নির্বাচনের আগে মোহনবাগানে প্রতিদিনই নতুন নতুন নাটক!
ক্লাব প্রেসিডেন্ট বাবার পথ ধরেই বাগানের সহসচিব পদে সোমবার ইস্তফা দিলেন সৃঞ্জয় বসু।
সারদা-কাণ্ডে জামিন পাওয়ার পরই তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দল ছেড়েছিলেন সৃঞ্জয়। তা নিয়ে যে আলোড়ন পড়েছিল, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি চমক এ দিনের এই পদত্যাগে! কারণ সচিব অঞ্জন মিত্রের দীর্ঘ অসুস্থতার সময় ক্লাবের সব কিছু সামলেছিলেন ময়দানের পরিচিত মুখ টুম্পাই-ই। ক্লাবের একশো পঁচিশ বছরের অনুষ্ঠানের দায়িত্বেও ছিলেন।
পদত্যাগপত্রে সৃঞ্জয় যা লিখেছেন তা অবশ্য খুব ইঙ্গিতবাহী। সচিবকে ‘অঞ্জনকাকু’ সম্বোধন করে পদত্যাগী সহসচিব লিখেছেন, “বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে কর্মসমিতির সঙ্গে সম্পর্ক আর দীর্ঘায়িত করতে চাই না।” পাশাপাশি অবশ্য জানিয়েছেন, ক্লাবের তাঁবু সংস্কার ও ক্রিকেট টিমের দায়িত্বে তাঁকে রাখা হলে সেই দায়িত্ব পালন করবেন। যা বেশ মজার।
সৃঞ্জয় তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করার পর ক্লাবের কর্মসমিতিতে থাকা রাজ্যের মন্ত্রীরা, মেয়র, মেয়র পরিষদের সদস্যরা জোট বেঁধে নির্বাচনে নামার প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন। ‘বর্তমান পরিস্থিতি’ বলতে বাগান সহসচিব সেই দিকে ইঙ্গিত করেছেন কি না, তা নিয়ে তোলপাড় ময়দান। বোঝাই যাচ্ছে, জামিন পাওয়ার পর কোনও বিতর্কে আর জড়াতে চাইছেন না টুটু-পুত্র। কারণ সিএবি-র বিভিন্ন পদে থাকলেও সেখান থেকে কিন্তু পদত্যাগ করেননি সৃঞ্জয়। সবুজ-মেরুনের মতো বিতর্ক সেখানে নেই বলেই থেকে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে ক্লাব প্রেসিডেন্ট টুটু বসু, অর্থসচিব দেবাশিস দত্তের মতো সৃঞ্জয়ও আর দাঁড়াতে চাইছেন না।
যে চার জন শতবর্ষ পেরোনো ক্লাব শাসন করতেন, তাঁদের তিন জন সরে দাঁড়ানোর পর কী বলছেন বাকি থাকা এক জনক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্র?
“দাঁড়ালে আমরা চার জন দাঁড়াব। না হলে কেউ দাঁড়াব না।” বলে দিয়েছেন অঞ্জন। আর তার পরই জল্পনা শুরু হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কি নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাইছে শাসকগোষ্ঠী? বিরোধীদের হাতে ক্লাবের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে কি মজা দেখতে চাইছে তারা? এখনই এ সব জল্পনার উত্তর পাওয়া কঠিন। কারণ ‘মোহন-অপেরা’য় প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঘটে।
সাড়ে চার বছর ট্রফি নেই বাগানে। তার উপর ফুটবলারদের বকেয়া নিয়ে নানা ঝামেলা। নির্বাচন ঘিরে চাপান-উতোর তুঙ্গে। এই অবস্থায় শাসকদলের একের পর এক পদত্যাগে উচ্ছ্বসিত সুব্রত-প্রসূনের মতো প্রাক্তন ফুটবলাররা। যাঁরা সব অর্থেই শাসক-বিরোধী।
সচিব অঞ্জন মিত্র যখন এ দিন বিকেলে ডার্বি বিতর্কে ক্লাবের অবস্থান ঠিক করতে কোচ সঞ্জয় সেন এবং টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সভা করছেন, তখন ক্লাবের ড্রেসিংরুমের দখল নিয়েছিলেন সুব্রত-প্রসূন-শ্যামল-দিলীপ পালিতের মতো প্রাক্তনরা। সেখান থেকে বেরিয়ে সুব্রত বললেন, “ওদের পালানো ছাড়া উপায় নেই। এত কেলেঙ্কারি নিয়ে কেউ কখনও আমাদের ক্লাবের পদে থাকেনি।” আর সৃঞ্জয় নিয়ে সাংসদ-ফুটবলার প্রসূনের প্রতিক্রিয়া, “ক্লাবে স্বচ্ছতা আনতে হলে ওদের সরাতে হবে। ক্লাবের কুড়িটা পদের মধ্যে দশ জন প্রাক্তন ফুটবলারকে আনতে হবে এ বার।” এবং কী আশ্চর্য, ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে এসে প্রসূনের দলেরই মন্ত্রী, বাগান কর্মসমিতির সদস্য অরূপ বিশ্বাসও প্রাক্তন ফুটবলারদের বেশি করে ক্লাবে আসার পক্ষে সওয়াল করছেন।
বর্ধমানের মাটি উত্সবের শেষে রাজ্যের আর এক মন্ত্রী, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ক্লাবের অন্দরমহলের নতুন জোটের তথ্য আরও ফাঁস করে দিলেন। বললেন, “যাঁরা হিসাব দেবেন তাঁরাই যদি সবাই পদত্যাগ করে চলে যান, তা হলে সাধারণ সভায় উত্তর দেবে কে? আমরা তো কিছুই জানি না। আমি শহরের বাইরে। তাই অতীনকে (মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ) বলেছি কর্মসমিতির সভা ডাকতে।”
প্রসূন-অরূপ-সুব্রত-অতীন, সবাই তৃণমূলের পদাধিকারী। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, টুটু-সৃঞ্জয়দের জায়গায় প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়ে এসে বাগানের ক্ষমতা পেতে চাইছেন কি মেয়র-মন্ত্রীরা?
বাগান সচিব কিন্তু বললেন, “বাগান চলবে বাগানের মতোই। কর্মসমিতির সভা ডাকছি। দেখুনই না তার পর কী হয়!”