অতন্দ্র প্রহরী এদেল বেটে।
মাইকেল চোপড়ার দুরন্ত গোলমুখী শট যদি তিনি না বাঁচাতেন, তবে শেষ হাসি হয়তো হাসতে পারতেন না আন্তোনিও হাবাস! প্রথম আইএসএল ট্রফি জয়ের স্বাদও পেত না কলকাতা!
তিনি এদেল বেটে। ক্যামেরুন বংশোদ্ভুত আর্মেনিয়ান কিপারের হাত ধরেই তো নক আউট পর্বে সাফল্য এসেছে আটলেটিকো দে কলকাতার। টাইব্রেকার বাদ দিলে দু’টি সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল একটি ম্যাচেও গোল খাননি বেটে।
রবিবার গার্সিয়া, পদানি, বোরহারা যখন জয়ের আনন্দে আত্মহারা, তখন বেটে যেন কিছুটা চুপচাপ। কেমন একটু অন্যমনস্ক। কারণ কী? মুখে মৃদু হাসি টেনে বললেন, “দেশে ফিরে যাব এ বার। এই দু’মাস যে কোথা দিয়ে কেটে গেল। কলকাতাকে খুব মিস করব। শহরটা নিজের মনে হতে শুরু করেছে। আর নিজের শহর ছেড়ে যেতে তো সব সময় খারাপই লাগে।”
তবে কলকাতায় থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন না? এখানকার কোনও ক্লাবে ডাক পেলে কি খেলবেন? এতক্ষণে চোখের কোণে চমক দেখা গেল বেটের। “আমাকে ডাকবে আপনাদের এখানকার ক্লাব? তা হলে তো খুব ভাল হয়। কিন্তু বাংলার ফুটবলে অনেক ভাল-ভাল কিপার রয়েছে। রয় (শুভাশিস রায়চৌধুরী) তো দুরন্ত। ওর মত কিপারকে ছেড়ে আমাকে কেন নেবে?”
কিন্তু শুভাশিসকে বসিয়েই তো হাবাস আপনাকে খেলিয়েছেন? “সেটা কোচের স্ট্র্যাটেজি। কিন্তু রয় দুরন্ত কিপার। শুরুতে ও অত ভাল না খেললে আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারতাম না,” বলে দিলেন বেটে।
আইএসএলে সব মিলিয়ে ছ’ম্যাচ খেলেছেন বেটে। ৪৪টি শটের মধ্যে বাঁচিয়েছেন ৩৮টি। পারফরম্যান্স গ্রাফ চমত্কার। কিন্তু ফাইনালে ওঠার পরে নাকি চাপে ছিলেন কলকাতার বিদেশি কিপার। বলছিলেন, “ফাইনালে খেলতে নামার আগে টেনশন তো ছিলই। আসলে নিজের সেরাটা না দিতে পারলে আমি টিমকে হতাশ করব, কোচের বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারব নাএ সব ভেবেই কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। তবে একটা কথা এই সাফল্য কারও একার নয়। টিম কলকাতার। আমি যেমন বল বাঁচিয়েছি, গার্সিয়ারা তেমন গোল করেছে,” বললেন তিনি।
এত দিন বেটেকে ঘিরে তেমন উন্মাদনা ছিল না। নিঃশব্দে প্র্যাকটিসে আসতেন। বেরিয়ে যেতেন। ম্যাচের দিন গোলপোস্টের তলায় দাঁড়িয়ে ভাল পারফরম্যান্স করেও সে ভাবে বাহবা পাননি সমর্থকদের। কিন্তু মুম্বইয়ে ফাইনালের পর ছবিটা পুরো পাল্টে গিয়েছে। বেটেকে ঘিরেই দমদম বিমানবন্দর থেকে দক্ষিণ কলকাতার এক অভিজাত শপিং মলে উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। ফিকরুর পাশাপাশি এ দিন বেটেকে নিয়েও আবেগের বাঁধ ভেঙেছিল। সেলফি তোলার আব্দার, তাঁর সই নেওয়ার জন্যও হুড়োহুড়ি। সব মিলিয়ে আটলেটিকোর নতুন নায়ক এ দিন বেটেই।
শহরের প্রেমে পড়ে যাওয়া তিনি বেটে নিজের আইএসএল সাফল্য এবং ট্রফি উত্সর্গ করে গেলেন কলকাতাকেই। “কলকাতাকে আমি ভুলতে পারব না। আশা করি, কলকাতাও আমাকে মনে রাখবে। কলকাতাবাসীর জন্যই এই সাফল্য। তাই ওদেরকেই উত্সর্গ করলাম ট্রফি,” বাসে ওঠার আগে হাসতে হাসতে বলে গেলেন হাবাসের এই তুরুপের তাস।