ইংল্যান্ডকে জিতিয়ে উচ্ছ্বসিত পিকফোর্ড। ছবি: এএফপি।
বোতলে বার্তা! আর তাতেই কি কাটল বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে জিততে না পারার অভিশাপ? বিতর্ক সে দিকেই এগোচ্ছে। যার কেন্দ্রে রয়েছেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড।
প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড জিতেছিল টাইব্রেকারে। পেনাল্টি শুটআউটে এক বার পিছিয়ে পড়েছিল হ্যারি কেনের দল। কিন্তু, তার পর কলম্বিয়ার মাতেউস উরিবে মারেন ক্রস বারে। আর কার্লোস বাক্কার শট আটকে দেন পিকফোর্ড। যা ইংল্যান্ডকে ঐতিহাসিক জয়ের সরণিতে এনে ফেলে। বিশ্বকাপে এর আগে তিন বার টাইব্রেকারে হেরেছে ইংল্যান্ড। মনে করা হচ্ছিল, কাপ-যুদ্ধে টাইব্রেকার মানেই অমঙ্গলের। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে জয় সে জন্যই চিহ্নিত হচ্ছে শাপমোচন হিসেবে।
আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। শাপমোচন কি তা হলে নিখাদ স্কিলে ঘটেনি? নায়ক হয়ে ওঠা ব্রিটিশ গোলকিপারের সাফল্যে মাঠের বাইরেরও কি ভূমিকা ছিল? আর এই নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। যা ক্রমশ বিতর্কের চেহারা নিচ্ছে।
ডানদিকে ঝাঁপিয়ে বাক্কার শট আটকাচ্ছেন পিকফোর্ড। ছবি: এএফপি।
ইংল্যান্ডের ‘দ্য সান’ দাবি করেছে যে, কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে টাইব্রেকার শুরুর আগে পিকফোর্ডের হাতে ধরা বোতলের ছিপির একটু নীচে লিখিত বার্তা দেওয়া হয়েছিল। টিভি ফুটেজে ক্যামেরা জুম করা সেই লিখিত বার্তা দেখাও গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সেই নোটসে পিকফোর্ডকে কলম্বিয়ার কোন ফুটবলার টাইব্রেকারে কোন দিকে শট মারতে পারেন, তার হদিশ দেওয়া হয়েছিল। তোয়ালে দিয়ে সেই বোতলকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ব্রিটিশ গোলরক্ষক। আন্দাজ করা হচ্ছে যে, ওই বোতল সবার নজর এড়াতেই রঙিন তোয়ালে দিয়ে জড়ানো অবস্থায় ছিল।
কখন পিকফোর্ড এই বোতল পেয়েছিলেন, তা-ও আবার পরিষ্কার নয়। ম্যাচচলাকালীন, না কি টাইব্রেকারের ঠিক আগে তিনি এটা পেয়েছিলেন, তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে টাইব্রেকারের আগে তাঁর হাতে ওই বোতল দেখা গিয়েছে। আর টাইব্রেকারে তিনি বাক্কার শট আটকে দিয়েছিলেন। এই দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্র সে জন্যই উঠে আসছে।
আরও পড়ুন: অভিবাসী ফুটবলাররাই বাঁচিয়ে রেখেছেন ইউরোপের ফুটবল
আরও পড়ুন: এসকোবারের স্মৃতি জাগিয়ে বিশ্বকাপে ফের মৃত্যুর হুমকি
এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। গত গ্রীষ্মে ইউরোপিয়ান অনূর্ধ-২১ প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে জার্মানির গোলরক্ষক জুলিয়েন পোলার্সবেক যেমন মোজার আড়াল থেকে একটা কাগজ বের করেছিলেন। সেই ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। জুলিয়েন আটকে দিয়েছিলেন দুই শট। ২০০৯ সালে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন গোলরক্ষক বেন ফস্টার টাইব্রেকারের হাতে ব্যবহার করেছিলেন আইপ্যাড। তার পর আটকে দিয়েছিলেন টটেনহ্যামের দু’টি পেনাল্টি। কার্লিং কাপ জিতেছিল ম্যাঞ্চেস্টার।
পিকফোর্ড অবশ্য টাইব্রেকারে সাফল্যকে গবেষণার ফসল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিপক্ষের কে কোন দিকে মারতে পারেন তা নিয়েই বিস্তারিত চর্চা আগেই করে রাখার কথা শুনিয়েছেন। একমাত্র কলম্বিয়া অধিনায়ক রাদামেল ফালকাও তাঁর গবেষণাকে ফাঁকি দিয়ে উল্টো দিকে মেরেছেন বলেও জানিয়েছ়েন। যাঁর শট তিনি আটকেছেন, সেই কার্লোস বাক্কাকে বিপক্ষের দুর্বলতম হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। বলেছেন, ‘‘হোমওয়ার্ক করেছিলাম বাক্কার শট নিয়ে। হয় বাঁ দিকে উপরে, নয়তো ডান দিকে উপরে ও মারে। পাঁচ নম্বর পেনাল্টি ও নিতে এসেছিল। গোল করতেই হত। আমার মনে হয়েছিল ও ডান দিকে মারবে। সে দিকেই ঝাঁপিয়ে ছিলাম হাত শক্ত রেখে। আমি খুশি যে, তা কাজে এসেছে।”
গবেষণা, হোমওয়ার্ক তো ঠিকই আছে। প্রশ্ন হল, বোতলে লেখা বার্তায় সেটাই মোক্ষম সময়ে মনে করানো হয়নি তো পিকফোর্ডকে!
আরও পড়ুন: হ্যারি কেনের আলোয় কাপ জয়ের স্বপ্ন ইংল্যান্ডের
আরও পড়ুন: নেমারের পাশে বড় রোনাল্ডো