‘এত প্রাণবন্ত মস্কো আগে দেখা যায়নি’

দু’সপ্তাহ আগেই রাশিয়ার বিশ্বকাপ অভিযানে সাফল্য নিয়ে প্রবল সন্দেহ ছিল দেশের মানুষের। আজ তারাই গর্বিত। এটাই ফুটবল।

Advertisement

ওলেগ কোশেলেভ

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ ০৪:৫৫
Share:

বিশ্বকাপে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতল রাশিয়া। নক আউট পর্বে যোগ্যতা অর্জন করল মিশরকে হারিয়ে। ১৯৮৬ সালের পরে প্রথম বার। প্রথম সোভিয়েত জমানার পরেও।

Advertisement

দু’সপ্তাহ আগেই রাশিয়ার বিশ্বকাপ অভিযানে সাফল্য নিয়ে প্রবল সন্দেহ ছিল দেশের মানুষের। আজ তারাই গর্বিত। এটাই ফুটবল। একটা জয় সবকিছু পাল্টে দিতে পারে। বুধবার রাতে রাশিয়ার সমস্ত আয়োজক শহর তাই প্রত্যাশার বোঝা কাটিয়ে উৎসবে মেতেছিল। যে উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন বিদেশি সমর্থকরাও। বিশ্বকাপে রাশিয়ার আতিথেয়তায় সবাই খুব খুশি। শেষ বার মস্কোকে কবে এত খোলামেলা, প্রাণবন্ত দেখেছি মনে করতে পারছি না। আশা করি বিশ্বকাপের পরেও এই ছবিটা বজায় থাকবে।

কোচ স্ট্যানিসলাস চেরিশভ একটা দল হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল রাশিয়াকে। সেই লক্ষ্যে তিনি সফল। ফুলবলাররা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে লড়াই করছেন। ড্রেসিংরুমের পরিবেশও দারুণ। সালাহ, সুয়ারেস বা কাভানির মতো বড় মাপের ফুটবলার না থাকা একটা দলের জন্য যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

কিন্তু এর পরে কী? রাশিয়া বিশ্বকাপে কতদূর যেতে পারে প্রশ্নটা এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রধান কোচ। রাশিয়ার এর পরে মুখোমুখি উরুগুয়ের। যারা নিশ্চিত ভাবেই সৌদি আরব বা মিশরের চেয়ে শক্তিশালী। হয়তো রাশিয়া দল এ বারের বিশ্বকাপে প্রথম কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে চলেছে এই ম্যাচেই।

এ বার কিছু কথা বলা যাক দিনিস চেরিশেভকে নিয়ে। যে তিনটে গোল করে ফেলল দুটো ম্যাচে। পাশাপাশি দুটো ম্যাচেই সেরা ফুটবলারও ডেনিস। ও কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছে। ছোটবেলায় স্পেনেই খেলত দিনিস। ‘‘রাশিয়ান হলেও স্প্যানিশ ফুটবলের শিক্ষা রয়েছে ওর মধ্যে। ’’ বলছিলেন দিনিসের বাবা প্রাক্তন রুশ জাতীয় দলের ফুটবলার দিমিত্রি চেরিশেভ। তিনি আরও বলেন, ‘‘দারুণ মিশেল, তাই না?’’

দিনিস এক সময় রাশিয়ান ফুটবলের উঠতি তারকা ছিলেন। কিন্তু ক্রমাগত চোট সমস্যায় ভোগার ফলে বড় টুর্নামেন্টে খেলার স্বপ্ন বহুবার ভেঙে গিয়েছিল ওঁর। সেই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে শেষ পর্যন্ত দিনিস ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ দারুণ ভাবে উপভোগ করতে পারছেন।

তবে যতই মাতামাতি হোক, রাশিয়ার বেশির ভাগ মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা কিন্তু মনে করে একটা সাফল্যে সব পাল্টে যায় না। ফুটবল বিশ্বে এখনও কিন্তু আমরা প্রথম সারির দল নয়। অবশ্য রাশিয়া প্রধান লক্ষ্য অর্জন করার দিকে এগিয়ে যেতেই পারে—নিজের দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপ উৎসবে আমরাও কোনও অংশে কম যাই না!

বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচগুলোও এখনও শেষ হয়নি, তবে একটা ব্যাপার কিন্তু ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করার মতো। ফেভারিট দলগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পাচ্ছে না। জার্মানি হেরেছে প্রথম ম্যাচ। ব্রাজিল ড্র করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি হতাশ প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার খেলা দেখে। আইসল্যান্ডকে ওরা হারাতে পারল না। আগুয়েরোর গোল করে এগিয়ে দেওয়া। ফিনবোগাসনের গোল শোধ করা। তার পর মেসির পেনাল্টি ফস্কানো। এ সব দেখে একটাই কথা বলা যায়— দুর্ভাগ্য।

সবেচেয়ে চিন্তার কথা হল আর্জেন্টিনা দলের সে দিনের খেলা বুঝিয়ে দিয়েছে, মাঠে মেসির কোনও দিন খারাপ গেলে দলের কোনও বিকল্প পরিকল্পনা নেই। মেসি আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় শক্তি। আবার মেসিই ওদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে উঠতে পারে।

(লেখক রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ‘তাস’-এর নামী সাংবাদিক)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement