বাগান কোচকে সান্ত্বনা সবুজ-মেরুনের ঘরের ছেলের। ম্যাচ শেষে করিম ও সুব্রত। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
মোহনবাগান-০
ইউনাইটেড স্পোর্টস-০
• অবনমনের দুশ্চিন্তা নিয়েই সিঙ্গাপুরের বিমান ধরলেন করিম বেঞ্চারিফা!
• মোহনবাগানের ঘরের ছেলের দাপটে ঝুলে থাকল সবুজ-মেরুনের আই লিগ-ভবিষ্যৎ!
• ওডাফার বদান্যতায় অবনমন আতঙ্ক কাটল না সওয়াশো বছরের ক্লাবের!
উপরের যে কোনও একটা হেডলাইন রবিবারের হাইভোল্টেজ ম্যাচের জন্য অনায়াসে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মোহনবাগান কোচের কথা শুনে মনে হল তাঁর পছন্দের হেডিং, ‘ওডাফার বদান্যতায়...।’
ম্যাচ শেষ হতেই ড্রেসিংরুমে ছুটলেন করিম। ফুটবলারদের সঙ্গে কোনও বাক্যবিনিময় না করেই সিধে সাংবাদিক সম্মেলনে। তার পরে সোজা গাড়িতে চড়ে হোটেল। বাগান কোচের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ পরিষ্কার। যার কারণ একটা নয়, অনেক। ২৩ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট যে, কোনও ভাবেই ‘সুরক্ষিত’ নয়! মহমেডান (২১), চার্চিল (১৯), ইউনাইটেড (২৩) ও রাংদাজিদ (২৪) সবাই তাড়া করছে।
রবিবার দুপুরে কল্যাণী স্টেডিয়ামে ইউনাইটেড স্পোর্টসের বিরুদ্ধে মোহনবাগান যে অবনমন বাঁচানোর সংগ্রামে নেমেছে, সেটা দেখে অন্তত বোঝার উপায় নেই। ওডাফাদের খেলায় এখন না আছে সেই ঝাঁঝ, না জেদ। কেবল বিরক্তিকর ফুটবল প্রদর্শনী। গোটা নব্বই মিনিটে খুব কম সময়ই মনে হয়েছে তিন পয়েন্টের লক্ষ্যে খেলতে নেমেছেন সবুজ-মেরুন জার্সিধারীরা। সবচেয়ে করুণ অবস্থা ওডাফার! গোল করা তো দূরের কথা, খেলার ইচ্ছাটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছেন! শুরুতে কাতসুমি এবং শেষের দিকে উজ্জ্বল হাওলাদারের তাঁর পায়ে সাজিয়ে দেওয়া বলগুলো এত সহজে বিপক্ষের পায়ে তুলে দিলেন, যা দেখে বিরক্ত করিমকে দু’একবার রিজার্ভ বেঞ্চে কপাল চাপড়াতে দেখা গেল। নব্বই মিনিট খেললেন ঠিকই, তবে শুধুই হাঁটলেন। নোট-বুকে নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারের রিপোর্ট কার্ড— দু’টো ফ্রি-কিক নষ্ট, বক্সের মধ্যে পাঁচ থেকে ছ’টা গোলের সুযোগ নষ্ট। মাঠের বাইরের কাজে ও নতুন মরসুমের দল বদলের দিকে এত বেশি মন দিলে ফুটবল খেলাটা হয় কি? করিম বলছিলেন, “ওডাফা আজ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে আমাদেরই ম্যাচ জেতা উচিত ছিল। ও একেবারেই খেলতে পারেনি। আমার সমস্যা, এই মুহূর্তে ওর বদলি আমার টিমে নেই।” করিমকে আরও একটা দুশ্চিন্তা আই লিগের শেষ ম্যাচে তাড়া করবে। বাগান-রক্ষণে ইচের অনুপস্থিতি।
রবিবারের ম্যাচে ওডাফা ‘খলনায়ক’ হলে নায়কের নাম সুব্রত ভট্টাচার্য। একেবারে অঙ্ক কষে বাগানের দুই নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার ওডাফা-ক্রিস্টোফারের পায়ে শিকল বেঁধে রাখলেন। হতে পারে, নিজের দলে এক জন প্রকৃত স্ট্রাইকারের অভাবে তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেন না। কিন্তু তাঁর ‘ম্যাচ রিডিং’ ক্ষমতায় যে এখনও জং পড়েনি, সেটা আবারও প্রমাণ করে দিলেন ময়দানের বাবলু। ইউনাইটেড কোচের মাত্র তিনটে চালেই কুপোকাত করিম। ১) অনুপম ও বেলোর চক্রব্যূহে ওডাফা বোতল-বন্দি। ২) শৌভিক চক্রবর্তীর ধ্বংসাত্মক ফুটবলে বাগানের মাঝমাঠ নিষ্পৃহ। ৩) দীপক মণ্ডলের বিদ্যুত গতির উইং-প্লে। বাগান ফুটবলাররা যেখানে ইউনাইটেড বক্সের আশেপাশে পৌঁছেই বল পজেশন হারিয়ে ফেলছেন, সেখানে বলদীপের একটা হেড বাগান-ক্রসপিসে লাগে। রফিক ও ওয়াহিদের থেকে একটা করে বিপজ্জনক হেড বাঁচান শিল্টন। সুব্রতর কোচিংয়ে কিছু না হোক ইউনাইটেড রক্ষণ যে দারুণ উন্নতি করেছে, সেটা বিপক্ষ কোচ নিজেও স্বীকার করে গেলেন, “দু’টো কারণে জিততে পারলাম না। এক, ইউনাইটেড ডিফেন্স ও গোলকিপার। দুই, হাফচান্সগুলো কাজে না লাগাতে পারা।”
গোটা ম্যাচে মোহনবাগান এক বারই অব্যর্থ গোলের সুযোগ পেয়েছিল। কুড়ি মিনিটে কাতসুমির শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এখানেও ওডাফা যদি আরও একটু তৎপরতা দেখাতে পারতেন, তা হলে মোহনবাগান এ দিনই অবনমন-গাঁট খুলে ফেলত! রেফারির চোখ এড়িয়ে যাওয়া দু’টো ঘটনাও এ দিন অস্বস্তি বাড়ালো করিম ও সুব্রতর। ম্যাচে একবারই ইউনাইটেড ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে গোলকিপারকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার। কিন্তু রেফারি কাতসুমিকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে অ্যাডভান্টেজ দিতে ভুলে যান মোহনবাগানকে। সুব্রতর আবার আফসোস, “আমাদের নিশ্চিত পেনাল্টি দিল না। বলটা পরিষ্কার হাতে লেগেছিল ওদের ফুটবলারের।”
মোহনবাগান: শিল্টন, ইচে, প্রীতম, শৌভিক, কিংশুক, ডেনসন (মণীশ), জাকির, পঙ্কজ (উজ্জ্বল), কাতসুমি, ক্রিস্টোফার, ওডাফা।