Serena Williams Weight Loss

ছ’মাসে ১৪ কেজি মেদ ঝরিয়ে সেরিনা এখন ৭০ কেজি! কী ভাবে ওজন কমালেন ২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন

ছ’মাসে ১৪ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন সেরিনা উইলিয়ামস। ওজন কমাতে তাঁকে সাহায্য করেছে এক বিশেষ ধরনের ওষুধ। নেপথ্য কাহিনি জানিয়েছেন ২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৫ ১৭:১৩
Share:

সেরিনার বদল। (বাঁ দিকে) ২০২২ সালে ইউএস ওপেনে অবসরের মুহূর্তে। ২০২৫ সালে তোলা সেরিনার নিজস্বী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

এ কোন সেরিনা উইলিয়ামস? জিমে ঘাম ঝরানোর পর আয়নার সামনে তোলা তাঁর নিজস্বী প্রকাশ্যে আসতেই প্রশ্ন তুলেছিলেন টেনিসপ্রেমীরা। শরীরে মেদের লেশমাত্র নেই। অ্যাবস্‌ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। হাত, পায়ের মেদও চোখে পড়ছে না। অনেকে যুক্তি দিয়েছিলেন, নিশ্চয় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সেরিনা। কেউ আবার বলেছিলেন, শর্টকাটে ওজন কমাতে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে। সেই সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন সেরিনা। স্পষ্ট করে দিয়েছেন, শর্টকাট নয়, প্রচুর পরিশ্রমের পরেই পছন্দমতো শরীর পেয়েছেন তিনি। তবে তার নেপথ্যে এক বিশেষ ধরনের ওষুধ রয়েছে।

Advertisement

খেলোয়াড় জীবনে একের পর এক গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেও কোনও সময়ই ছিপছিপে ছিলেন না তিনি। তাতে অবশ্য লম্বা র‌্যালি খেলতে সমস্যা হত না তাঁর। উল্টে তাঁর শটের অভিঘাত সামলাতে হিমশিম খেতেন প্রতিপক্ষ। তাঁর পাওয়ার টেনিসের সামনে অসহায় বোধ করতেন বিশ্বের তাবড় তাবড় টেনিস তারকা। সেই সেরিনা অবসর নেওয়ার পর বদলে গিয়েছেন। গত ছ’মাসে ১৪ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন ২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিন। এক ধাক্কায় ৮৪ থেকে ৭০ কেজিতে নেমেছেন তিনি। সেরিনা জানিয়েছেন, এখন শারীরিক ও মানসিক ভাবে নিজের অনেক হালকা মনে হচ্ছে তাঁর।

২০১৭ সালে সেরিনার প্রথম কন্যাসন্তান অ্যালেক্সিস অলিম্পিয়ার জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর মোটা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মেদ ঝরিয়ে আবার কোর্টে ফেরেন। ২০২২ সালের ইউএস ওপেন খেলে অবসর নেন সেরিনা। ২০২৩ সালে তাঁর দ্বিতীয় কন্যাসন্তান আদিরা রিভার জন্ম হয়। তার পরও সেই এক ছবি। আবার মোটা হয়ে যান সেরিনা। তবে এ বার সমস্যা হচ্ছিল। কোনও ভাবেই রোগা হতে পারছিলেন না। সেই সময়ের কথা জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

‘টুডে’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ওজন কমানোর বিবরণ দিয়েছেন সেরিনা। তিনি বলেন, “আমি কিছুতেই পছন্দের শরীর পাচ্ছিলাম না। ওজন কিছুতেই কমছিল না। প্রচুর পরিশ্রম করছিলাম। পাগল পাগল লাগছিল। জীবনে কোনও দিন এমন হয়নি যে পছন্দের ওজনে ফিরতে পারছিলাম না।” তার পরেও শর্টকাট নেওয়ার কথা ভাবেননি সেরিনা। পরিশ্রম করেই ওজন কমাতে চেয়েছিলেন তিনি। সেরিনা বলেন, “আমি জীবনে কোনও দিন শর্টকাট নিইনি। পরিশ্রম করেছি। আমি জানি, কী ভাবে ওজন কমাতে হয়। কিন্তু সেটাই করতে পারছিলাম না। তাই হতাশ হয়ে পড়ছিলাম।”

