চেহারায়, চলন-বলনে, আচার-আচরণে বছর চব্বিশের কর্নাটকী যুবক ক্রমাগত বুঝিয়ে যাবেন ক্রিকেট বাদেও তাঁর অন্য একটা পেশা থাকতে পারত!
যৌবনে পা দিয়েও চোখমুখ থেকে কৈশোর যায়নি। হাতের প্রায় অর্ধেকটা ঢাকা ট্যাটুতে। রাহুল দ্রাবিড়ের শহরের এই ছেলেও অত্যন্ত সুশ্রী। ক্রিকেটের বদলে যদি মডেলিং বা অভিনয় জগতে দেখা যেত, খুব বেমানান বোধহয় ঠেকত না।
প্রথম দর্শন অনেক ক্ষেত্রে ভ্রমাত্মক। এখানেও সেটা প্রযোজ্য। কারণ দু’টো তথ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, এ ছেলের ক্রিকেটার ছাড়া আর কিছু হওয়া সম্ভবই ছিল না।
বাবা আর্মির লোক। ছেলেকে তিন বছর সময় দিয়েছিলেন। ক্রিকেটে কিছু করে দেখাতে হলে, দেখাতে হবে ওই তিন বছরে। নইলে নির্দেশ ছিল— ক্রিকেট নয়, জীবন-নির্বাহের জন্য সেনাবাহিনীর কার্যক্ষেত্র বেছে নিতে হবে। ওই তিন বছরেই ছেলে বুঝিয়ে দিয়েছিল, তার জীবনে ক্রিকেট থাকবে। অন্য কিছু নয়।
আইপিএলের সাত-সাতটা বছরে সেঞ্চুরি অনেক ক্রিকেটারই করে গিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে প্রথম সেঞ্চুরিটা তাঁর নামেই লেখা।
পুরনো নন। ইনি নতুন নাইট।
বিতর্কিত নন। ইনি নতুন মণীশ পাণ্ডে।
কেকেআর টপ অর্ডারে যাঁকে নিয়মিত তিন নম্বরে দেখা যাচ্ছে। টিমে অদল-বদল হলেও যাঁর অবস্থানে নড়চড় হচ্ছে না। কারণ আইপিএলের মরুশহর-পর্বে প্রথম দু’টো ম্যাচের একটায় ম্যাচ জেতানো হাফসেঞ্চুরি, আর একটায় ৪৮ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে আবু ধাবির শেষ ম্যাচের সুপার ওভারে সুনীল নারিন মার না খেয়ে গেলে লোকে তাঁকেই মনে রাখত। জেমস ফকনার বা স্টিভ স্মিথকে নয়। সুপার ওভারের একমাত্র ছক্কাটা তো মণীশই মেরেছিলেন!
“আসলে এ বারের আইপিএলটা খুব সিরিয়াসলি খেলতে চাইছি। ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেট যে ভাবে খেলে এসেছি, স্বীকার করব সেটা আইপিএলে পারিনি। অথচ আইপিএলই আমাকে নাম-যশ দিয়েছিল,” শুক্রবার দুপুরে রাঁচির র্যাডিসন ব্লু-র লবিতে আনন্দবাজারকে বলছিলেন মণীশ। “আরসিবি-র হয়ে ওই সেঞ্চুরিটা জীবন পাল্টে দিয়েছিল। লোকে জানল, মণীশ পাণ্ডে বলে একটা মারকুটে ছেলে এসে গিয়েছে। কিন্তু পরের কয়েকটা বছর তেমন কিছু করতে পারিনি আইপিএলে। কেকেআর আমার চতুর্থ ফ্র্যাঞ্চাইজি। এ বার খাটাখাটনিও অনেক করে এসেছি। ব্যাটিং টেকনিক পাল্টেছি। শৃঙ্খলা এনেছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এ বার কর্নাটকের হয়ে রঞ্জি, ইরানি, বিজয় হাজারে সব জিতেছি। কিন্তু সাত বছর আইপিএল খেলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারলাম না।”
সেটা এ বার হবে? কেকেআরের প্লে-অফ রাস্তা কি এখনই যথেষ্ট কণ্টকাকীর্ণ দেখাচ্ছে না?
“আমাদের টিমটা মোটেও খারাপ নয়। কপালটাই খারাপ যাচ্ছে আসলে। নইলে আমিরশাহি থেকে পাঁচটায় চারটে জিতে ফেরার কথা। রাজস্থান ম্যাচটা তো ধরেই নিয়েছিলাম জিতে যাচ্ছি। নারিনের বিরুদ্ধে বারো রান তুলে দেওয়া সহজ ব্যাপার নয়,” বলতে বলতে একটু থামেন। থেমে বলেন, “কোনও ম্যাচই আমরা চল্লিশ-পঞ্চাশ রানে হারছি না। ম্যাচ ক্লোজ করে এনে ভুলভ্রান্তি করে বসছি। কিন্তু এর পরেও আমরা প্লে অফে যেতে পারি। কেন জানেন? কেকেআরের পরিবেশের জন্য। খারাপ খেলি বা ভাল, সবার ব্যবহার একই রকম থাকে। কোনও অস্বস্তি হয় না। চাপ থাকে না। আমরা তাই প্যানিকও করি না। শাহরুখ খান থাকলে উনি একাই প্রচুর পজিটিভ এনার্জি দিয়ে যান। একটা লম্বা টুর্নামেন্টে ড্রেসিংরুমের এ রকম পরিবেশ খুব দরকার।”
যে পরিবেশটা আপনার পূর্বতন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে দরকার ছিল? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পুণে ওয়ারিয়র্সের টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে তো আপনার কম ঝামেলা হয়নি!
“না, না ড্রেসিংরুম পরিবেশ পুণে ওয়ারিয়র্সেও এ রকমই ছিল। সুখেরই ছিল,” বলে ওঠেন মণীশ। কিন্তু শোনা যায়, ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে তো আপনার সঙ্গে ভালই লেগেছিল পুণে টিম ম্যানেজমেন্টের! কখনও ওপেন, কখনও চার, কখনও আট নম্বরে নামানো নিয়ে। ‘নতুন’ মণীশের গলা এ বার বেশ ডিফেন্সিভ, “আসলে পুণে টিমটাও ভাল খেলছিল না। আমিও না। আমিও তো জেতাতে পারিনি টিমকে। এটা ঠিক যে ব্যাটসম্যানের একটা সেট ব্যাটিং অর্ডার লাগে। ব্যাটিং অর্ডার জানা থাকলে, একটা স্থির মানসিকতা নিয়ে নামা যায়। কেকেআরের কাছে সে ব্যাপারে আমি কৃতজ্ঞ। টপ অর্ডারে ব্যাট করতে ভাল লাগে আমার। কেকেআরে সেখানে আমাকে তিন নম্বরে নিয়মিত নামাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, এখন আমি জানি আমাকে কোথায় নামতে হবে।”