ডাবলসে জিতে লড়াইয়ে থাকল ভারত

রাখে লিয়েন্ডার মারে কে

দেহপট সনে নট সকলি হারায়! কিন্তু লিয়েন্ডার পেজ নন! বয়স একচল্লিশ। ডেভিস কাপ খেলছেন চব্বিশ বছর। ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার, জেতার রেকর্ড হয়ে গিয়েছে সেই কবেই! এ বছর পেশাদার সার্কিট খারাপ গিয়েছে। গত বারের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ডাবলস খেতাব এ বার কোয়ার্টার ফাইনালেই নিউইয়র্কে রেখে পৃথিবীর অন্য গোলার্ধ থেকে মাত্র তিন দিন আগে তেরঙার স্বার্থে বেঙ্গালুরু এসেও রেহাই নেই।

Advertisement

সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায়

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৯
Share:

অবিশ্বাস্য ১-২ করে লি-বোপান্না। ছবি: পিটিআই

দেহপট সনে নট সকলি হারায়! কিন্তু লিয়েন্ডার পেজ নন!

Advertisement

বয়স একচল্লিশ। ডেভিস কাপ খেলছেন চব্বিশ বছর। ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার, জেতার রেকর্ড হয়ে গিয়েছে সেই কবেই!

এ বছর পেশাদার সার্কিট খারাপ গিয়েছে। গত বারের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ডাবলস খেতাব এ বার কোয়ার্টার ফাইনালেই নিউইয়র্কে রেখে পৃথিবীর অন্য গোলার্ধ থেকে মাত্র তিন দিন আগে তেরঙার স্বার্থে বেঙ্গালুরু এসেও রেহাই নেই। দেশের মরণবাঁচন ডাবলস ম্যাচের মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগে পারিবারিক সমস্যায় ঝটিকা সফরে মুম্বই গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে টিম হোটেলে ফিরে পেশা আর পরিবারের চাপে চিঁড়েচ্যাপ্টা লিয়েন্ডার পুরো একটা দিনও বিশ্রাম না পেয়ে কোর্টে নেমে কিন্তু সেই বহু যুদ্ধের ঘোড়া-ই! মোটেই বুড়ো ঘোড়া নন।

Advertisement

যতই শরীরের মধ্যদেশ ইদানীং টেনিস পোশাকেও ধরা পড়ুক যে, একটু ফোলা! বেকবাগান রো-র চিরসবুজ ক্রীড়াবিদেরও সামান্য ভুঁড়ি হচ্ছে! তাতে নেটের সামনে বিখ্যাত রিফ্লেক্সের সাময়িক ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কিন্তু চিরস্থায়ী ভাবে নয়।

একচল্লিশে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে হাতের পেশিটেশি সামান্য আলগা দেখাতেই পারে। তাতে বরাবরের গড়পড়তা সার্ভিস সাময়িক দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু চিরস্থায়ী ভাবে নয়।

একে অনিয়মিত পার্টনার, তার উপর সেই পার্টনারও ডান কোর্টের প্লেয়ার হওয়ায় কোর্টে বোঝাপড়ার রসায়নে সাময়িক সমস্যা তৈরি হতে পারে। কিন্তু চিরস্থায়ী ভাবে নয়।

বহু আলোচিত অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ, বজ্রমুষ্টি আকাশে তুলে ঘনঘন ঝাঁকানো, অনির্বচনীয় রিটার্ন মেরে তার ফলোআপ জাতীয় দলের রিজার্ভ বেঞ্চে জুনিয়র সতীর্থদের প্রায় গায়ে গিয়ে শেষ হওয়া, এবং অবশ্যই বিগ পয়েন্ট জেতার পর কোর্টের ভেতর পার্টনারের সঙ্গে সেই চিরস্মরণীয় ‘চেস্ট বাম্প’ সাময়িক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু চিরস্থায়ী ভাবে নয়।

বেঙ্গালুরুর শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় এ সব কিছু যতক্ষণ লিয়েন্ডারের মধ্যে ছিল না, ততক্ষণই ডাবলসে ভারতীয় জুটিকে ফ্যাকাশে দেখিয়েছে। যেই সে সব ফিরে পেলেন লিয়েন্ডার, ভারতীয় জুটি ঠিক তখন থেকেই রঙিন।

নিট ফল এক ঘণ্টার মধ্যে সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ০-২ পিছিয়ে পড়া ভারত অবশেষে দু’ঘণ্টা ৫৮ মিনিটের পাঁচ সেট লড়াইয়ে জয়ী ১-৬, ৬-৭ (৪-৭), ৬-৩, ৬-৩, ৮-৬। নেনাদ জিমোনজিচ-ইলিয়া বোজোলিয়াক জুটিকে হারিয়ে লিয়েন্ডার পেজ-রোহন বোপান্না জুড়ি শুধু ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফ টাই-কে রবিবার শেষ দিন পর্যন্ত জিইয়ে রাখল তাই-ই নয়, ভারতকে লাইফলাইনও দিল। গত কাল যার মরিয়া খোঁজ করছিলেন রবিবার শেষ দিন প্রথম রিভার্স সিঙ্গলসে নামতে চলা সোমদেব দেববর্মন।