ঠিক তখনই ‘জ়েপবাউন্ড’ নামের এক ওষুধের কথা জানতে পারেন সেরিনা। এই ওষুধ ওজন কমাতে সাহায্য করে। ‘ভোগ’ জানিয়েছে, ‘জ়েপবাউন্ড’ এক ধরনের জিএলপি-১ ড্রাগ। এটা এক ধরনের হরমোন যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এই ওষুধ ওজন কমাতেও সাহায্য করে। সেরিনার ছিপছিপে শরীর সামনে আসতেই অনেকে দাবি করেছিলেন, ‘ওজ়েমপিক’ নামের এক ওষুধ খাচ্ছেন সেরিনা। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন মহিলাদের প্রাক্তন বিশ্বসেরা টেনিস খেলোয়াড়।

‘আরও’ নামের এক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন সেরিনা। এখন তিনি সেই সংস্থার মুখপাত্রের কাজ করছেন। সেরিনার স্বামী তথা ‘রেডিট’-এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেক্সিস ওহানিয়নের বিনিয়োগ রয়েছে সেই সংস্থায়। সেই সংস্থা সেরিনাকে পরামর্শ দেয়, কী ভাবে সেই ওষুধ খেতে হবে। সেরিনা জানিয়েছেন, তিনি সারা দিন যে রুটিন মেনে চলেন, তাকেই আরও ফলপ্রসূ করেছে ‘জ়েপবাউন্ড’।

সেরিনা কোনও দিনই তাঁর শারীরিক গঠন নিয়ে ভাবেননি। খেলোয়াড় জীবনেও রোগা হওয়ার চেষ্টা করেননি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও চাপে পড়ে রোগা হওয়ার কথা ভাবেননি তিনি। তা হলে কেন ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেন? সেরিনা বলেন, “আমি কোনও দিন ভাবিনি যে আমাকে অন্য কারও মতো শারীরিক গঠন করতে হবে। শরীর নিয়ে আমার কোনও সমস্যা ছিল না। ওজন বেশি থাকলেও আমার চলতে ফিরতে সমস্যা হত না। কিন্তু আদিরার জন্মের পর সমস্যা শুরু হল। হাত, পায়ের গাঁটে ব্যথা হত। অল্পে হাঁপিয়ে উঠছিলাম। তাই ঠিক করি ওজন কমাবো।”

সম্প্রতি বিকিনি পরে প্রমোদতরীর উপরে দেখা গিয়েছে সেরিনা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন তিনি। সব জায়গায় সকলে তাঁর পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন। অবশ্য তার মধ্যেই অনেকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি। তাঁকে ‘অপুষ্টির শিকার’ বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে। সেই কটাক্ষের জবাব অবশ্য সেরিনাকে দিতে হয়নি। তাঁর অনুরাগীরাই জবাব দিয়েছেন। সেরিনাকে এ ভাবেই এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

পরের মাসে ৪৪ বছর বয়স হবে সেরিনার। যে বয়সে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো ফিট ক্রিকেটারকেও হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করাতে হচ্ছে, সেই বয়সে এক ওষুধ খেয়েই নিজেকে ছিপছিপে করে ফেলছেন সেরিনা। ২৭ বছরের পেশাদার টেনিস কেরিয়ারে ৭৩টা ট্রফি জিতেছেন সেরিনা। তার মধ্যে ২৩টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম। গোল্ডেন স্ল্যামের কীর্তি রয়েছে তাঁর। টানা ৩১৯ মাস মহিলাদের এক নম্বর তারকা থেকেছেন। কোর্টে শুধুমাত্র পাওয়ার টেনিস খেলে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতেন সেরিনা। পয়েন্ট জেতার পর তাঁর হুঙ্কারে ভয় পেতেন প্রতিপক্ষ। এখনও সব সমালোচনা উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। অবসরের পর সেরিনা ২.০-কে দেখতে পাচ্ছে টেনিসদুনিয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement