বিশ্বজয়ের মধুচন্দ্রিমায় সুর নরম ক্যারিবিয়ান বোর্ডের

মা তোমার জন্য, বলছেন ব্র্যাভো

ক্রিস গেইল বড়ই বিমর্ষ। কাপ জিতলেন, তবু। আসলে পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চার বছর পর, সহ্য হয় নাকি? তাঁর কাপটা আরও একবার, এখুনি চাই! ডোয়েন ব্র্যাভো বিশ্বজয়ের মেডেলটা উৎসর্গ করছেন মা-কে। বলছেন, ‘‘মামি দিস ইজ ফর ইউ। তোমার জন্মদিনে এটাকে তোমাকে ডিজে ব্রাভোর উপহার।’’ বিশ্বজয়ী দুই ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি আর স্টেফনি টেলর কাপ হাতে ফোটোশ্যুট করছেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

মাদার হাউসে ক্যারিবিয়ান টিম-ম্যানেজার। ছবি: টুইটার

ক্রিস গেইল বড়ই বিমর্ষ। কাপ জিতলেন, তবু। আসলে পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চার বছর পর, সহ্য হয় নাকি? তাঁর কাপটা আরও একবার, এখুনি চাই!

Advertisement

ডোয়েন ব্র্যাভো বিশ্বজয়ের মেডেলটা উৎসর্গ করছেন মা-কে। বলছেন, ‘‘মামি দিস ইজ ফর ইউ। তোমার জন্মদিনে এটাকে তোমাকে ডিজে ব্রাভোর উপহার।’’

বিশ্বজয়ী দুই ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি আর স্টেফনি টেলর কাপ হাতে ফোটোশ্যুট করছেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে। টিম ম্যানেজার রল লুইস চলে যাচ্ছেন মাদার টেরিজা হাউসে। টিমের পক্ষ থেকে দিয়ে আসছেন অনুদান।

Advertisement

ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট বোর্ড ক্ষমা চাইছে গোটা ক্রিকেটবিশ্বের কাছে। ক্ষমা প্রার্থনা করছে, জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ডারেন স্যামির বোর্ড নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য। বিবৃতি পাঠিয়ে বলছে, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড প্রেসিডেন্ট সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইছেন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্যামির অনর্থক মন্তব্যের জন্য। যে মন্তব্যের কোনও প্রয়োজন ছিল না।’’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বজয়ের পরের চব্বিশ ঘণ্টা। রাত থেকে সকাল, সকাল থেকে বিকেল। সোমবার বিকেলে ভারত ছেড়ে দেশের ফ্লাইট ধরল টিম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুধু কলকাতা কেন, কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া কাঁপিয়ে। উৎসবের আবির খেলে। মুর্হুমুহু চ্যাম্পিয়ন্স ডান্স। গোটা রাত পার্টি করে ডারেন স্যামির গলা ভেঙে ফেলা। আইসিসি-র উদ্দশ্যে গেইলের টুইট, ‘ওহে, আইসিসি বিশ্বকাপ আবার চার বছর পর কেন? আমার তো এখুনি আর একটা চাই।’’ কিছু বাদ গেল না।

সোমবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে গিয়ে আরও একপ্রস্থ তর্জন-গর্জন করে গেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। বললেন, তাঁরা ভারতে এসেছিলেন কাপটা তুলে নিয়ে যেতে। নিয়ে যাচ্ছেন। ‘‘প্রমাণ করে দিলাম, ক্রিকেটে এখন কোন টিম সেরা। সীমিত ওভারে আমরা এমনিই তুখোড়। আরও একটা কথা বলব। বলব যে, কোথা থেকে বিশ্বজয়ের বিশ্বাস আমরা পেয়েছিলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব উনিশ টিম, তোমাদের ধন্যবাদ। তোমরা দেখিয়েছ, প্রতিকুলতার সঙ্গে লড়েও কী ভাবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়,’’ বলে গেলেন স্যামি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক দেশের বোর্ডকে এ দিন আর টার্গেট করেননি। বলে যান যে, যা বলার বলে দিয়েছেন। আর নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু ডোয়েন ব্র্যাভো তো ঢুকে পড়লেন। স্যামির পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে বলে দিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড যত না তাঁদের দেখভাল করে, তার চেয়ে অনেক বেশি করে বিসিসিআই! এবং স্যামি-ব্র্যাভোদের পরপর বিস্ফোরণে হোক বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের প্রতি দেশজ বোর্ডের বৈমাত্রেয় আচরণে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার পাল্লায় পড়েই হোক, রাতের দিকে কিছুটা হলেও সুর নরম করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড। সকাল পর্যন্তও যারা নাটকীয় ভাবে বলে যাচ্ছিল, স্যামির অপ্রোয়জনীয় মন্তব্যের জন্য তারা বিশ্বের সমর্থকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী!

আসলে সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের মতো ক্রিকেটব্যক্তিত্বও ঢুকে পড়েছিলেন এই বিতর্কে। টুইটে ব্যাটিং কিংবদন্তি লিখে ফেলেন, ‘মাঠ এবং মাঠের বাইরের চ্যালেঞ্জ সামলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওদের বোর্ডের উচিত প্লেয়ারদের পাশে দাঁড়ানো। প্লেয়ারদের অভিযোগ শোনা।’ যা বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ব্রাভোও ছাড়েননি। ততক্ষণে বলে দিয়েছেন, ‘‘আমাদের দেশের বোর্ড ঠিকঠাক লোকের হাতে নেই। এখনও আমরা বোর্ড থেকে একটাও ফোন পাইনি। এটা কি ঠিক? আসলে ওরা ভাবতে পারেনি আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারব। কোনও বিশ্বাস রাখেনি আমাদের উপর। পুরোটাই ছিল বোর্ড বনাম আমরা। আমি তো বলব, ওদের থেকে ভারতীয় বোর্ড আমাদের জন্য বেশি করে!’’ প্রশ্ন তোলেন, কোন যুক্তিতে তিনি এর পরেও ওয়ান ডে টিমে থাকবেন না? কোন যুক্তিতে গেইল-রাসেলরা থাকবেন না? ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ খেলবে তখন কেন তাঁদের ইংল্যান্ডে পড়ে থাকতে হবে? ন্যাটওয়েস্ট ব্লাস্ট খেলতে হবে? ‘‘আমাদের তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি গায়ে তখন থাকা উচিত। তাই না?’’

রাতের দিকে ক্যারিবিয়ান বোর্ড প্রেসিডেন্ট ডেভ ক্যামেরন বললেন যে, তাঁরা প্লেয়ারদের সঙ্গে বসতে চান। রফাসূত্র বার করতে চান। ‘‘আমরা চাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা টিমটা সব সময় খেলুক। চেষ্টা করব, কোনও সমাধান বার করা যায় কি না,’’ বলেছেন ক্যামেরন। সুর নরম। কিন্তু স্টান্স এখনও স্পষ্ট নয়। স্পষ্ট নয়, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েও ওয়ান ডে টিমে গেইল-ব্র্যাভোরা ঢুকতে পারবেন কি না।

পারলে বিশ্বজয়ের মতো না হলেও মাহাত্ম্যে ওটাও কিছু কম হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন