যোগ্য টিমগুলো যখন একে একে আইপিএল প্লে-অফে চেক-ইন করছে ততক্ষণে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাগ গোছানো হয়ে গিয়েছে। রাজা তার রাজত্ব ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। তবু তার রাজদরবারে নতুন অতিথিদের মনে হচ্ছে, তারা বুঝি অনাহুত।
এ বারের আইপিএলের পুরোটাই ধোনি অবরোধের মধ্যে ছিল। টিমের সেরা সব প্লেয়ার চোটের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ল। প্রতিভাবানরা ছন্দ হারাল। এত ঝড়ঝাপটার মধ্যে তরুণরাও নড়বড়ে হয়ে গেল। ধোনি তরোয়াল হাতে ঝলমলে যুদ্ধের বর্মে বেরিয়ে অবশ্য সবাইকে যথেষ্ট চমকে দিয়েছিল। সবার সম্মানও পেয়েছিল। এই আইপিএল শেষ হওয়ার অনেক পরেও ধোনির ঔদ্ধত্যের ছবিটা সবার মনে গেঁথে থাকবে।
এক ওভারে জিততে ২৩ রান চাই, এ রকম অবস্থায় কেউ ম্যাচ দেখে না। তবু দর্শকেরা মাঠ ছাড়েননি। আমরা টিভির সামনে থেকে নড়িনি। অক্ষর পটেল বুঝতেই পেরেছিল, ওর সঙ্গে কিছু একটা হতে পারে। অপ্রতিরোধ্য ধোনি এমনই একটা শক্তি। কভারের বাউন্ডারিতে আমলার অবিশ্বাস্য সেভ বা মাঠে কুকুর ঢুকে পড়ায় ম্যাচের ক্লাইম্যাক্সটা পিছিয়ে গিয়েছিল মাত্র। ভেবে দেখুন, ওই ওভারেই দুটো ডট বল হয়েছিল! ভাবা যায়!
ধোনি হল ভারতের প্রতিভূ নায়ক। এক অসম্ভব সত্তা, যার কাছ থেকে আমরা আশা করি যে জয়ের মুহূর্তেও সে নিরহঙ্কার থাকবে। যে আবেগের ভঙ্গুরতা কখনও প্রকাশ্যে আনবে না। বিশ্বজোড়া প্রশংসা বা আর্থিক লাভ নয়, যাকে তাতায় চ্যালেঞ্জ। জীবনের সব বাধা টপকে যারা উঠে এসেছে, তাদের পক্ষে এটা করা সহজ। সাফল্য বা ব্যর্থতায় অবিচল থাকাটা যারা শিখেছে। শুধু ক্রিকেট নয়, রোজকার জীবনেও ধোনির রোল মডেল হওয়া উচিত।
আমাদের চেয়ে অনেক বেশি ভাল সমালোচক ধোনির প্রাপ্য। আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করে দেখি না, ওর চেয়ে ফিট বিশেষ কেউ আছে কি? ওর চেয়ে ভাল কিপিং আর কেউ করে কি? ওর মতো রোখে ম্যাচ ফিনিশ করতে পারে কি? রাগবির ভাষায়, ও ট্যাকলারদের এমন ভাবে টপকে যায়, যেন ওরা কার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি। আর ওর সমালোচকেরা? তারা ওর পিঠে আটকে থাকা পাঁউরুটির গুঁড়োর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আমি বারবার বলে আসছি, এই লোকটাকে একা ছেড়ে দিন। ধোনির প্রতি আমরা প্রচণ্ড অন্যায় করেছি। আইপিএল টেবল যা দেখাচ্ছে, পুণে মোটেও ততটা খারাপ টিম নয়। ওরা কয়েকটা ক্লোজ ম্যাচ হেরেছে। তার পর কয়েকটা টস জিতলে সুবিধে হত। তবে এগুলো কোনও অজুহাত নয়, পরিস্থিতিটাকে দেখার দৃষ্টিকোণ মাত্র। পুণের আইপিএল জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল, জয় দিয়েই শেষ হয়েছে। পরের বছর মাঝের সময়টাও খারাপ যাবে না।