মুম্বইয়ে নির্বাচনী বৈঠক সেরে বেরোচ্ছেন সন্দীপ পাটিল।
টানা তিন ঘন্টা বৈঠক করলেন জাতীয় নির্বাচকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া সফরের জন্য কোনও চূড়ান্ত দল বেছে উঠতে পারলেন না। বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হল প্রায় এক সপ্তাহ। নির্বাচকদের বৈঠক নিয়ে বোর্ডের দফতরে দিনভর যা নাটক দেখা গেল, তাতে জল্পনা চরমে উঠল, মুদগল রিপোর্ট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের শুনানির পরই কি দল ঘোষণা হবে?
বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল অবশ্য বলেছেন, “সুপ্রিম কোর্টের শুনানির সঙ্গে দল বাছাইয়ের কী সম্পর্ক আছে? আদালত তো আর আমাদের দল বাছতে বারণ করেনি।” কিন্তু রাতে বোর্ডের এক প্রভাবশালী কর্তার বক্তব্য, “সুপ্রিম কোর্টে চেন্নাই সুপার কিংসের ক্রিকেটারদের (ধোনি-রায়না-জাডেজাদের) ভবিষ্যত্ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বোধহয় দল গড়তে চাইছেন না নির্বাচকরা। আগামী সোমবার ছবিটা স্পষ্ট হওয়ার পরই হয়তো দল ঘোষণা করবেন।”
বোর্ড সচিবের দেওয়া সরকারি কারণটা অবশ্য একদম উল্টো। তিনি বললেন, “সবে তো চলতি সিরিজে একটা ওয়ান ডে হয়েছে। আরও দু’টো ওয়ান ডে দেখে তার পর অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজের দল বাছতে চাইছেন নির্বাচকরা।” কিন্তু ক্রিকেট মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ওয়ান ডে-র পারফরম্যান্স দেখে টেস্টের দল কেন বাছবেন নির্বাচকরা? শেষ দুই ওয়ান ডে-র দল বাছা নিয়ে এই যুক্তি দেওয়া হলে, তা হয়তো মানা যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা মানতে অসুবিধা হচ্ছে অনেকেরই। আবার এও শোনা যাচ্ছে, টিম হয়তো বেছে ফেলেছেন নির্বাচকেরা। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা ভেবে হয়তো সরকারি ঘোষণা আপাতত স্থগিত রাখা হল।
তা ছাড়া টিম যদি বাছা না-ই হয়, তা হলে তিন ঘন্টা ধরে বৈঠকে কী আলোচনা হল? পটেলের ব্যাখ্যা, “অনেক কিছু। অস্ট্রেলিয়ায় টিম কম্বিনেশন কেমন হওয়া উচিত। ক্রিকেটারদের গ্রেডেশন (যা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আসন্ন বার্ষিক সভায়)। পরবর্তী নির্বাচনী বৈঠকের সূচি। এইসব নিয়ে আলোচনা হয়।” তা ছাড়া কটকে ডান পায়ের পেশিতে চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া পেসার বরুণ অ্যারনের জায়গায় দলে স্টুয়ার্ট বিনিকে আনার সিদ্ধান্তও এই বৈঠকে হল। কিন্তু এই আলোচনাতেই তিন ঘন্টা লেগে গেল! প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কোন দল বাছাই করতে তাঁরা বসছেন, তা নিয়েও ধন্দে ছিলেন নির্বাচকরা। বৈঠকে ঢোকার আগে এক টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে একজন যখন বললেন, “অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজের দল বাছা হবে”, অপর এক নির্বাচক বলেন, “শেষ দুটো ওয়ান ডে-র দল বাছতে বসছি।” ফলে আদৌ দল বাছার উদ্দেশ্য ছিল কি না নির্বাচকদের, তা নিয়েও সংশয় দেখা দেয়। ভারতীয় দলের অস্ট্রেলিয়ায় রওনা হওয়ার কথা ২১ নভেম্বর। তার মাত্র দশ দিন আগে দল বাছা হলে যে তাঁদের বিমান ও হোটেল বুকিং সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে, তা বোর্ডের এক কর্তা স্বীকার করে নিলেও বোর্ড সচিব বললেন, “সে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এক সপ্তাহ সময় পেলেও তাতে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।” বোর্ডসূত্রের খবর, বুকিং সব প্রায় হয়েই গিয়েছে। কয়েকটিতে পরিবর্তন বা বাতিল করা হবে বলে আগাম জানিয়ে রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
নির্বাচকদের এই বৈঠক শুরুর আগেই অবশ্য ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের লাগোয়া ক্রিকেট সেন্টারে বোর্ডের আইনজীবীরা বৈঠকে বসে পড়েন ১০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের শুনানির প্রস্তুতি নিতে। বোর্ডের অন্যতম প্রধান আইনজীবী অখিলা কৌশিক ও তাঁর দলের সতীর্থরা এ দিন প্রায় সারা দিন ধরেই সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন সম্ভাব্য রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের কী প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনা সেরে নেন বলে জানা গেল।