যন্ত্রণা: মুহূর্তের ভুলে আউট। মেনে নিতে পারছেন না হতাশ কোহালি। ফিরলেন ৯৭ রানে। শনিবার। ছবি: এএফপি।
জো রুটই ফের টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তই নেওয়ার পরে মনে হচ্ছিল ট্রেন্টব্রিজেও আবার লর্ডস টেস্টের পুনরাবৃত্তি হবে না তো?
তা হতে দিলেন না বিরাট কোহালি ও অজিঙ্ক রাহানে। তাঁদের দেড়শোর বেশি রানের পার্টনারশিপই ভারতকে লড়াইয়ের জায়গায় এনে দেয়। মাঝের সেশনটাতে ভারতকে একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন এই দু’জন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে শেষ সেশনে দু’জনেই প্রায় একই ভাবে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। রাহানে ৮১ রানে ও কোহালি যখন সেঞ্চুরি থেকে মাত্র তিন রান দূরে।
লাঞ্চের মধ্যে তিনটি উইকেট পড়ে যাওয়ায় যখন ভাবছিলাম, আর কতই বা রান হবে? তখনই ব্যাট হাতে রুখে দাঁড়ান অধিনায়ক ও সহ অধিনায়ক।
কোহালির চোট নিয়ে আশঙ্কিত ছিলাম। পিঠের ব্যথা নিয়ে ভাল ব্যাটিং বা বড় ইনিংস, কোনওটাই সহজ নয়। কিন্তু প্রথম বল থেকেই তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। লাঞ্চের পর জিমি অ্যান্ডারসনকে যে অসাধারণ কভার ড্রাইভটা মারেন তিনি, সেটাই দিনের সেরা শট।
ইনিংসটা সুন্দর সাজান বিরাট। একাধিক গ্লান্স করেন। তিনি স্বাভাবিক ভাবে ফ্রন্ট ফুটের ব্যাটসম্যান হলেও ব্যাকফুটে কিন্তু অসাধারণ খেলেছেন। কিন্তু সেঞ্চুরির মুখে আদিল রশিদের অফ স্টাম্পের বাইরে একটা ‘ফ্রেন্ডলি বল’-এ আউট হয়ে যান। লোভনীয় একটা হাফ ভলি দিয়েছিলেন রশিদ, শরীরের বাইরে। এর আগে সমানে এ রকম বল ছেড়ে দিলেও শেষে এই বলটার লোভ সামলাতে পারেননি কোহালি। তখন রশিদকে জো রুট বল দেয় দ্রুত নতুন বল নেওয়ার জন্য। কিন্তু সারা দিন ভাল বল না করেও আসল উইকেটটা নিয়ে নিলেন রশিদ।
কোহালি-রাহানেরা বাড়তি ঝুঁকি নেননি রান তোলার জন্য। এক রানকে দুই বা দুই রানকে তিন করার কোনও প্রবণতা দেখা যায়নি। রাহানে ক্রিস ওকসকে যে কাটটা করে পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে পঞ্চাশে পৌঁছলেন, সেটাও দুর্দান্ত। লাঞ্চের পর থেকে চায়ের বিরতি পর্যন্ত শুধুমাত্র শৃঙ্খলাবদ্ধ ব্যাটিং করে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যান দু’জন।
প্রায় এক বছর পরে টেস্টে রাহানের ব্যাটে একটা ভাল ইনিংস দেখা গেল। কিটন জেনিংসকে দ্বিতীয় স্লিপের জায়গা থেকে দু-তিন পা এগিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে সেই ফাঁদে পা দেননি রাহানে। ব্যাটের মাঝখান দিয়েই খেলে যান তিনি। কিন্তু কুকের অসাধারণ ক্যাচটাই ওঁকে ফিরিয়ে দিল। এ রকম ক্যাচ দেখে ময়দানি ভাষায় আমরা বলে থাকি ‘ক্যাচটাই ওকে ধরল’। এটা রাহানের দুর্ভাগ্য। লাঞ্চের পর থেকে উইকেটটাও কিছুটা সহজ হয়ে যায়। ‘অফ দ্য পিচ’ সিম প্রায় হয়ইনি। সুইংও করছিল না। আবহাওয়া শুকনো ও রোদঝলমলে। এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগান দু’জনেই।
এই উইকেটে ভারতকে চারশোর ওপর রান তুলতেই হবে। ঋষভ পন্থ অবশ্য ক্রিজে নেমেই আশা দেখিয়েছেন আদিল রশিদের গুগলিতে ছয় হাঁকিয়ে। প্রথম টেস্টে দ্বিতীয় বলেই ছয় হাঁকানোর সাহস কারও হয়েছে কি না, কে জানে? বাংলার ছেলেদের ক্ষেত্রে তো এমন সাহস ভাবাই যায় না।
রবিবার জিমি অ্যান্ডারসন ও তাঁদের নতুন বলের বিরুদ্ধে পন্থের লড়াইয়ের দিকেই এখন তাকিয়ে আছি। তিন পেসারের হাতে নতুন বল দেখে পন্থ ঘাবড়ে না গেলেই হল।