সলমন-ক্যাটরিনার মঞ্চে নায়ক সেই তেন্ডুলকর

সামান্য দুলল সর্ষেক্ষেতের  মতো স্টেডিয়াম। সাইকেল চালিয়ে এলেন সলমন খান। সঙ্গে আর জনা পঁচিশ সাইকেল আরোহী। অর্ধেক মাঠ ঘুরে হাত নাড়াতে নাড়াতে উঠে এলেন ‘লেটস ফুটবল’-এর মঞ্চে।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কোচি শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪০
Share:

নজরে: সচিনকে দেখে উত্তাল গ্যালারি। শুক্রবার।ছবি: টুইটার।

মুহূর্তের মধ্যে পুরো স্টেডিয়াম অন্ধকার হয়ে গেল।

Advertisement

আলোর একটা পাখি নেচে উঠল ঈশান কোণে। তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলেন ক্যাটরিনা কাইফ। উঠে এলেন সঙ্গীদের নিয়ে মঞ্চে। ‘ধুম মাচা দে’-র সঙ্গে নাচলেন। রঙিন আলো ছিটকে পড়ল শরীর বেয়ে।

সামান্য দুলল সর্ষেক্ষেতের মতো স্টেডিয়াম।

Advertisement

সাইকেল চালিয়ে এলেন সলমন খান। সঙ্গে আর জনা পঁচিশ সাইকেল আরোহী। অর্ধেক মাঠ ঘুরে হাত নাড়াতে নাড়াতে উঠে এলেন ‘লেটস ফুটবল’-এর মঞ্চে। নাচলেন দু’টো গানের সঙ্গে। ক্যাটরিনার চেয়ে সামান্য বেশি উচ্ছ্বাস।

কেরল সিনেমা জগতের ‘শাহরুখ খান’ মামুটি একটা বল হাতে নিয়ে উঠলেন মঞ্চে। সগর্বে ঘোষণা করলেন, আমি কেরল ব্লাস্টার্সের সমর্থক। আবেগ সামান্য হলেও উপচে পড়ল।

মাঠের মধ্যে কখনও কেরলের সমুদ্রের শোভা। কখনও ফুটে উঠছে রং-এর আলপনা। যা অনন্ত ছটা হয়ে ঝরে পড়ছিল গ্যালারির আনাচে কানাচে।

বাংলার ছৌ শিল্পীর দল যুদ্ধের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে। তাদের নাচের আর গানের সঙ্গে মঞ্চে ট্রফি নিয়ে উঠে এলেন এটিকে অধিনায়ক ইয়র্দি মন্তেল।

উল্টোদিকে শিকারের খোঁজে কেরলের ‘কালারি পাট্টা’-র দল তখন দাঁড়িয়ে বর্ম পরে, ঢাল আর লাঠি হাতে। সবুজ-রাজ্যের ঐতিহ্যের ‘চান্দা মেলম’-এর ছাতার নিচ দিয়ে কেরলের চার মেয়েকে নিয়ে মঞ্চে এলেন নীতা অম্বানী।

কিন্তু তাঁকে তো দেখাই যাচ্ছে না! কোথায় সেই ছোট্টখাট্টো ভদ্রলোক? মঞ্চে তাঁর নামটা সলমন ঘোষণা করতেই দেখা গেল তাঁকে। আলোর সার্চ লাইট পড়তেই দেখা গেল নিজের টিমের ক্যাপ্টেন সন্দেশ ঝিঙ্গন-কে নিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি— সচিন তেন্ডুলকর। হলুদের রঙে রাঙিয়ে ওঠা তিন ঘণ্টার অপেক্ষমান গ্যালারি যেন সমুদ্রের তীব্র ঢেউয়ের চেহারা নিল মুহূর্তে। ব্যাট হাতে যখন নামতেন রানের-আবাহনে, সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করতেন অনায়াসে, তখন যেমন হতো, সেই দৃশ্য যেন ফিরে এল জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে।

উৎসব: আইএসএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সলমন খান এবং ক্যাটরিনা কাইফ। শুক্রবার কোচিতে। ছবি: পিটিআই।

তাঁর নামের সঙ্গে সঙ্গত করেই ‘মাস্টার্স ব্লাস্টার্স’-এর অনুকরণে তৈরি হয়েছে কেরল ব্লাস্টার্স। সলমন যখন ট্রফিটা দেখিয়ে সচিনকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘কে পাবে ট্রফিটা এ বার?’ অধরা ট্রফিটার দিকে তাঁকিয়ে হলুদ জার্সি পরে আসা সচিন তাঁর সেই বিখ্যাত হাসি নিয়ে হাত রাখলেন পাশে দাঁড়ানো নিজের টিমের অধিনায়কের কাঁধে। আরও উথাল-পাথাল হয়ে উঠল আগুনে গ্যালারি। স-চি-ন, স-চি-ন স্লোগান তুলে উঠল মেক্সিকান ওয়েভ। ফুটবল মাঠেও ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’-এর জনপ্রিয়তা দেখে মনে হচ্ছিল, সফল পারফর্মারদের কোনও জগৎ নেই। কোনও গণ্ডি তাঁকে আটকাতে পারে না। দেশীয় ফুটবলের এই মহা-মঞ্চে তাই সচিনে-ই হয়ে উঠেছিলেন শুক্র সন্ধ্যার মহানায়ক। বলিউড-কেরলের জনপ্রিয়তম নায়ক-নায়িকারা হাজির থাকা সত্ত্বেও সচিনই ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।

এর আগে ইন্ডিয়ান সুপার লিগের আরও তিনটে উদ্বোধন দেখেছে দেশ। কলকাতার প্রথম উদ্বোধন ছিল চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া। তার পরের দু’টো উদ্বোধন হয়েছে এ বারের মতোই, অনেক কম জাঁকজমকের। কিন্তু আবেগের গামলা উপুড় করে কোথাও এ রকম ‘ইয়োলো আর্মি’ আসেনি মাঠে। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় নাচ-গানের ধামাকা শুরু। কিন্তু দুপুর বারোটা থেকে লাইন পড়ে গিয়েছিল স্টেডিয়ামের বিভিন্ন গেটে। তিনটেতে মাঠ ভর্তি। এবং সবথেকে যেটা আশ্চর্যের তা হল, অন্তত নব্বই ভাগ দর্শক এসেছিলেন কেরলের ‘হলুদ’ জার্সি পরে। মুখে রং মেখে। ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেয়েরাও।

যে রাজ্য থেকে বহুদিন আই লিগে কোনও ক্লাব নেই। এ বার কোনওক্রমে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দিয়ে ঢুকেছে কালিকটের গোকুলম এফ সি। যেখানে সি কে বিনীতের মতো ফুটবলারের জন্য সরকারি রক্ষী দিতে হয় ভিড় সামলাতে। সেখানে নীতা অম্বানীর কোম্পানির টুনার্মেন্ট ফুটবল পাগল কেরলের মানুষকে মাঠে টেনে এনে উত্তাল করে দিলেও দিল্লির ফেডারেশন কর্তারা কিছু করতে পারেননি আজ পর্যন্ত।

সচিনের ফুটবল আবাহনের দিনে সেটাই বড় বেশি চোখে পড়ল কোচিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন