সাফল্যে মিষ্টিমুখ। অধিনায়ক শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কোচ প্রণব নন্দী। শনিবার ইস্টবেঙ্গল ক্রিকেট ড্রেসিংরুমে। ছবি: উৎপল সরকার
বঙ্গ ক্রিকেটের তারকাদের নিয়ে মহাশক্তিশালী টিম তৈরি নয়। বরং এমন কিছু ক্রিকেটার নিয়ে সংসার-নির্বাহ, যারা ভবিষ্যতে শক্তিশালী তারকা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
কোনও ভাবেই টিমের কোর গ্রুপে পরিবর্তন চলবে না। দু’একজন এ দিক ও দিক হতে পারে, কিন্তু প্রধান চরিত্ররা একই থাকবে।
অধিনায়ক এমন কেউ হবে, যে টিমের ‘বস’ কম বন্ধু হবে বেশি। মাঠ সে নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু কর্তৃত্ব করবে না।
তিনটে দর্শন। আর তাতে বিশ্বাস রেখেই ময়দানের জোড়া মুকুট। সিএবি নক আউটের পর লিগ চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গলের সাফল্যমন্ত্র খুঁজতে গিয়ে উপরোক্ত তিন দর্শনের খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে। যা ময়দান বলছে। ইস্টবেঙ্গল কোচ-ক্রিকেটাররাও বলছেন।
শুধু তাই নয়, লিগ ফাইনালে ওয়াইএমসিএ-কে (২১৪) ৬ উইকেটে ইস্টবেঙ্গল (২১৬-৪) ওড়ানোর পর স্থানীয় ক্রিকেটমহলে বিস্ময় কোনও তারকা ক্রিকেটার ছাড়াই টিমটা পরের পর চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে কী ভাবে? এখনও পর্যন্ত দু’টো ট্রফি অথচ টিমে কোনও এক লক্ষ্মীরতন শুক্ল, কোনও এক মনোজ তিওয়ারি বা কোনও এক অশোক দিন্দা কেউ নেই। তা হলে?
“আমরা গত দশ-বারো বছর ধরেই ধারাবাহিক। প্রত্যেক বারই একটা না একটা ট্রফি জিতি। দু’তিনটের ফাইনালে উঠি,” শনিবার ইস্টবেঙ্গল মাঠে বসে বলছিলেন টিমের কোচ প্রণব নন্দী। যাঁর অভিমত, টিমে একটা লক্ষ্মীরতন শুক্ল থাকলে ম্যাচে নামার আগেই পঞ্চাশ শতাংশ এগিয়ে থাকা যেমন ঠিক, তেমনই সব সময় তারকাদের পাওয়া যায় না সেটাও ঠিক। “লক্ষ্মী-মনোজরা নিঃসন্দেহে বড় ক্রিকেটার। কিন্তু ওরা অনেক ব্যস্তও থাকে। যদি দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টিমের পাঁচ-ছ’জন আসল প্লেয়ারই নেই, তা হলে লাভ?” টিমের অন্যতম মুখ্য ক্রিকেটার অর্ণব নন্দী বলে দিলেন, “স্থানীয় ম্যাচে তারকারা যতটা উৎসাহ নিয়ে নামে, তার চেয়ে অনেক বেশি তেতে থাকে সেই সব ক্রিকেটার যারা পরে তারকা হতে চায়।” আর ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার আবার বলে রাখছেন, “বেশি তারকা টিমে থাকলে যে কী হয়, সেটা তো ফুটবল টিম দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। ক্রিকেটে দল কী রকম হবে, সেটা নিয়ে আমরা প্রণব নন্দীর উপরে নির্ভর করি। তরুণ ক্রিকেটার তুলে আনতে উনি পছন্দ করেন। আমরা এই ব্যাপারটাই ধরে রাখব আগামী দিনে।”
কোচ প্রণব নন্দী আরও একটা আশ্চর্য তথ্য দিলেন। গ্রীষ্মের দাবদাহে লিগের শেষ পর্যায়ের ম্যাচগুলো খেলার সময় বলে দিয়েছিলেন, বেশি চেষ্টা করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার দরকার নেই। বরং অ্যাভারেজ ক্রিকেট খেলে লিগের ফাইনাল পর্যন্ত নিজেকে ঠিক রাখা বেশি প্রয়োজন। “আমি বলে দিয়েছিলাম যে দেড়শো চাইছি না কারও থেকে। সত্তর-আশি করো। কিন্তু সার্ভিসটা মরসুমের শেষ দিন পর্যন্ত দিতে হবে।” আরও বলা হচ্ছে, ক্রিকেটে ইস্টবেঙ্গলের ‘ইউএসপি’ তাদের ড্রেসিংরুম। যেখানে ঝামেলা নেই। দলাদলি নেই। সিনিয়র-জুনিয়র বৈষম্য নেই। মাঠেও কেউ একক সিদ্ধান্ত নেয় না। ‘কোর গ্রুপ’ নেয়। যেখানে আছেন অধিনায়ক শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (ফাইনালে ১০১ ন: আ:), সন্দীপন দাস, ঋতম পোড়েলরা। কেউ খেলছেন দু’বছর, কেউ তিন, কেউ ছয়।
অতঃকিম? হবে পাঁচে পাঁচ? ময়দান বলে দিচ্ছে, আইপিএলে প্রধান ক্রিকেটাররা ব্যস্ত থাকায় স্থানীয় ক্রিকেটের অন্য দুই শক্তি কালীঘাট এবং মোহনবাগান এখন অনেক কমজোরি। এএন ঘোষ ট্রফিতে আবার মোহনবাগানও নেই। তা হলে?
ইস্টবেঙ্গল কোচ এবং অধিনায়ক দু’জনেই বললেন, “আপ্রাণ চেষ্টা করব।”