Shane Warne

Shane Warne: আচমকা মৃত্যুর ‘রং ওয়ানে’ দুনিয়াকে বিহ্বল করলেন ‘শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি’র শিল্পী

ক্রিকেট জীবনে সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থতাও সমান ভাবে থেকেছে। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের ঠিক আগে ডোপিংয়ে অভিযুক্ত হন ওয়ার্ন। তাঁকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। এক বছর নিষিদ্ধ থাকার পরে ২০০৪ সালে ফের ক্রিকেটে ফেরেন তিনি। ২০০৫ সালে একদিনের ক্রিকেট ও ২০০৭ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ওয়ার্ন। তিনিই প্রথম অধিনায়ক যিনি আইপিএল জেতেন। প্রতিযোগিতার প্রথম বছরই রাজস্থান রয়্যালসকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২২ ২০:২৩
Share:

শেন ওয়ার্ন —ফাইল চিত্র।

তিনি যখন ক্রিকেট থেকে অবসর নেন, তখন তাঁর নামের পাশে টেস্টে ৭০৮ উইকেট। যা তখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। কিন্তু শুধুমাত্র ৭০৮ উইকেট বা তাঁর একের পর এক বিষাক্ত লেগ স্পিনে বিপক্ষ ব্যাটারদের আউট হওয়া দিয়ে হয়তো ধরা যাবে না শেন ওয়ার্নকে। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম বর্ণময় চরিত্র তিনি। রেকর্ডের খ্যাতির পাশে সেখানে সমান ভাবে উজ্জ্বল যৌন কেলেঙ্কারি। কোনও কিছুই লুকিয়ে করেননি ওয়ার্ন। বুক চিতিয়ে, হাসি মুখে সবটা নিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছেন। তাই মাত্র ৫২ বছর বয়সে তাঁর চলে যাওয়ায় হতবাক ক্রিকেট দুনিয়া। এখনও মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। হঠাৎ করে যেন শেষ হয়ে গেল ক্রিকেটের একটা অধ্যায়।

Advertisement

১৯৯২ সালে ভারতের বিরুদ্ধেই টেস্টে অভিষেক হয়েছিল ওয়ার্নের। পরের বছর সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়ার একদিনের দলে। তার পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চলে লেগ স্পিনের জাদু। কব্জির মোচড়ে লেগ স্টাম্পের বাইরের দিকের রাফ (বোলারের জুতোর চাপে পিচের খুঁড়ে যাওয়া অংশ) ব্যবহার করে তাবড় তাবড় ব্যাটারদের ভেল্কি দেখিয়েছেন। কখনও বল পায়ের পিছন দিক দিয়ে গিয়ে স্টাম্পে লেগেছে। কখনও আবার ব্যাটারের সামনে দিয়েই অফ স্টাম্প উড়ে গিয়েছে।

কেরিয়ারে ১৪৫ টেস্ট খেলে মোট ৭০৮ উইকেট নিয়েছেন ওয়ার্ন। সেরা ৭১ রান দিয়ে ৮ উইকেট। এক ইনিংসে ৩৭ বার ৫ উইকেট বা তার বেশি নিয়েছেন। একদিনের ক্রিকেটে ১৯৪ ম্যাচ খেলে ২৯৩ উইকেট গিয়েছে ওয়ার্নের ঝুলিতে। শুধু বল নয়, ব্যাট হাতেও সমান উপযোগী ছিলেন তিনি। টেস্টে ৩১৫৪ ও এক দিনের ম্যাচে ১০১৮ রান তারই সাক্ষী। ১৯৯৩ সালের অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের মাইক গ্যাটিংকে করা ওয়ার্নের বলকে ‘শতাব্দীর সেরা বল’ বলা হয়ে থাকে। শ্রীলঙ্কার অফ স্পিনার মুথাইয়া মুরলীধরন ও ভারতের লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলের সঙ্গে ওয়ার্নের অঘোষিত লড়াই ক্রিকেট দুনিয়ার এক চিরস্মরণীয় অধ্যায়।

Advertisement

ক্রিকেট জীবনে সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থতাও সমান ভাবে থেকেছে। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের ঠিক আগে ডোপিংয়ে অভিযুক্ত হন ওয়ার্ন। তাঁকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। এক বছর নিষিদ্ধ থাকার পরে ২০০৪ সালে ফের ক্রিকেটে ফেরেন তিনি। ২০০৫ সালে একদিনের ক্রিকেট ও ২০০৭ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ওয়ার্ন। তিনিই প্রথম অধিনায়ক যিনি আইপিএল জেতেন। প্রতিযোগিতার প্রথম বছরই রাজস্থান রয়্যালসকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি।

বিশ্বের তাবড় ব্যাটারদের মনে ভয় ধরানো ওয়ার্নও ভয় পেতেন। হ্যাঁ, সচিন তেন্ডুলকরকে ভয় পেতেন তিনি। ওয়ার্নের মোকাবিলায় সচিন এক বিশেষ ধরনের শট (প্যাডল সুইপ) খেলা শুরু করেন। তার ফলে সচিন-ওয়ার্ন দ্বৈরথে বেশি জয় হত সচিনের। ওয়ার্ন পরে অনেক জায়গায় বলেছেন, স্বপ্নেও তিনি দেখতেন তাঁর বলে সচিন মারছেন। এই লড়াই যদিও মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকত। ওয়ার্ন এমনটাই ছিলেন। প্রশংসা, নিন্দা— সবটাই করতেন সকলের সামনে।

অবসরের পরে ‘শেন ওয়ার্ন ফাউন্ডেশন’ চালু করেন তিনি। দরিদ্র ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাজ করে তাঁর সংস্থা। বিভিন্ন দেশে ঘুরে অনেক কাজ করেছেন। আবার এই ওয়ার্নই এক নার্সকে যৌন উত্তেজক মেসেজ পাঠিয়ে জাতীয় দলের সহ-অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন। মহিলাদের সঙ্গে বার বার নাম জড়িয়েছে তাঁর। বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। সম্পর্ক ভেঙেছে। কিন্তু কোনও কিছুই লুকিয়ে রাখেননি তিনি। বুক চিতিয়ে সবটা নিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছেন। শুধু মৃত্যুর সময়েই কাউকে কিছু জানতে দিলেন না। ব্যাটারকে বোকা বানানো ‘রং ওয়ান’ করে চলে গেলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন