শার্জিলের আফসোস, কেন আরও দু-চার ওভার টিকে থাকলেন না

উর্দুতে একটা প্রবাদবাক্য রয়েছে, ‘উমিদ পে দুনিয়া কায়েম হ্যায়’। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় আ শায় চলছে সারা বিশ্ব। সেই ‘উমিদ’-ই এখন পাকিস্তান শিবিরের সম্বল।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

মোহালি শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৬ ০২:৩৬
Share:

উর্দুতে একটা প্রবাদবাক্য রয়েছে, ‘উমিদ পে দুনিয়া কায়েম হ্যায়’। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় আ শায় চলছে সারা বিশ্ব। সেই ‘উমিদ’-ই এখন পাকিস্তান শিবিরের সম্বল।

Advertisement

নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর এই ‘উমিদ’-এর কথা তুলতে কোচ ওয়াকার ইউনিস অবশ্য তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলেন, ‘‘আপনারা বলছেন যখন উমিদ রাখছি। কিন্তু আমার মনে হয় না, তাতে কিছু হবে বলে।’’

কিন্তু পাক দলের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আসলে হারের পরপরই প্রচণ্ড হতাশ হয়ে ওই কথাগুলো বলে ফেলেছে ওয়াকার। আমাদের ছেলেরা কিন্তু শুক্রবার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার আশায় রয়েছে।’’

Advertisement

অস্ট্রেলিয়াকে হারালেই যে পাকিস্তান শেষ চারে চলে যাবে, এমন ভাবার অবশ্য কোনও কারণ নেই। সে ক্ষেত্রে অন্যদের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। কিন্তু এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সামনে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো ছাড়া আর কোনও উপায়ই নেই। যার জন্য এখন ‘উমিদ’-ই সম্বল।

সেই ‘উমিদ’ নিয়েই বুধবার দুপুরে ফের নেটে ঢুকে পড়লেন পাক ক্রিকেটাররা। যাঁদের মধ্যে আগের রাতের নায়ক শার্জিল খানও ছিলেন। অপশনাল প্র্যাকটিসে ছিলেন ওয়াহাব রিয়াজ, আহমেদ শেহজাদ, মহম্মদ সামিদের দেখা গেলেও দেখা যায়নি শাহিদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিক, উমর আকমল, মহম্মদ আমেরদের। মহম্মদ হাফিজের আশা সম্ভবত তাঁদের ছাড়তে হচ্ছে। পাক শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তিনি সম্ভবত আর বিশ্বকাপেই নেই।

দলের এক সাপোর্ট স্টাফের আশঙ্কা, পরপর হারের পর দেশের ক্রিকেট মহলে যা চলছে, যে ভাবে পাক ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে দলবাজি ও ইচ্ছে করে খারাপ ব্যাটিং করে আফ্রিদিকে ডোবানোর অভিযোগ উঠছে, তাতে এ দিন কয়েকজন নেটে না আসা নিয়েও না বিতর্ক শুরু হয়ে যায়।

পাক ক্রিকেটাররা যে বেশ চাপে, তা তাঁদের গম্ভীর মুখ দেখেই বোঝা গেল এ দিন। যে শার্জিল গত রাতে দলের হার সত্ত্বেও ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছেন, তিনিও বেশ গম্ভীর। দুপুরে নেট শুরুর আগে বললেন, ‘‘কাল যখন শেষ পর্যন্ত হেরে গেলাম, তখন এত আফসোস হচ্ছিল, কী বলব। খুব দুর্ভাগ্যজনক। অত ভাল শুরু করেও শেষ পর্যন্ত হারতে হল আমাদের।’’

মোহালির উইকেটে যে ব্যাট করতে অসুবিধা হয়নি তাঁর, তাও জানান শার্জিল। বললেন, ‘‘শুরু থেকেই বল ব্যাটে ভাল আসছিল। তাই পাওয়ার প্লে-তে দ্রুত রান তুলব ঠিক করে নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম।’’ পাকিস্তান সুপার লিগের নক আউট ম্যাচে ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের হয়ে নেমে ৬২ বলে ১১৭-র ইনিংস খেলেছিলেন শার্জিল। এশিয়া কাপে ও চলতি বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলোতে ভাল শুরু করেও আউট হয়ে যাচ্ছিলেন। ‘‘কাল ছন্দটা পেয়ে গিয়েছিলাম’’, বলেন শার্জিল, ‘‘টি-টোয়েন্টিতে ছন্দটাই আসল কথা।’’

এমন পারফরম্যান্সের পরও দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের কেউ কেউ নাকি বলতে শুরু করে দিয়েছেন, ম্যাচটা জিতিয়ে মাঠ ছাড়া উচিত ছিল শার্জিলের। নিজের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের মতোই তাঁদের পাল্টা দিয়ে শার্জিল বললেন, ‘‘তাঁদের বোঝা উচিত, ওপেনারের কাজ জয়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেওয়া, ফিনিশ করা নয়। আমি সেটাই করেছি। তবে এটা মেনে নিতে আপত্তি নেই যে আমার আরও দু-চার ওভার ব্যাট করে দলকে আরও কিছুটা এগিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। তা হলে আমাদের পরের ব্যাটসম্যানদের উপর চাপটা আরও কম থাকত।’’

শার্জিল যখন আউট হন, তখন পাকিস্তানের সামনে ৮৭ বলে ১১৫ রান তোলার চ্যালেঞ্জ ছিল। হাতে ন’উইকেট। কিন্তু বাকি ব্যাটসম্যানরা তা পারেননি। শাহিদ আফ্রিদিও ছয় মারতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। শেষ দশ ওভারে আফ্রিদি ছাড়া আর কোনও ব্যাটসম্যানই বাউন্ডারির বাইরে বল পাঠাতে পারেননি। এর কারণ জানতে চাইলে ম্যাচের পর কোচ ওয়াকার ইউনিস বলেন, ‘‘জানি না কেন এমন হল। এটা নিয়ে বসতে হবে। এর কারণ খুঁজে বার করতে হবে।’’ এটা ইচ্ছাকৃতই করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তাঁদের দেশে। যা নিয়ে শার্জিল অবশ্য কোনও বিতর্কে না গিয়ে বলছেন, ‘‘সবাই চেষ্টা করেছে। কিন্তু ক্লিক না করলে কী করা যাবে?’’

আপাতত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে থাকাটাই লক্ষ্য পাকিস্তানিদের। শার্জিল বললেন, ‘‘আশা শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের রান রেট ভারত, অস্ট্রেলিয়ার থেকে ভাল। তাই শেষ ম্যাচটা জিতলে সেমিফাইনালে যেতেও পারি। এখানে একটা ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে। তাই চেনা পরিবেশে পরের ম্যাচটা আশা করি আরও ভাল খেলব আমরা।’’

ম্যাচ কোটলাতেই

নিজস্ব প্রতিবেদন, ২৩ মার্চ: ধোঁয়াশা কাটিয়ে সেমিফাইনাল করার জন্য সবুজ সঙ্কেত পেল ফিরোজ শাহ কোটলা। গ্যালারির আর পি মেহরা ব্লক নিয়ে সমস্যায় ক্লিয়ারেন্স পাচ্ছিল না ডিডিসিএ। কিন্তু মুকুল মুদগলের সঙ্গে ডিডিসিএ কর্তাদের আলোচনার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আর পি মেহরা ব্লকে দর্শকরা বসতে পারবেন। শুধু মাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালই নয়। কোটলায় আইপিএল ম্যাচ করা নিয়েও কোনও সমস্যা হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন