সর্দাররা কিন্তু আমাদের ভুলটা করেনি

নিজের একচল্লিশ বছরের পুরনো ভুলের প্রায়শ্চিত্ত যেন হল! আর্জেন্তিনাকে হারিয়ে সর্দারদের রিও অলিম্পিক্সে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার দিকে অনেকটা এগিয়ে যেতে দেখে আমার প্রথম অনুভূতি এটাই।

Advertisement

অশোক কুমার ধ্যানচাঁদ

ভোপাল শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৩৭
Share:

ভারত-২ : আর্জেন্তিনা-১
(চিঙ্গলেনসানা, কোঠাজিৎ,) (গঞ্জালো)

Advertisement

নিজের একচল্লিশ বছরের পুরনো ভুলের প্রায়শ্চিত্ত যেন হল! আর্জেন্তিনাকে হারিয়ে সর্দারদের রিও অলিম্পিক্সে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার দিকে অনেকটা এগিয়ে যেতে দেখে আমার প্রথম অনুভূতি এটাই।

পঁচাত্তরে আমরা বিশ্বকাপ জিতলেও গ্রুপে আর্জেন্তিনার কাছে হেরেছিলাম। এত বছর বাদেও যার কারণ ভাবলে আমার একটা কথাই মনে হয়— অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। সত্যি বলতে, আর্জেন্তিনাকে হকি খেলতে শিখিয়েইছে ভারত। তিয়াত্তরের বিশ্বকাপ খেলে আমরা পনেরো দিনের আর্জেন্তিনা ট্যুরে গিয়েছিলাম। বোকা জুনিয়র্সের অ্যাকাডেমিতে তোলা হয়েছিল আমাদের। আর বিখ্যাত ফুটবল ক্লাবের মাঠে আর্জেন্তিনা হকি দলকে প্রত্যেক ম্যাচে পাঁচ-ছয় গোলে হারিয়েছিলাম। ওরা সেই সিরিজের পুরো ফিল্ম তুলে রাখে। যে ভিডিও দেখে-দেখে আমাদের খেলা এতটাই কাটাছেঁড়া করেছিল যে, পরের বিশ্বকাপে আমাদের হারিয়ে দেয়। বিশেষ করে আমার খেলার। সেই ট্যুরে আর্জেন্তিনা মিডিয়া আমার নাম দিয়েছিল অশোক কুমার পিওলিন। পরে জেনেছিলাম, ম্যাজিশিয়ান-কে স্প্যানিশে বলে পিওলিন। পঁচাত্তরের বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ান কোচ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে আমাকে কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলে নেন। তখন তো আর এখনকার মতো রোটেশন নিয়ম ছিল না! একবার কাউকে তুলে নিলে তাকে আবার নামানো যেত না। ম্যাচে মাত্র দু’জন প্লেয়ার পাল্টানো যেত। তো আমাকে আচমকা তুলে নিতে গোটা দল কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ে হেরে যায়। যেটাকে আমি এত বছর ধরে নিজের হার বলে ভেবে এসেছি। মঙ্গলবার আমার যেন সেই যন্ত্রণা কমল!

Advertisement

এই ছেলেরা আমাদের মতো ভুল করেনি। নইলে কিন্তু গত মাসেই ভ্যালেন্সিয়ায় ছয় দেশের টুর্নামেন্টে ১-৩ পিছিয়ে পড়েও শেষ পনেরো মিনিটে আর্জেন্তিনাকে দু’গোল দিয়ে ভারত ম্যাচ ড্র রেখেছিল। তার পরে তো অলিম্পিক্সে এ দিন সর্দারদের বাড়তি আত্মবিশ্বাসী থাকার কথা। কিন্তু দেখে খুব ভাল লাগল যে, ছেলেদের পা বাস্তবের মাটিতে ছিল।

এ দিন ছেলেরা গোলকিপিং থেকে ডিফেন্স, মি়ডফিল্ড, ফরোয়ার্ড লাইন— সবেতে জমাট খেলেছে। যেমন সৃজেশ শেষ কোয়ার্টারে একটা গোল খেলেও গোটা তিনেক ভাল সেভ করেছে। দরকারের সময় সর্দাররা ডিপ ডিফেন্স করেছে খুব ভাল। চিঙ্গলেনসানা পেনাল্টি কর্নার স্পেশ্যালিস্ট না হওয়া সত্ত্বেও প্রথম গোলের সময় দারুণ ড্র্যাগ ফ্লিকটা মেরেছে। আবার টুর্নামেন্টে এ দিনই ভারত প্রথম ফিল্ড গোল করেছে। ফরোয়ার্ডে রামনদীপ, নীতিনদের ব্যর্থতা ঢেকে দিল কোঠাজিৎ।

অবশ্য দ্বিতীয় কোয়ার্টারেই দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ায় ভারতের জয় যতটা সহজ হবে মনে হচ্ছিল হাফটাইমে, ততটা সহজে আসেনি। এর জন্য দায়ী করব আমাদের কমজোরি ফরোয়ার্ড লাইনকে। সুনীল ছাড়া অ্যাটাকে কাউকে ভাল লাগল না। একমাত্র ওরই বল কন্ট্রোল, ড্রিবল, স্পিড, বিপক্ষের ডিফেন্ডারকে পিছনে রেখে দিতে পারার ক্ষমতা বিশ্বমানের। নইলে রোল্যান্ট অল্টমান্স যে ভাবে পনেরো-ষোলোটা ছেলের মধ্যে একটা সুন্দর তালমিল তৈরি করতে পেরেছে, তার সঙ্গে যদি একটা সত্যিকারের ভাল সেন্টার ফরোয়ার্ড থাকত, এখনই বলে দিতে পারতাম, এই ভারতের উপর পদকের বাজি ধরলাম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন