ডার্বির আগে মাঠ পরিচর্যা। শিলিগুড়িতে বুধবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
ওয়েডসন-প্লাজার দৌরাত্ম্য আটকাতে মোহনবাগানের রক্ষণ কি প্রস্তুত?
প্রশ্ন শুনে সঞ্জয় সেন হাসেন। ‘‘আমি এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেব না। আমরা কী করতে পারি সেটা আমরা জানি। মাঠে তার প্রমাণ দেব।’’ বলে দেন বাগান কোচ। সরাসরি না বললেও অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সঞ্জয় যে প্রশ্নটা তুলে দেন, তা হল ডার্বিতে তাঁর দলের রক্ষণ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণও সমান খারাপ।
মরসুমের প্রথম কলকাতা ডার্বি শুরু হতে এখনও দিন চারেক বাকি। মাঝে কোনও খেলাও নেই। তাই আই লিগ এবং এএফসি ম্যাচে পরপর দু’টো চমকপ্রদ জয়ের পর স্বাভাবিক ভাবেই শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত রবিবারের কলকাতা ক্ল্যাসিকো নিয়ে অঙ্ক কষতে শুরু করে দিয়েছেন বাগান কোচ। ইস্টবেঙ্গলের সব ম্যাচ না দেখলেও প্রত্যেকটি ম্যাচের সিডি তাঁর বাক্সবন্দি। আজ বৃহস্পতিবার থেকে দেখাতে শুরু করবেন সনি-ডাফিদের। ট্রেভর মর্গ্যানের টিমের কোথায় ভুল, সেটা ইতিমধ্যেই নোটবুকে তুলে নিয়েছেন তেরো বছর পর বাগানকে আই লিগ দেওয়া কোচ। ‘‘ওরা যেমন আমাদের ডিফেন্স নিয়ে ভাবছে। আমরাও ভাবছি। ম্যাচ থেকে আমরা তিন পয়েন্ট চাই। গত বছর শিলিগুড়িতে আমি মাঠে থাকতে পারিনি। সাসপেন্ড ছিলাম বলে। টিমটা হেরে গেছিল। সেটা মাথায় থাকবে আমাদের সকলের।’’ সনিদের কোচের কথাতেই পরিষ্কার গত বারের আই লিগের ফিরতি ডার্বির হারের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সব অস্ত্রই লাল-হলুদের শহর বলে পরিচিত শিলিগু়ড়িতে নিয়ে যেতে চাইছেন সঞ্জয়।
কিন্তু তাঁর চতুর্থ বিদেশি এডুয়ার্ডো কি খেলতে পারবেন? তাঁর আর এক স্টপার কিংশুক দেবনাথেরও চোট রয়েছে। এই অবস্থায় রক্ষণ সংগঠন নিয়ে চিন্তায় থাকলেও তা সামনে আনতে নারাজ বাগান কোচ। পাশাপাশি চোট রয়েছে কেন লুইসেরও। সঞ্জয় বলে দিলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকালের অনুশীলনেই ঠিক করব এদের তিন জনকে ডার্বি খেলাতে নিয়ে যাব কি না! তবে ওরা না খেললেও আমার টিমের কোনও সমস্যা নেই।’’
তিন বছর বাগানে কোচিং করাচ্ছেন সঞ্জয়। স্বীকার করছেন গত দু’ বারের চেয়ে এ বারের ইস্টবেঙ্গল শক্তিশালী। ‘‘ওদের এ বার গোল করার লোক আছে। ম্যাচটা জিততে গেলে আমাদের নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে।’’
এ বারের আই লিগের এটা প্রথম ডার্বি। হার-জিতের উপর নির্ভর করছে না চ্যাম্পিয়নশিপ। বরং দু’ দলই বহু দিন পর লিগ টেবলের এক এবং দুই নম্বর হয়ে চিরকালীন লড়াইতে নামছে। সম্ভবত সে জন্যই বেশ সতর্ক বাগান। কোচের মাধ্যমে টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে ফুটবলারদের কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বিতর্কের ভয়ে। বাগান কোচ বললেন, ‘‘ফুটবলাররা এক এক রকম কথা বললে টিমের উপর তার প্রভাব পড়ে। সে জন্যই ফুটবলারদের কথা বলতে বারণ করে দিয়েছি। ওরা যা কথা বলার ম্যাচের পর বলবে।’’
সনি বনাম ওয়েডসন— হাইতির দুই ফুটবলারের লড়াই বলা হচ্ছে এই ডার্বিকে। দু’জনের মধ্যে কে সেরা? প্রশ্ন করা হলে বাগান কোচ জানিয়ে দেন, তিনি এই বিতর্কে ঢুকবেন না। ‘‘দু’টো ম্যাচে আমি ওয়েডসনের খেলা দেখেছি। এত তাড়াতাড়ি ওকে নিয়ে কিছু বলা ঠিক নয়। আর সনি এবং ওয়েডসন দু’জনে দুই পজিশনে খেলে। দু’জনের খেলার স্টাইলও অন্য রকম। তাই তুলনা টেনে বিতর্ক বাড়িয়ে লাভ নেই। সনি তো ইতিমধ্যেই প্রমাণ করে দিয়েছে, ও ভাল ফুটবলার। ওয়েডসনকে আরও কিছু ম্যাচে দেখতে হবে।’’ বৃহস্পতি এবং শুক্রবার পরপর দু’দিন অনুশীলন করে শিলিগুড়ি যাবেন সনি-ডাফিরা। দেখার, ইস্টবেঙ্গলের মতোই তিন বিদেশি নিয়েই শেষ পর্যন্ত বাগান ব্রিগেড মাঠে নামে কি না!