মধ্য সেপ্টেম্বরে বেঙ্গালুরুর ভরদুপুর আর সন্ধ্যা মানে ‘ফ্রম ফ্রাইং প্যান টু রেফ্রিজারেটর!’ তপ্ত কড়াই থেকে মনোরম ঠান্ডা। ডাবলস ম্যাচটা পৌনে সাতটায় শুরু হলেও সেখানে প্রথম দুটো আর শেষ তিনটে সেটে ভারতের খেলাও যেন তাই। শুধু উল্টে গিয়ে ‘ফ্রম রেফ্রিজারেটর টু ফ্রাইং প্যান!’ প্রথম দু’টো সেটে যদি লি-বপ্স বিস্বাদ শীতল হন, তো শেষ তিন সেটে কড়কড়ে গরম! লিয়েন্ডার যেখানে নিজের প্রথম পাঁচটা সার্ভিসের চারটেই নষ্ট করলেন, সেখানে তাঁর শেষের আটটা সার্ভিসের মধ্যে মাত্র একটা ব্রেক! বোপান্নার যেখানে প্রথম দু’সেটে আনফোসর্ড এরর সত্তর শতাংশ আর উইনার তিরিশ শতাংশ, সেখানে শেষ তিন সেটে ঠিক উল্টো। আনফোসর্ড এরর কুড়ি শতাংশ। উইনার পঁয়ষট্টি শতাংশ।

এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর এ রকম ‘ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল’ রূপান্তরে হতচকিত সার্বিয়ান জুটি গ্যালারির তুমুল ভারত-সমর্থন আর তাঁদের দিকে সময়-সময় টিটকিরিমিলেজুলে তৃতীয় সেট থেকে ম্যাচ থেকেই যেন হারিয়ে গেল! গোদের উপর বিষফোড়ার মতো তৃতীয় সেটে জিমোনজিচ কাঁধে চোট পেয়ে বসায় বিদেশি জুটি আরও ঘেঁটে যায়! নইলে এই ম্যাচের চারজনের মধ্যে ডাবলস বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে দু’জন প্রাক্তন এক নম্বর (লিয়েন্ডার-জিমোনজিচ) এবং প্রাক্তন তিন নম্বর (বোপান্না) আজ কোর্টে থাকলেও সেরা পারফরম্যান্স কিন্তু বিশ্বের ২২৭ নম্বর বোজোলিয়াকের।

কিন্তু যে ম্যাচে জয়ের গন্ধ পেয়ে ভিআইপি এনক্লোজারে সপারিষদ বসা কর্নাটক মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত চেয়ার ছেড়ে উঠে সাধারণ দর্শকের মতো উত্তেজিত হাততালি দেন টিম লিয়েন্ডারকে, সেই লড়াই কোন ব্যাখায় জিতবেন বিদেশি জুড়ি! সে জিমোনজিচের পূর্বপুরুষ যতই ঐতিহাসিক যুগোস্লাভ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিখ্যাত গেরিলা সৈন্য হন না কেন! সেই লড়াই-বংশের রক্ত সার্বিয়ানের ধমনীতে বইলেও নেটের উল্টো দিকেও তো ভারতীয় টেনিসের চিরদিনের যোদ্ধা ছিলেন। লিয়েন্ডার আদ্রিয়ান পেজ!

লি-বিক্রম

১৯৯০-এ ডেভিস কাপে অভিষেক টাইয়েই জিশান আলির সঙ্গে জুটিতে লিয়েন্ডার (বয়স তখন ১৬) পাঁচ সেটের লড়াইয়ে হারান জাপানকে।

১৯৯৩-এ রমেশ কৃষ্ণনকে সঙ্গে নিয়ে সুইৎজারল্যান্ডের কাছে পিছিয়ে গিয়েও জেতেন লি-রা। টাই তখন ১-১ দাঁড়িয়ে। টাইয়েও ভারত জিতেছিল ৩-২।

সাল ১৯৯৫। সঙ্গী মহেশ ভূপতি। সামনে প্রাক্তন উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন গোরান ইভানিসেভিচের ক্রোয়েশিয়া। সিঙ্গলসে ১-১ থাকার পর ডাবলসে লি-রা হারান ইভানিসেভিচদের। টাইও লি-রা জিতে নেন ৩-২।

১৯৯৭-এ প্রাক্তন বিশ্বসেরা মার্সেলো রিয়সের চিলির বিরুদ্ধে সঙ্গী ছিলেন ভূপতি। টাই ১-১ অবস্থায় ডাবলসে রিয়স আর নিকোলাস মাসুর বিরুদ্ধে জেতেন লি-ভূপতি। টাইয়েও ভারত জিতে যায় ৩-২।

ডেভিস কাপে সিঙ্গলস আর ডাবলস মিলিয়ে সর্বোচ্চ জয়ের তালিকায় লিয়েন্ডার চার নম্বরে। ৮৯টি। প্রথম তিনে আছেন পিয়েট্রাঙ্গেলি (১২০), নাস্তাসে (১০৯), সান্তানা (৯২)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন