ব্যাট ধরলেই ১০০, বিরাট রেকর্ডে বঙ্গ শাসন

এক নম্বরের সঙ্গে ন’নম্বরের টেস্ট লড়াইয়ের প্রথম দিনটা যে রকম হওয়া উচিত তার চেয়ে একচুলও বেশি কিছু দেখা গেল না বৃহস্পতিবার উপ্পলে। তবে ভারত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক যুদ্ধ, যাঁকে বলা হচ্ছে, ‘ব্যাটল অব আনইকুয়ালস’, উপহার দিল কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত।

Advertisement

চেতন নারুলা

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৪
Share:

শতরানের পর কোহালি। ছবি: এএফপি।

এক নম্বরের সঙ্গে ন’নম্বরের টেস্ট লড়াইয়ের প্রথম দিনটা যে রকম হওয়া উচিত তার চেয়ে একচুলও বেশি কিছু দেখা গেল না বৃহস্পতিবার উপ্পলে। তবে ভারত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক যুদ্ধ, যাঁকে বলা হচ্ছে, ‘ব্যাটল অব আনইকুয়ালস’, উপহার দিল কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত।

Advertisement

জুটির দাপট

Advertisement

একটু বেশিই তাড়াহুড়ো করে ফেলার ফল ভুগলেন কেএল রাহুল। আউট হয়ে। কিন্তু তার পর দ্বিতীয় উইকেটে উপ্পল যে ব্যাটিং দেখল সেটা স্রেফ জুটির দাপট। মুরলী বিজয় আর চেতেশ্বর পূজারার। ১৭৮ রান উঠল যে পার্টনারশিপে। গোড়া থেকেই জুটিতে বড় রান করার রিংটোনটা ধরা পড়ছিল তাদের জমাট ব্যাটিংয়ে। যার সুবাদে এ বার ঘরের মাঠে টেস্টের মরসুমে পাঁচ নম্বর সেঞ্চুরি বা তাঁরও বেশি রানের পার্টনারশিপ হয়ে গেল দু’জনের মধ্যে। এক মরসুমে যেটা ভারতীয় কোনও জুটির দিক থেকে সর্বোচ্চ। তাঁদের জুটির রসায়নটা কোথায় আলাদা? পূজারা বলছিলেন, ‘‘আমাদের চরিত্রটা মোটামুটি এক। আমাদের চিন্তা-ভাবনা, খেলার স্টাইলও একই রকম। সেই জন্যই হয়তো মাঠে আমরা পার্টনারশিপটা এত উপভোগ করি।’’

আরও পড়ুন: জোড়া ঘটনায় অবাক বদল, বলে দিচ্ছে কোহালির শহর

একটা সুযোগ

সুযোগ আর বিপদ দুটোর কোনটা কখন আসবে কেউ জানে না। বাংলাদেশও একটা সুযোগ পেয়েছিল। বিজয় তখন ৩৫ রানে ব্যাট করছেন। মেহদি হাসান মিরাজের বলে ব্যাকফুট ফ্লিক করেন বিজয়। সঙ্গে সঙ্গে উর্ধ্বশ্বাসে রান নিতে দৌড়ন পূজারা। কিন্তু বিজয় প্রস্তুত ছিলেন না। দু’জনেই প্রায় এক এন্ডে। সহজ রান আউটের সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু কামরুল ইসলাম রাব্বির স্কোয়ার লেগে থেকে থ্রো মিরাজ ঠিকমতো ধরতে না পারায় বেঁচে যান বিজয়। বাংলাদেশ সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও হারায়। যেটা মনে পড়লেই নিশ্চয়ই হাত কামড়াবেন মুশফিকুর।

সেঞ্চুরি করলেন মুরলী বিজয়ও। ছবি: টুইটার।

অটোপাইলট

চা পানের বিরতির ঠিক ৩০ মিনিট আগে ক্রিজে এলেন। প্রথম তিন বলে দুটো বাউন্ডারি মেরে ইনিংস শুরু। দ্বিতীয়টা লং অফ বাউন্ডারিতে আছড়ে ফেলে। ঠিক যে মেজাজে তাঁকে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে ভারতীয় সমর্থককুল। বিরাট কোহালিকে। ৭০ বলে হাফসেঞ্চুরি। পরের পঞ্চাশ রান এল ৬০ বলে। কেরিয়ারের ১৬ নম্বর সেঞ্চুরি এল মিডউইকেট বাউন্ডারিতে সিগনেচার শটে। মনে হচ্ছিল বিরাটই খেলছেন, তবে অটোপাইলট মোডে। সেই ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’ মেজাজ, সেই সুর। উপ্পলের ইনিংসে বিরাট আবার টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে এক মরসুমে সর্বোচ্চ রানের নজির তো গড়লেনই (১০৭৫) সঙ্গে যত টেস্ট খেলিয়ে দেশের বিরুদ্ধে বিরাট খেলেছেন, সবার বিরুদ্ধেই সেঞ্চুরির নজির গড়ে ফেললেন (পাকিস্তান আর জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে বিরাট এখনও খেলেননি)। এ দিনের আর এক সেঞ্চুরিয়ান মুরলী বিজয় বলেন, ‘‘বিরাট দারুণ টাচে আছে। পুরো অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে নিজের ব্যাটিং। আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম আজ ৩৪০-এর কাছাকাছি তুলতে পারলেই ভাল স্কোর। বিরাট আরও ১০-২০ রান যোগ করল। যে ভাবে ও বলগুলো স্ট্রাইক করছিল, দুর্ধর্ষ। আশা করছি পরের দিনও বিরাটকে ক্রিজে একই মেজাজে দেখব।’’ গত জুলাই থেকে তিনটে ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন বিরাট। টেস্টে কেরিয়ার গড় ৫০ পেরিয়ে গিয়েছে। এ বার কি চার নম্বরটা আসছে? সেই ইঙ্গিতই বোধহয় করলেন মুরলী।

আরও পড়ুন: দ্য বস

তাসকিনের আক্ষেপ

টেস্ট খেলিয়ে দেশ হিসেবে ক্রিকেট বিশ্বে পা রাখার ১৭ বছর পর ভারতে প্রথম দ্বিপাক্ষিক টেস্টে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল মেজাজেই। তাসকিন আহমেদ প্রথম ওভারেই কেএল রাহুলকে বোল্ড করে ফেরান। টসের পর ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম বলছিলেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে আসল কথা হল পাঁচ দিন ধরে মোমেন্টামটা ধরে রাখা। তিন দিন ভাল খেললাম আর দু’দিন পারলাম না, সেটা চলবে না।’’ ক্যাপ্টেন যেন বলে গেলেন টস হারলেও আমরা লড়াইটা ছাড়ব না। বললেন বটে। কিন্তু প্রথম এক ঘণ্টার পর কথাটা সত্যি করে তুলতে পারল না তাঁর টিম। সারা দিনে আর মাত্র দুটো উইকেট তুলতে তাঁদের বোলাররা রান দিলেন প্রায় গড়ে চার করে। তাসকিনের তাই দিনের শেষে আক্ষেপ, ‘‘আমরা চেষ্টা কম করিনি। কিন্তু পিচটা ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভাল ছিল। প্রথম এক ঘণ্টায় কিছুটা মুভমেন্ট ছিল। কিন্তু তার পরে ব্যাটসম্যানদের জন্য উইকেটটা সহজ হয়ে যায়। আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়েছি। ভারতের মাটিতে ওদের বিরুদ্ধে নামাটা একটা অন্য চ্যালেঞ্জ। ওরা তো সব দলের বিরুদ্ধেই প্রচুর রান করেছে।’’

বিজয়, কোহালি সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। এ বার অপেক্ষা অজিঙ্ক রাহানের। আগের টেস্টে অপরাজিত ৩০৩ করা করুণ নায়ারকে বসিয়ে যাঁর উপর আস্থা রেখেছেন কোহালি। এই মাঠে ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান কিন্তু তাঁর নামের পাশেই। আট বছর আগে। ২৬৫ নটআউট।

ভারত

প্রথম ইনিংস

কে এল রাহুল বো তাসকিন ২

বিজয় বো তাইজুল ১০৮

পূজারা ক মুশফিকুর বো মেহেদি হাসান ৮৩

বিরাট ব্যাটিং ১১১

রাহানে ব্যাটিং ৪৫

অতিরিক্ত ৭

মোট ৯০ ওভার ৩৫৬-৩।

পতন: ২, ১৮০, ২৩৪।

বোলিং: তাসকিন ১৬-২-৫৮-১, কামরুল ১৭-১-৯১-০,

সৌম্য ১-০-৪-০, মেহেদি ২০-৯-৯৩-১, সাকিব ১৩-৩-৪৫-০,

তাইজুল ২০-৪-৫০-১, সাব্বির ৩-০-১০-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন