আমরাও শেষ আটে। শীর্ষ বাছাই ইন্দো-সুইস জুটি সানিয়া-হিঙ্গিস। ছবি: এএফপি
উইম্বলডনে ‘মিড সান়ডে’-র পর দিন ‘ম্যানিক মনডে’ সাধারণত যতটা নাটকীয়, উত্তেজক হয় তেমনই হল।
একে তো সিঙ্গলসে এ যাবত টিকে থাকা ছেলেমেয়ে মিলিয়ে বত্রিশ জনই এ দিন কোর্টে নামেন। সঙ্গে ডাবলসেও আজ গুটিকয়েক রোমাঞ্চকর লড়াই হল। যার দু’টোর সঙ্গে জড়িত কিনা আবার ভারতীয়রা!
লিয়েন্ডার পেজ আর ড্যানিয়েল নেস্টরের ৮৫ বছর বয়সি ইন্দো-কানাডিয়ান জুটি আলেকজান্দার পিয়া-ব্রুনো সোয়ারেসের মতো দুঁদে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ০-২ সেট থেকে ২-২ সমতায় ফিরেও ম্যারাথন লড়াই স্রেফ ক্লান্তিতে হেরে বসেন পঞ্চম সেটে ২-৬-এ। পেজ সামান্যর জন্য না পারুন, রোহন বোপান্না রোমানিয়ান সঙ্গী ফ্লোরিন মার্জিয়াকে নিয়ে ডাবলস কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেলেন। আরেকটা রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতে। কুবোট-মির্নির মহাঅভিজ্ঞ জুটির সঙ্গে বোপান্নাদের চারটে সেটেরই মীংমাংসা হল টাইব্রেকারে। ৩-১ জেতার পথে শেষ সেট বোপান্নারা জেতেন টাইব্রেকারের ১৮ নম্বর পয়েন্টে এসে। ১০-৮।
মেয়েদের ডাবলসেও শেষ আটে পৌঁছে গিয়েছেন সানিয়া মির্জা ও তাঁর সুইস সঙ্গী মার্টিনা হিঙ্গিস। শীর্ষ বাছাই সানিয়ারা এ দিন আরও একটা অনায়াস জয় পেলেন মেদিনা গ্যারিসন-পারা সান্তোনজার বিরুদ্ধে। ৬-৪, ৬-৩।
মহা দিনের সবচেয়ে আলোচিত ম্যাচও হল একপেশেই। উইলিয়ামস বোনেদের পারিবারিক লড়াইয়ে সেরেনা স্বচ্ছন্দে ৬-৪, ৬-৩ হারালেন ভেনাসকে। তার পরেও অবশ্য জল্পনা অনুসারে বাবা রিচার্ড উইলিয়ামসের আগাম ঠিক করে দেওয়া রেজাল্ট অনুযায়ীই সেরেনা জিতেছেন বলা বোধহয় যাচ্ছে না। কারণ বিশ্বের এক নম্বর সেরেনা প্রথম আটটা পয়েন্টই যে ভাবে প্রচণ্ড পাওয়ারে খেলে জেতা ইস্তক গোটা ম্যাচের রাশ হাতে তুলে নিয়েছিলেন, যে ভাবে সার্ভ, রিটার্ন, উইনার— টেনিস খেলাটার তিনটে প্রধান জায়গায় ষোলো নম্বর বাছাইদের বিরুদ্ধে প্রভুত্ব করেছেন, তাতে ম্যাচের ফলাফলে অন্য কোনও গন্ধ পাওয়া মুশকিল। এতটাই দিদিকে শাসন করেছেন এ দিন বোন।
ভেনাসকে হারিয়ে অবশ্য আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সেরেনা। ‘‘যখন আপনি এমন একজনের বিরুদ্ধে খেলছেন যাকে ভীষণ ভালবাসেন, যে আপনাকেও ভীষণ ভালবাসে তখন খেলাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। স্রেফ প্রতিযোগিতার স্বার্থে খেলছি আর মুহূর্তটাকে উপভোগ করছি— এ রকম একটা মন তৈরি করে দিদির বিরুদ্ধে খেললাম।’’
কোয়ার্টার ফাইনালে সেরেনার সামনে প্রাক্তন এক নম্বর আজারেঙ্কা। শারাপোভার লড়াই নিউইয়র্কের কোকো ভ্যান্ডেওয়েগের সঙ্গে। মার্কিন অলিম্পিয়ান সাঁতারু এবং ভলিবলার মা টোনার মেয়ে কোকোর এটাই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম কোয়ার্টার। সেরেনার আরেক সম্ভাব্য উত্তরসূরি ম্যাডিসন কিস-ও শেষ আটে উঠে রাডওয়ানস্কার মুখোমুখি। আর ফেডেরারের দেশের নতুন মেয়ে টেনিস প্রতিভা ব্যাসিনস্কি গত মাসে ফরাসি ওপেনে সেমিফাইনাল খেলার পর উইম্বলডনে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেন আজ। সামনে স্পেনের নতুন প্রতিভা মুগুরুজা। যিনি এ দিন হারান পঞ্চম বাছাই ওজনিয়াকিকে।
পুরুষদের সিঙ্গলসের যুদ্ধে এ দিন আবার নাটকীয় নাম কেভিন অ্যান্ডারসন। ছ’ফুট আট ইঞ্চির দক্ষিণ আফ্রিকান প্লেয়ার নোভাক জকোভিচকে টাইব্রেকারে প্রথম দু’সেটে পিছিয়ে দিয়ে চমকে দেন। শীর্ষবাছাই সার্বিয়ান তারকা এর পর ফিরে আসেন পরের দু’সেট দখল করে। এক নম্বর কোর্টে তখন প্রবল উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত আলো কম থাকার জন্য ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়। জকোভিচের পক্ষে তখন ফল ৬-৭ (৬-৮), ৬-৭ (৬-৮), ৬-১, ৬-৪। মঙ্গলবার পঞ্চম সেটের খেলা হবে।
ঘরের ছেলে অ্যান্ডি মারে ক্রোট দৈত্য (উচ্চতা ৬ ফুট ১১ ইঞ্চি, ওজন ১০৫ কেজি) কার্লোভিচকে টপকে শেষ আটে উঠতে মাত্র একটা সেট খোয়ালেন। রজার ফেডেরারের কুড়িতম বাছাই রবার্তো আওটকে হারাতে সেটুকুও খোয়াতে হয়নি। দ্বিতীয় বাছাই সুইস মহাতারকা জেতেন ৬-২, ৬-২, ৬-৩। উইম্বলডনের শেষ আটে উঠলেন ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন ওয়ারিঙ্কাও।