‘লজ্জিত’ সাউথ ক্লাব নিন্দায় মুখর

সারদা-কাণ্ডে ইস্টবেঙ্গল আর সাউথ ক্লাবে যতটা মিল, অমিলও যেন ততটাই! লাল-হলুদের অন্যতম শীর্ষকর্তার মতোই মঙ্গলবার থেকে সিবিআইয়ের হেফাজতে সাউথ ক্লাব প্রেসিডেন্ট, প্রাক্তন আইপিএস রজত মজুমদার। কিন্তু দেবব্রত সরকার গ্রেফতার হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল সচিব-সহ ক্লাবের অনেক কর্তা তাঁর পক্ষে যেমন বিবৃতি দিয়েছিলেন, এ দিন সাউথ ক্লাবে গিয়ে দেখা গেল, ঠিক তার বিপরীত দৃশ্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৫
Share:

নিন্দিত রজত

সারদা-কাণ্ডে ইস্টবেঙ্গল আর সাউথ ক্লাবে যতটা মিল, অমিলও যেন ততটাই!

Advertisement

লাল-হলুদের অন্যতম শীর্ষকর্তার মতোই মঙ্গলবার থেকে সিবিআইয়ের হেফাজতে সাউথ ক্লাব প্রেসিডেন্ট, প্রাক্তন আইপিএস রজত মজুমদার। কিন্তু দেবব্রত সরকার গ্রেফতার হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গল সচিব-সহ ক্লাবের অনেক কর্তা তাঁর পক্ষে যেমন বিবৃতি দিয়েছিলেন, এ দিন সাউথ ক্লাবে গিয়ে দেখা গেল, ঠিক তার বিপরীত দৃশ্য। ভারত তথা এশিয়ার অন্যতম পুরনো ও মর্যাদামণ্ডিত টেনিস ক্লাবে বেশির ভাগ সদস্য যেন ধরে নিয়েছিলেন, সারদা-কেলেঙ্কারিতে ক্লাব প্রেসিডেন্টের ভাগ্যে শেষমেশ এমনটাই কিছু অপেক্ষা করছিল।

দিলীপ বসু থেকে লিয়েন্ডার পেজ, জয়দীপ মুখোপাধ্যায় থেকে জিশান আলি, নরেশ কুমার থেকে ফজলউদ্দিন দেশকে ঝাঁকে-ঝাঁকে ডেভিসকাপার দেওয়া সাউথ ক্লাব জুড়ে এ দিন থমথমে ভাব। চাপা লজ্জা আর অনুশোচনা। ক্লাবের গরিষ্ঠ অংশ একমত, সিবিআই জেরার পরেই রজতবাবু নৈতিকতার প্রশ্নে সাউথ ক্লাবের সর্বোচ্চ পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ালে ঐতিহ্যশালী টেনিস ক্লাবের সম্মান বাঁচত। ক্লাবের সচিব সতীনাথ বসু ব্যক্তিগত কাজে এ দিন কাকদ্বীপ ছিলেন। মোবাইলে বললেন, “খুব খারাপ লাগছে, সাউথ ক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদাধিকারী গ্রেফতার হয়ে হাজতে রয়েছেন। আমি সাউথ ক্লাবের সাঁইত্রিশ বছরের পুরনো মেম্বার। এত দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এই ক্লাবকে কেবল গরিমান্বিত হতেই দেখেছি। কী আর বলব! আইন আইনের পথেই চলবে।”

Advertisement

সাউথ ক্লাবে যাঁর প্রায় নিত্যদিন যাতায়াত, সেই চুনী গোস্বামী বলে দিলেন, “ক্রাইম ডাজ নট পে! অপরাধীর নিষ্কৃতি নেই।” রজতবাবুর আগেই সাউথ ক্লাবের শেষ প্রেসিডেন্ট, বিখ্যাত টেনিস তারকা জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বললেন, “আমি আগেই দাবি জানিয়েছিলাম, সারদা-ইস্যুতে ওঁর নাম জড়ানোর পরেই ওনার উচিত ছিল, নৈতিক কারণে সাউথ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ানো। আজকের দিনটা সাউথ ক্লাবের সবচেয়ে লজ্জার দিন।”

বেঙ্গালুরুতে ডেভিস কাপ দেখতে যাওয়া আখতার আলি মোবাইলে বললেন, “অনেক বড় বড় কথা বলেছিল রজত। আজ সাউথ ক্লাবকে লজ্জিত করল ও।” এ দিন ‘এবিপি আনন্দ’-এ প্রাক্তন নগরপাল, সাউথ ক্লাবের অন্যতম সদস্য তুষার তালুকদার বলেছেন, “ভাবতে লজ্জা করছে, রজত যে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, সেই ক্লাবের এক সময় আমিও প্রেসিডেন্ট ছিলাম।”

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সাউথ ক্লাবে প্রেসিডেন্ট পদের ভবিষ্যৎ কী? ক্লাব সচিব জানাচ্ছেন, সাউথ ক্লাবের গঠনতন্ত্রেই আছে, প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট সমস্ত কার্যভার বহন করবে। সেই মতো ভাইস প্রেসিডেন্ট এনরিকো পির্পানো এখন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু তাৎপর্য অন্য জায়গায়।

সাউথ ক্লাবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর নির্বাচন। ১২ তারিখ পর্যন্ত মনোনয়ন পেশ করা যাবে। এবং ক্লাব সূত্রের খবর, রজত মজুমদার পরের বারও প্রেসিডেন্ট হওয়ার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই নাকি মনোনয়ন পেশ করে রেখেছেন। যা নিয়ে সাউথ ক্লাবের অন্দরমহলে প্রবল বিস্ময়! এমনিতে পিপার্নোর পরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জয়দীপ মুখোপাধ্যায় নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন না। তবে তিনি নিজে না দাঁড়ান, জয়দীপ-গোষ্ঠী ফের সাউথ ক্লাবে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে বলে কিন্তু ক্লাবের অন্দরে শোনা যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন