রোপওয়ে চেপে প্রকৃতি-ভ্রমণ। কোথায় কোথায় যেতে পারেন এমন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য? ছবি: সংগৃহীত।
পাহাড়ের কোনও ভিউ পয়েন্ট দাঁড়িয়ে উপভোগ করেছেন শ্বেতশুভ্র পর্বতশৃঙ্গ, দেখেছেন পাহাড় ঘেরা হ্রদ, পাইনের বন। কিন্তু পাহাড়ের উপর থেকে সে দৃশ্য কেমন লাগে? পাল্টে যায় কি সব কিছুই?
বিমানপথে আকাশ থেকে পাহাড়, উপত্যকা দেখা যায়। হেলিকপ্টারে চাপলেও সে দৃশ্য চোখে পড়ে। তবে সে দেখা অনেক উপর থেকে, খুঁটিনাটি চোখে পড়ে কই? পাহাড়, নদী, হ্রদের এমন ছবিই স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে রোপওয়ে থেকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পর্যটনের বিকাশে তৈরি হয়েছে এমন অনেক রোপওয়ে। কোথাও আবার পাহাড়ের উপরের মন্দিরের যাত্রাপথের ধকল কমাতেও ব্যবহৃত হয় তা। বেড়ানো এবং রোপওয়ে চড়ার শখ থাকলে জেনে নিন কোথায় কোথায় মিলবে সেই সুযোগ?
আউলি, উত্তরাখণ্ড
দীর্ঘ যাত্রাপথের রজ্জুপথের তালিকায় গোড়ার দিকেই রয়েছে যোশীমঠ-আউলি রোপওয়ে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০১০ মিটার উচ্চতায় তৈরি রোপওয়ের জনপ্রিয়তা আন্তর্জাতিক। বছরভর যাওয়া গেলেও, শীতের মরসুমেই কদর বাড়ে আউলির। জমাটি ঠান্ডায় জমে বরফ হয়ে যায় চারপাশ। সাড়ে ৪ কিলোমিটার পথ উঠতে রোপওয়ে তখন অন্যতম ভরসা। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি বরফ ঢাকা আউলির রূপ উপভোগে, স্কি করা-সহ রকমারি অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের টানে ভিড় জমান দেশ-বিদেশের অতিথিরা। রোপওয়ে চড়ে উপরে উঠতে সময় লাগে ২৫ মিনিট। উপরে ওঠা এবং নামা মিলিয়ে ১ ঘণ্টার যাত্রাপথ।
গুলমার্গ, জম্মু এবং কাশ্মীর
কাশ্মীরের গুলমার্গের রোপওয়ে গত কয়েক বছরে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ১৩ হাজার ফুট উচ্চতায় তৈরি গুলমার্গের গন্ডোলা এশিয়ার অন্যতম উচ্চ রোপওয়ে। দু’টি ধাপে এতে উপরে ওঠা যায়। এগুলি ফেজ় ১ এবং ২ নামে চিহ্নিত। ফেজ় ১-এ পৌঁছনো যায় কংডোরিতে। পরের ফেজ়ে কংডোরি থেকে আফরাওয়াত। শীতের মরসুমে যেমন বরফের সাম্রাজ্য চোখে পড়ে, বসন্তে তেমন সবুজ। মরসুমভেদে রূপও পাল্টে যায়। প্রথম ফেজ়ে পৌঁছতে মিনিট ১০-১৫ সময় লাগে। ১ থেকে ২ নম্বর ফেজ়ে পৌঁছতেও তা-ই।
ব্রহ্মপুত্র, গুয়াহাটি
গুয়াহাটি থেকে উত্তর গুয়াহাটি পর্যন্ত যাওয়া যায় পৌঁছনো যায় ৮ মিনিটে। ছবি: সংগৃহীত।
ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ১৮২০ মিটার পথ পাড়ি দেওয়া যায় রোপওয়েতে। সেই সঙ্গে উপভোগ করা যায় জলের সৌন্দর্য। রোপওয়ে থেকে পাহাড় দেখার অনুভূতি এক রকম, নদ দেখার অভিজ্ঞতা আলাদা। গুয়াহাটি থেকে উত্তর গুয়াহাটি পর্যন্ত যাওয়া যায় পৌঁছনো যায় ৮ মিনিটে। পানবাজার থেকে রাজদ্বার গ্রামে, ঢোলগোবিন্দ মন্দিরের কাছ পর্যন্ত রোপওয়েতে যাওয়া যায়।
গ্যাংটক, সিকিম
গ্যাংটকে গেলেও চেপে নিতে পারবেন রোপওয়ে। ছবি: সংগৃহীত।
পর্যটকদের কাছে সিকিম সব সময়েই জনপ্রিয়। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক শহরেই রয়েছে রোপওয়ে। যাত্রাপথ দীর্ঘ নয়, মাত্র ১ কিলোমিটার। তবে আকাশ পরিচ্ছন্ন থাকলে, মেঘ-কুয়াশার চাদর সরলে এই রোপওয়ে যাত্রা আজীবন থেকে যেতে পারে স্মৃতির পাতায়। পড়ন্ত বিকেল, সূর্যাস্ত, ব্যস্ত শহর— সবটাই চোখে পড়বে উপর থেকে। গ্যাংটকের এমজি মার্গে দেওরালি মার্কেট থেকে শুরু হয় রোপওয়ে যাত্রা, শেষ হয় তাসিলিঙে। যাত্রাপথে সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট।
দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ
আকাশ থেকে যদি চা-বাগান, উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তা হলে চেপে বসতে পারেন দার্জিলিঙের রোপওয়েতে। সিঙামারি থেকে রোপওয়ে যায় তুকভর চা-বাগান হয়ে সিংলা বাজার। এক দিকের যাত্রাপথে মিনিট ২০-২৫ সময় লাগে। যাওয়া-আসা মিলিয়ে ঘণ্টাখানেক। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে চা-বাগান, পাহাড়ি পাকদণ্ডী, সবুজ পাহাড়— সমস্ত সৌন্দর্য মিলেমিশে মনে হয়, এ যেন চিত্রকরের ক্যানভাস। তবে দার্জিলিং রোপওয়ে চেপে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা স্মরণীয় হলেও, রোপওয়েতে সওয়ার হতে দীর্ঘ লাইন পড়ে। ফলে দিনের বেশির ভাগটাই কেটে যায় এখানে।