চোদ্দো বছরের সম্পর্ক ছিড়ে বার্সেলোনাকে ‘বাই-বাই’ বলতে রাজি লিওনেল মেসি। যে ক্লাব ১৩ বছর বয়স থেকে আর্জেন্তিনার মহাতারকার প্রতিভাকে সযত্নে তুলে এনেছে বিশ্বফুটবলের আকাশে। যে ক্লাব থেকেই পেশাদার কেরিয়ারকে বিদায় জানাবেন বলেছেন বহু বার। সেই বিখ্যাত কাতালান ক্লাব ছাড়তে চান বলে বার্সেলোনার রাজপুত্র চলতি সপ্তাহেই হইচই ফেলে দিয়েছেন।
কিন্তু কেন স্পেন ছাড়তে চান এলএম টেন?
ইংরেজ মিডিয়ায় ফাঁস হয়েছে, মেসি নাকি স্পেনে কর ফাঁকি কাণ্ডে জেল হওয়ার হাত থেকে বাঁচতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর্জেন্তিনার ক্যাপ্টেনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র নাকি জানিয়েছে, “মেসি ছাড়াও অনেক মহাতারকা খেলোয়াড়েরই কর নিয়ে একই রকম সমস্যা রয়েছে। তাঁদের সবার ক্ষেত্রেই কিন্তু প্রশাসনিক স্তরেই ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। যেমন রিয়াল মাদ্রিদের জাবি আলোন্সো, ইকার কাসিয়াস, টেনিসের মহাতারকা রাফায়েল নাদাল।” সঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, “কিন্তু মেসিই একমাত্র যাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। হয়তো শেষ পর্যন্ত মেসির জেল হতে পারে। মেসি স্পেনের উপর এই জন্যই বীতশ্রদ্ধ। ওর স্পেন ছাড়তে চাওয়ার কারণও এটাই।”
স্প্যানিশ আইন অনুযায়ী কারও এক লক্ষ ২০ হাজার ইউরোর বেশি অঘোষিত অর্থ উপার্জনের প্রমাণ পেলেই জেল হতে পারে। তবে দোষী ব্যক্তি যদি জরিমানা দিতে রাজি হন, তা হলে জেলে যাওয়ার শাস্তি এড়ানো যায়। মেসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ৪১ লক্ষ ইউরো হিসাব-বহির্ভূত আয়ের। যার জন্য আর্জেন্তিনীয় মহাতারকা ৫০ লক্ষ ইউরো জরিমানা দিতে রাজিও হন। কিন্তু তার পরও স্প্যানিশ সরকার মেসির বিরুদ্ধে শুনানি চালু রাখে। যে মামলায় শেষ পর্যন্ত মেসির জেল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দিন কয়েক আগে পর্তুগালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে নামার আগে মেসি বলেছিলেন, “বার্সেলোনাতেই থাকতে চাই আমি। কিন্তু যা পরিকল্পনা করা হয়, অনেক সময়ই তা ঘটে না। বার্সেলোনায় এখন যা ঘটছে, সেটা জটিল।” বার্সার মহাতারকার মুখে হঠাত্ এ কথা শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন কাতালান সমর্থকরা। ঠিক তার পরে মেসির বাবা ও এজেন্ট হোর্জে ছেলের দলবদলের দরও ঠিক করে দিয়েছিলেন ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা। যাতে তাঁর বার্সা ছেড়ে অন্য ক্লাবে যাওয়ার জল্পনা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। মেসি কি তা হলে ‘জটিল’ বলতে তখন কর নিয়ে ঝামেলার ব্যাপারটাই বলতে চেয়েছেন? এমন প্রশ্নই এখন উঠে পড়েছে ফুটবল মহলে।
স্পেনে মেসির ঘোর সঙ্কটের সময়ই ছেলেকে নিয়ে আগাম ক্রিসমাসের প্রস্তুতি রোনাল্ডোর। ছবি টুইটার।
মেসির ঘনিষ্ঠ সূত্রটি আরও বলেছেন, “শুধু এক বছরেই মেসি আয়কর আর জরিমানা নিয়ে মোট ৫২ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় চারশো কোটি টাকা) মিটিয়েছে। তার পরও আইনি ঝামেলায় ওকে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। যার শুরু মেসির ‘ইমেজ স্বত্ব’ নিয়ে। কে জানে সেটা কোথায় গিয়ে থামবে?”
গোটা ঘটনাটাকে অনেকে কাতালুনিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন। কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার দাবি নিয়ে স্প্যানিশ সরকারের সঙ্গে ঝামেলা দীর্ঘদিনের। সেই কারণেই রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলারদের ছেড়ে দিলেও মেসিকে আইনি সমস্যায় জড়িয়ে রেখে চাপ বাড়াতে চাইছে স্প্যানিশ সরকার। এমনটাও মনে করছেন অনেকে।
যদি সত্যিই বার্সা ছেড়ে দেন মেসি তা হলে কোন ক্লাবে যেতে পারেন? মেসির সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজের সদ্য করা একটি মন্তব্যে ইংরেজ ফুটবলের সমর্থকরা খুশি হতে পারেন। জাভি বলেছেন, “ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ততটা রক্ষণাত্মক ফুটবলের রমরমা নেই বলে ইপিএলে মেসি আরও ভাল খেলবে।”