ক্রমাগত উঠতে থাকে ধোঁয়া। এমন জায়গায় বেড়াতে যান লোকে। কোথায় সেই স্থান? ছবি: সংগৃহীত।
এ ভারি মজার ব্যাপার। চোখের সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে পার্বতী নদী। গলগলিয়ে উঠছে ধোঁয়া। সেই ধোঁয়ায় ঢেকেছে আকাশ-বাতাস। কৌতূহলী চোখে ধোঁয়ার উৎস খোঁজার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হতে হয়। কারণ, নদীর আশপাশে রাস্তা। যেখানে যত নালা-নর্দমার মতো স্থান রয়েছে, সব জায়গা দিয়েই উঠছে ধোঁয়া।
বৈচিত্রে ভরা এ দেশে পাইন-দেবদারুই অরণ্য, বাঘের গর্জন, হিমালয়ের গগনচুম্বী অবস্থান, সমুদ্রের ঢেউ ভাঙা যেমন দ্রষ্টব্য, তেমনই রয়েছে উষ্ণ প্রস্রবণ। যেখানে জল সর্বদাই তপ্ত। সর্বদা সেখান থেকে নির্গত হয় ধোঁয়া।
অরণ্য, পাহাড়, সমুদ্র, মরুভূমি দেখা হয়েছে? এবার তবে চলুন উষ্ণ প্রস্রবণ দেখতে। ভারতের নানা স্থানে রয়েছে এমন জায়গা। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে যত গভীরে যাওয়া যায়, ভূগর্ভের তাপমাত্রা ততই বাড়তে থাকে। কোনও কারণে ভূ পৃষ্ঠের জল অতি গভীর ফাটল দিয়ে ভূগর্ভের গভীর পর্যন্ত পৌঁছলে তা তপ্ত হয়ে ওঠে। গরম জলের বাষ্প, জল এক সময় ভূগর্ভের ফাঁকফোকর দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছয়।তখনই তৈরি হয় উষ্ণ প্রস্রবণ।
মণিকর্ণ
হিমাচল প্রদেশের মনিকর্ণে গেলে দেখতে পাবেন উষ্ণ প্রস্রবন। ছবি:সংগৃহীত।
ভারতে সবচেয়ে ভাল ভাবে উষ্ণ প্রস্রবণ দেখতে হলে যেতে পারেন হিমাচল প্রদেশের মণিকর্ণে। জায়গাটি হিন্দু এবং শিখদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। কুল্লু জেলার পার্বতী উপত্যকায় রয়েছে স্থান। বয়ে গিয়েছে পার্বতী নদী। নদীর এক পাশে রাস্তা এবং রাস্তার পাশ দিয়ে উঠে গিয়েছে পাহাড়। পাইন গাছগুলি যেন রণপা পরে দাঁড়িয়ে সেখানে। এই স্থানেই রয়েছে গুরুদ্বার। বছরভর এই স্থান ধোঁয়ায় ঢেকে থাকে। রাস্তাঘাটে হাঁটতে গেলেও দেখা যায়, কোনও ফাঁকফোকর দিয়ে মাটির নীচ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।
উষ্ণ প্রস্রবণের জলে মিশে থাকে সালফারের মতো একাধিক খনিজ। সেই কারণে, এই জল নাকের কাছে আনলে বিশেষ গন্ধ মেলে। অনেকেই মনে করেন, সালফার সমৃদ্ধ জলে স্নান করলে চর্মরোগ সেরে যায়।
মণিকর্ণ শুধু তীর্থক্ষেত্র নয়, প্রাকৃতিক ভাবেও এই জায়গা খুবই সুন্দর। হিমাচলের অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। দিল্লি বা চণ্ডীগড় থেকে সড়ক পথে মণিকর্ণ যাওয়া যায়। বাস ধরে যেতে পারেন ভুন্টার। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে মনিকর্ণ। ভুন্টার থেকে দূরত্ব ৪০-৪৫ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে ট্রেনে বা বিমানে দিল্লি বা চণ্ডীগড় গিয়ে সেখান থেকে সড়কপথেও গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। মণিকর্ণের পাশাপাশি কুল্লু, কাসোলের মতো জায়গাগুলিও ঘুরে নিতে পারেন।
ইয়ুমথাং
ইয়ুমথাং -এও রয়েছে উষ্ণ প্রস্রবন। ছবি: সংগৃহীত।
সিকিমের উত্তর অংশে রয়েছে ইয়ুমথাং উপত্যকা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এই স্থানের খ্যাতি জগৎজোড়া। সিকিমের মঙ্গন জেলার পাহাড়ি জনপদ লাচুং। গ্যাংটক থেকে দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটারের মতো। লাচুং থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় ইয়ুমথাং ভ্যালি এবং জ়িরো পয়েন্ট। লাচুং নদীর তীরে ইয়ুমথাং-এ রয়েছে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ। এটি মণিকর্ণের মতো বিশাল জায়গা জুড়ে না হলেও, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। তবে উষ্ণ প্রস্রবণ পর্যন্ত পৌঁছতে অনেক সিঁড়ি ভাঙতে হয়। এমনিতেই ইয়ুমথাংয়ের উচ্চতা যথেষ্ট। তার উপর সিঁড়ি ভাঙার ধকল। তাই হাঁপিয়ে যেতে পারেন যে কেউ। এ ছাড়াও ইয়ম সামডং নামে এক জায়গায় রয়েছে উষ্ণ প্রস্রবণ। ইয়ুমথাং থেকে মূলত ১৫ কিলোমিটার দূরে এই স্থান। চারদিক ঘেরা পাহাড়ে।
বক্রেশ্বর
বক্রেশ্বরের উষ্ণ প্রস্রবনে রয়েছে স্নানের ব্যবস্থাও।
পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে উষ্ণ প্রস্রবণ। বীরভূম জেলার সিউড়ি থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে বক্রেশ্বরে একাধিক উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। কথিত, এখানে রয়েছে সতীপীঠ, শতাব্দী প্রাচীন শিবধাম এবং পুরাণের চরিত্র ঋষি অষ্টাবক্রের সাধনক্ষেত্র। উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করার জন্য তৈরি করা হয়েছে স্নানাগারও।