সাহস দেখিয়ে পাওয়া জয়ের তৃপ্তিই আলাদা

আঠাশ বছর পর লর্ডসে টেস্ট জয়ের গুরুত্ব যতটা না বেশি, তার চেয়েও ভারতের এই সাফল্য আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য একটা কারণে। এমন সাহসী পারফরম্যান্স এবং তার থেকে আসা সাফল্যের তৃপ্তিই আলাদা। সে কারণেই লর্ডসের এই জয়কে ২০০২-এ হেডিংলে কিংবা ২০০৬-এ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জোহানেসবার্গ টেস্টের সাফল্যের পাশেই রাখব। এই জয়গুলো অন্য টেস্ট জয়ের চেয়ে অবশ্যই আলাদা।

Advertisement

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩১
Share:

ভুবির মেজাজটাই তাতিয়ে দিয়েছে দলকে।

আঠাশ বছর পর লর্ডসে টেস্ট জয়ের গুরুত্ব যতটা না বেশি, তার চেয়েও ভারতের এই সাফল্য আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্য একটা কারণে। এমন সাহসী পারফরম্যান্স এবং তার থেকে আসা সাফল্যের তৃপ্তিই আলাদা। সে কারণেই লর্ডসের এই জয়কে ২০০২-এ হেডিংলে কিংবা ২০০৬-এ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জোহানেসবার্গ টেস্টের সাফল্যের পাশেই রাখব। এই জয়গুলো অন্য টেস্ট জয়ের চেয়ে অবশ্যই আলাদা।

Advertisement

যদি জিজ্ঞেস করেন, এগুলো আমার কাছে ‘স্পেশ্যাল’ কেন, তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। বিদেশের মাঠে এই তিন বারই হোম টিমের পছন্দের সবুজ উইকেটে খেলে টেস্ট জিতেছে ভারত। প্রতি বারই যে সাহস দেখিয়েছে, বুক চিতিয়ে লড়েছে, সে জন্যই এই তিনটে সাফল্য আর পাঁচটা টেস্ট জয়ের মতো নয়। এর থেকেই প্রমাণ হয়, যত বার বিদেশে ভারতের বিপক্ষরা তাদের বোলারদের জন্য উইকেট তৈরি করে রাখে, আমাদের বোলাররা কিন্তু সেই উইকেটেই কুড়িটা উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই বিদেশে এমন উইকেটই ভারতীয় দলের পক্ষে ভাল। তা ছাড়া গত ১৪ বছরে বিদেশের মাটিতে ভারতের ব্যাটিংও যথেষ্ট ভাল হয়েছে। শুধু ২০১১ ছাড়া। এটাও কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে যথেষ্ট ইতিবাচক ব্যাপার।

এ বারের লর্ডসের উইকেটে টস হারা মানেই ছিল বেশ পিছিয়ে থেকে মাঠে নামা। অথচ ভারত পাঁচ দিনের একটা দিনও পিছিয়ে পড়েনি। ভারত যদি এই উইকেটে শুরুতেই বল করত, তা হলে ইংল্যান্ড দেড়শোও টপকাত কি না, আমার সন্দেহ আছে। সেই উইকেটে দাঁড়িয়ে অজিঙ্ক রাহানে, মুরলী বিজয়রা যে টেকনিক দেখাল, সিম সহায়ক কন্ডিশনে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর টেলএন্ডে ভুবনেশ্বর কুমার দেখাল, বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিভাবান প্লেয়ার না হয়েও ইচ্ছাশক্তি আর সিংহহৃদয় থাকলে এই স্তরেও সফল হওয়া যায়। ভুবির ওই মেজাজটাই দলকে দারুণ ভাবে তাতিয়ে দিয়েছিল। ড্রেসিংরুমে এমন একজন সতীর্থ থাকলে তাকে দেখে বাকিরাও ভিতরে ভিতরে জ্বলে ওঠে। তখন গোটা দলের মধ্যে যেন একটা দাবানল লেগে যায়। প্রথম ইনিংসে ওর ব্যাটিং দেখেই অন্যেরা প্রেরণা পেয়ে গেল এই ভেবে যে, ও যদি পারে, তা হলে আমিই বা নই কেন?

Advertisement

কিন্তু এর পর ইংল্যান্ডের কী হবে? আমার ধারণা, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে যাবতীয় সিদ্ধান্ত হয় অ্যাসেজের ফল দেখে। যা মোটেই ঠিক নয়। গত অ্যাসেজের পর ওরা নিজেদের ব্যর্থতা নিয়ে গেল-গেল রব তুলেছিল। অস্ট্রেলিয়ায় যে ওরা সাধারণমানের ক্রিকেট খেলেছিল, তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ নেই। কিন্তু তার ফলে যে বড়সড় পরিবর্তনগুলো করল, সেগুলোই এখন আরও বেশি ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ইংল্যান্ডের। ইংরেজদের ব্যাটিংয়ে ম্যাচ জেতাবার লোক কোথায়? বিপক্ষের ক্যাপ্টেনের কাছে যা বেশ স্বস্তিদায়ক। মাঠে ভাল ও বাধ্য ছেলের চেয়ে বেশি দরকার কাজের ছেলে।

অ্যালিস্টার কুকের জন্য খুব খারাপ লাগছে। অসাধারণ ক্রিকেটার, শুধু নেতৃত্বের চাপ ওকে শেষ করে দিচ্ছে। জানি না, ক্যাপ্টেন কুকের ভবিষ্যৎ কী। তবে ক্রিকেটার কুককে দলে না রাখার কথা ভেবে শিউরে উঠতে পারেন ওদের নির্বাচকরা। কুকের কাঁধ থেকে নেতৃত্বের বোঝা নামিয়ে দিলে হয়তো সেটা ওর পক্ষে শাপে বর হবে। কিন্তু আমি কোনও দিনই ক্যাপ্টেনকে সরিয়ে দলের সমস্যা মেটানোর পক্ষপাতী নই। নির্বাচকদেরও এটা মনে রাখতে হবে যে ক্যাপ্টেনের সাফল্য নির্ভর করে দলের উপর। তাকে যদি কয়েকজন ম্যাচ উইনার নিয়ে গড়া একটা দল দেওয়া হয়, তা হলে সে-ও দলের জন্য অনেক ভাল কিছু করতে পারে।

এখন প্রশ্ন পরের তিনটে টেস্টেও কী সবুজ উইকেট রাখবে ইংল্যান্ড? যদিও এখন সে রকম উইকেটই দরকার ওদের। এবং সে রকমই উইকেট যদি হয়, তা হলে কিন্তু ভাববেন না, সিরিজটা শেষ হয়ে গিয়েছে! এই সিরিজ জমবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন