২৯ বলে ৫২*, ৩×৪, ৫×৬। ছবি: বিসিসিআই।
সারা দিন ধরে কাঠফাটা রোদে ক্লাবের ম্যাচ খেলে বাড়ি ফিরে যখন সন্ধ্যায় টিভির সামনে বসলাম ডিডি-আরসিবি ম্যাচটা দেখতে, তখন যে প্রত্যাশাগুলো ছিল, সেগুলোয় এক এক করে ধাক্কা লাগতে দেখে বেশ হতাশ লাগছিল।
প্রথম ধাক্কাটা লাগল লক্ষ্মীকে দলে দেখতে না পেয়ে। লক্ষ্মীরতন শুক্ল কেন এই দিল্লি দলে থাকবে না, তার কোনও যুক্তি খুঁজে পেলাম না। মায়াঙ্ক অগ্রবাল যদি প্রথম এগারোয় খেলতে পারে, তা হলে লক্ষ্মী নয় কেন? দিল্লি যে অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল, এমন পরিস্থিতি থেকে দলকে টেনে তোলার অভিজ্ঞতা লক্ষ্মীর আছে।
দ্বিতীয় ধাক্কা, অশোক দিন্দাকে শুরুতে বোলিংয়ে না আসতে দেখে। আমি ওর সঙ্গে তো সারা বছরই খেলেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ও নতুন বলে অনেক ধারালো। এমন একটা সময় অশোক বল করতে এল, যখন উল্টোদিকের ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডের গতি বাড়াবেই বাড়াবে। তার উপর সামনে রস টেলর, জেপি দুমিনির মতো ব্যাটসম্যান। তখন ওর মার খাওয়ারই কথা।
বেঙ্গালুরু ইনিংসের শুরুতেই শামি উইকেট তুলে নিলেও দিল্লিকে জয়ের রাস্তায় আনতে পারল না একটাই কারণে। যুবরাজ সিংহকে আবার দেখা গেল ভিন্টেজ ফর্মে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের সেই যন্ত্রণার কথা নিশ্চয়ই ভুলতে পারেনি যুবি। এ দিন দিল্লিকেই বেছে নিল সেই জ্বালা মেটানোর জন্য। ২৯ বলে অপরাজিত ৫২। রয়েছে পাঁচটা ছয়ও!
ফাইনালে হারের পর যুবরাজের বাড়িতে ঢিল পড়েছে। অপমানিত হতে হয়েছে প্রতিটি পদক্ষেপে। আমরা জানতাম, এই আইপিএলটা যুবরাজের কাছে অগ্নিপরীক্ষা। ব্যর্থ হলে ক্রিকেট জীবনই মহাঅনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। বৃহস্পতিবার যে যুবরাজকে শারজায় দেখলাম, তার পর একটা কথা বলতেই হবে। যে ছেলেটা মারণ রোগকে হার মানিয়ে এসেছে, সে যে এত সহজে বাইশ গজের লড়াই থেকে সরে যাবে না, সেটা আমাদের আগেই বোঝা উচিত ছিল। যুবরাজ সিংহের শোকগাথা লেখার সময় এখনও আসেনি। দিল্লির ১৪৫ রান কুড়ি বল বাকি থাকতে দু’ উইকেট হারিয়ে তুলে নিল আরসিবি। তাও ক্রিস গেইলকে ছাড়া।
মনোজকে ফিরিয়ে বরুণের হুঙ্কার। ছবি বিসিসিআই।
যাই হোক, আমার বাংলার সতীর্থদের কথায় আবার আসি। এ দিন অশোকের যেটা করা উচিত ছিল, তা হল ব্যাটসম্যানকে যত পারো ইয়র্কার দাও। ও সেই চেষ্টাটা করলেও ওর ইয়র্কারগুলো ঠিক মতো পড়েনি। এই ক্রিকেটটা এমন একটা স্তরের, যেখানে ভুল করতে শুরু করলে, তার মাশুল দিতে হবে মারাত্মকভাবে। সাধারণ ইয়র্কারটাই যেখানে ঠিকমতো পড়ছে না, সেখানে ওয়াইড ইয়র্কার ওর চেষ্টা করা উচিতই হয়নি। তবু করল এবং স্বাভাবিক ভাবেই ভুলও হল। তখন অশোকের বেসিকে ফিরে যাওয়া উচিত ছিল। পরের ম্যাচগুলোতে ওকে ডট বল বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।
আসলে মাথায় রাখতে হবে বোলারই কিন্তু ব্যাটসম্যানকে খেলায়। যেটা শামির মাথায় ছিল। বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্যে এ দিন শামির বোলিংই একমাত্র স্বস্তির কারণ। ওর বোলিংয়ের পারফেকশন নিয়ে তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। একেবারে ঠিক সময়ে যেমন বল করা দরকার, ও তেমনই করে গেল। ভারতীয় দলের এক নম্বর স্ট্রাইক বোলারের কাছ থেকে এটাই আশা করা যায়। দিন্দার চেয়ে ও যে কিছুটা এগিয়ে, তা প্রথম দুটো ওভারেই এ দিন প্রমাণ করে দিল শামি।
খারাপ লাগছে মনোজের জন্য। ওর আউটটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। শর্ট অব লেংথ বলটাকে গ্লান্স করতে গিয়ে ব্যাটে ঠিক মতো না লাগায় পার্থিবের হাতে জমা হয়ে গেল। প্র্যাকটিস ম্যাচেই সে দিন কত ভাল ব্যাট করেছিল মনোজ। ফর্মে নেই এ কথা বলা যাবে না। কিন্তু এটাই ক্রিকেট। একটু সামান্য ভুলেই অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে। তাই মনোজের আউট দেখে হা-হুতাশ করার কিছু নেই। আমার বিশ্বাস ওর ব্যাট থেকে রান আসবেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ১৪৫-৪ (দুমিনি ৬৭ ন.আ.। অ্যারন ১-৭)।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১৬.৪ ওভারে ১৪৬-২ (যুবরাজ ন.আ. ৫২, শামি ১-৩০)।