মোহনবাগান-মহমেডান খেলে যাওয়া মিডফিল্ডার সুমন দত্ত অন্যতম। বাংলা ছেড়ে সুদূর কাশ্মীরে ফুটবল খেলতে গিয়ে বুঝেছেন, কত কঠিন এই বেঁচে থাকা। দলের বাইরে থেকে আসা ফুটবলারদের তিরতারা হোটেলে রাখা হয়েছে। সব ব্যবস্থা খুবই পেশাদার। তবুও, সারাক্ষণ শুনতে হয় মিলিটারির বুটের শব্দ। সুমন বলছিলেন, ‘‘প্রথম প্রথম গোলাগুলির শব্দ কানে এলে বেশ ভয় লাগত। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম, ওরা সাধারণ মানুষ আর ট্যুরিস্টদের কিছু বলে না। ভয়টা কেটে গেল। ওদের সঙ্গে মিশে গেলাম। ভালওবেসে ফেললাম। এখানকার মানুষ খুব ভাল।’’

রিয়েল কাশ্মীর এফসির চার বাঙালি।

এই দলেই উইং-এ খেলেন অয়ন দাশশর্মা, সাইডব্যাক আভাস থাপা ও স্ট্রাইকার ঋত্বিক দাস। ঋত্বিক দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগে পাঁচটি গোল করেছেন। রিয়েল কাশ্মীর এফসি দল অনেকটাই নির্ভর করে রয়েছে এই চার বাঙালির উপর।

বিভিন্ন রাজ্য থেকে ট্রায়াল দিয়ে তুলে আনা হয়েছে অনেক নতুন মুখ। ১৬ জন কাশ্মীরি ছেলে রয়েছে দলে। ফুটবলকে ভালবেসে হিংসাকে ভুলেছেন যাঁরা। পুরো কাশ্মীরকে হিংসা ভোলাতে চান শামিম। তাই রিয়েল কাশ্মীর এফসি-র অধীনে রয়েছে অনূর্ধ্ব-১৩, ১৫ ও ১৮ অ্যাকাডেমি। আরও আরও ছেলে, আরও অনেক ফুটবল। শ্রীনগরের পিআরসি অ্যাস্ট্রোটার্ফ গ্রাউন্ডের ছোট গ্যালারি ভরে যায় যখন রিয়েল কাশ্মীর এফসি খেলতে নামে। ওরা ফুটবলে ডুব দেয়। তবুও যে হানাহানি, গোলাগুলি বন্ধ হয় না।সুমন বলছিলেন, ‘‘একদিন হয়তো ফুটবলের হাত ধরেই বদলে যাবে কাশ্মীর। যখন কার্ফু চলে, তখন হোটেলের বাইরে বেরোতে পারি না। তবে, টিম বাসে করে হোটেল থেকে মাঠে গিয়ে প্র্যাকটিস করি। আবার বাসে করেই হোটেলে ফিরে আসি। গোটা রাস্তায় সারাক্ষণ মিলিটারি টহল দেয়।’’

কোচ ডেভিড রবার্টসনের সঙ্গে।

কলকাতার ফুটবল আবহের সঙ্গে কোনও মিল নেই। মিল নেই কলকাতার সমর্থক, ক্লাব কর্তাদের সঙ্গেও। অনেক পার্থক্য খুঁজে পান সুমন। কলকাতা দলে জায়গা হয় না যাঁদের, তাঁরাই বিধ্বস্ত কাশ্মীর থেকে একটা দলকে পৌঁছে দিতে পারে আই লিগের মূল স্রোতে। এটাই বা কম কিসে।রিয়েল কাশ্মীর আই লিগে পৌঁছে গেলে এই ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানকেও ওদের বিরুদ্ধে নামতে হবে। তখন অবশ্যই সুমনের মনে পড়ে যাবে মোহনবাগানের দিনগুলো।শামিম মেহরাজ বলছিলেন, ‘‘আর একটা ম্যাচ। তার আগে অন্য কিছু ভাবতে পারছি না। অনেক রাস্তা কী ভাবে এসেছি তা আমিই জানি। তাই বাকি সব কথা আই লিগে পৌঁছে বলব।’’ তাঁর গলা ধরে আসে, আবেগে।

মিডফিল্ডার সুমন দত্ত ড্রেসিংরুমে।

অনেক টাকা খরচ করে স্কটল্যান্ড থেকে যে কোচকে উড়িয়ে আনা হয়েছে সেই ডেভিড রবার্টসন উয়েফা প্রো লাইসেন্স করা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলেছেন ফার্গুসনের অধিনে। অনেকটা স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই আজ আই লিগ থেকে একম্যাচ দূরে দাড়িয়ে কাশ্মীর এফসি।সুমন বলছিলেন, ‘‘এই একটা ম্যাচ আর আই লিগে পৌঁছে যাওয়াটা বদলে দিতে পারে কাশ্মীর ফুটবলের ছবিটাই। যে মেহরাজ, ইশফাকদের হাত ধরে কাশ্মীর ফুটবল চিনেছিল। এ বার ভারতীয় ফুটবল কাশ্মীরকে চিনবে রিয়েল কাশ্মীর এফসি-র নামে। পুরো কাশ্মীরের শুভেচ্ছা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আমরা আই লিগ খেলবই।’’

কলকাতার ছেলে আজ কাশ্মীরের পতাকা হাতে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত একটা রাজ্যকে। বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্নও শুরু হতে পারে এখান থেকেই। ফুটবলকে সামনে রেখেই। দরকার শুধু একটা ড্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement