hockey

Tokyo Olympics 2020: মদ্যপ বাবার হাত থেকে বাঁচতে হকির নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা নেহা এ বার অলিম্পিক্সে

ছোট একটা ঘর। ১০ পা হাঁটলে দেওয়ালে ধাক্কা খেতে হয়। প্রশিক্ষককে বাড়িতে ডাকতেও লজ্জা পেত নেহা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২১ ১৮:৪৪
Share:

অলিম্পিক্সের যে হকি দল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে রয়েছেন নেহা। —ফাইল চিত্র

ভয়ঙ্কর স্মৃতি মুছে গয়াল পরিবারে খুশির ছোঁয়া। ভারতের মহিলা হকি দলের হয়ে অলিম্পিক্সে খেলতে যাচ্ছেন নেহা গয়াল। ছোটবেলার স্মৃতি জিজ্ঞেস করতে বলেন, “মত্ত অবস্থায় বাবার বাড়ি ফেরা এবং বেহুঁশ হয়ে যাওয়া। কোনও কাজ ছিল না তার।”

Advertisement

হরিয়ানার গয়াল পরিবারে এক মাত্র উপার্জনকারী ছিলেন নেহার মা সাবিত্রী দেবী। পরিচারিকার কাজ করে, সাইকেল কোম্পানিতে কাজ করে, মাসে আয় হত ২ হাজার টাকা। তাতেই চলত সংসার। হকি স্টিক, জুতো তো অনেক দূর, ঠিক মতো খাওয়াই জুটত না তাঁদের।

সাবিত্রী দেবী বুঝেছিলেন মেয়েকে মানুষ করতে হলে ঘরে রাখা নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, “মত্ত অবস্থায় হিংস্র হয়ে উঠত আমার স্বামী। ও বাড়ি এলেই নেহা চোখ বন্ধ করে, কান ঢেকে আমার পিছনে লুকিয়ে পড়ত। এই ভাবে বাঁচা যায় না। হকির মাঠই নিরাপদ ছিল।” হরিয়ানায় একটি হকি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করে দিলেন তিন মেয়ের মধ্যে সব থেকে ছোট নেহাকে।

Advertisement

সেই শুরু নেহার দৌড়। অলিম্পিক্সের যে হকি দল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে রয়েছেন নেহা। ২৪ বছরের এই মিডফিল্ডারের যেন স্বপ্ন সত্যি হল। নেহার এই চলার পথে উঠে আসছে অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রীতম সিওয়াচের নাম। তাঁর হকি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেই নেহাকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন সাবিত্রী দেবী। তিনি বলেন, “ওর কোচ বলেছে বড় সুযোগ পেয়েছে মেয়ে। আমি ওকে বিশ্বাস করি।”

প্রীতম বলেন, “১১ বছর বয়সে প্রথম দেখি নেহাকে। মাঠের ধারে ঘোরাফেরা করছিল। খুব একটা কথা বলত না। একদিন লাফানো দড়ি দিয়ে বললাম লাফাও। কী প্রচণ্ড মনোবল! মনে হল এর হকি শেখা উচিত।” নেহার বাড়ি গিয়ে রাজি করান প্রীতম। কথা দিয়েছিলেন ২ বেলা খেতে দেবেন।

ছোট একটা ঘর। ১০ পা হাঁটলে দেওয়ালে ধাক্কা খেতে হয়। প্রশিক্ষককে বাড়িতে ডাকতেও লজ্জা পেত নেহা। কিছু বছর আগে বাবাকে হারিয়েছেন তিনি। মাকে সাহায্য করতে শুরু করেন সদ্য অলিম্পিক্স দলে সুযোগ পাওয়া নেহা।

নেহার খাওয়া দাওয়া, যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসের দায়িত্ব নেন প্রীতম। তিনি বলেন, “রাজ্য স্তরে একটা খেলায় প্রথমার্ধে কিছুতেই দৌড়চ্ছিল না নেহা। কারণ জিজ্ঞেস করতে বাঁ পায়ের জুতোটা খুলে দেখাল। তাতে বিশাল গর্ত।” সঙ্গে সঙ্গে প্রীতমের স্বামী কুলদীপ ছুটে যান পাশের জুতোর দোকানে। নতুন জুতো পায়ে দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নামেন নেহা। তাঁর জোড়া গোলে জয় পায় দল।

গতি এবং গোলের খিদে নেহাকে এগিয়ে রাখে বাকিদের থেকে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ আসে। ইতিমধ্যেই দেশের হয়ে ৫৩টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তিনি। দায়িত্ব বেড়েছে। এখন আর শুধু সংসার নয়, যে অ্যাকাদেমি তাঁকে বড় করেছে সেখানেও আর্থিক সাহায্য করেন তিনি। নিজের হকি স্টিক, জুতো দিয়ে দেন সেখানকার শিক্ষার্থীদের। এখনকার বাড়িতে আর দশ পা হাঁটলে দেওয়ালে ধাক্কা খেতে হয় না। মাকে নিয়ে উঁচু বাড়িতে উঠে এসেছেন নেহা। পা যদিও মাটিতেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন