Food Travel Destinations in India

কলকাতা ছাড়া ভারতের আর কোন কোন শহরে শুধু খাওয়ার জন্যই বেড়াতে যাওয়া যায়?

কোনও একটি জায়গায় গিয়ে শুধু সেখানকার সুস্বাদু খাবার খাওয়া নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সংস্কৃতি, ইতিহাস ও নানা ধরনের গল্পকথা জানা। সেই গল্পের গলিপথে ভ্রমণই হল কালিনারি ট্যুরিজ়ম বা খাদ্য পর্যটনের আসল আকর্ষণ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৫ ১১:২৮
Share:

ছবি : সংগৃহীত।

প্রকৃতির তুলির টান দেখতে কিংবা ইতিহাসের কাহিনি জানতে জানতে দেউল-প্রাসাদ-স্মৃতিস্তম্ভে ঘুরে বেড়ানো তো হয়েই থাকে। কিন্তু কোনও জায়গায় শুধু সেখানকার খাবার চেখে দেখার জন্য বেড়াতে গিয়েছেন কি? বিষয়টি কিন্তু একেবারেই অদ্ভুত বা আনকোরা নয়। দুনিয়া জুড়ে খাদ্য পর্যটনের রমরমা বহু দিন হল বেড়েছে। তার নানা রকমের নামও রয়েছে। কেউ বলেন 'ফুড ট্রাভেল', কেউ বলেন 'কালিনারি ট্যুরিজ়ম', আবার একে 'গ্যাস্ট্রো ট্যুরিজ়ম' নামেও ডাকেন কেউ কেউ। এই ধরনের বেড়ানোর বিশেষত্ব হল, কোনও স্থানকে তার খাবারের থালার মধ্যে দিয়ে জানা।

Advertisement

অর্থাৎ কোনও একটি জায়গায় গিয়ে শুধু সেখানকার সুস্বাদু খাবার খাওয়া নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সংস্কৃতি, ইতিহাস ও নানা ধরনের গল্পকথা জানা। সেই গল্পের গলিপথে ভ্রমণই হল কালিনারি ট্যুরিজ়ম বা খাদ্য পর্যটনের আসল আকর্ষণ। এমনিতে এ দেশে প্রতিটি রাজ্যই তাদের নিজ নিজ খাদ্যসম্ভারে আলাদা এবং আকর্ষণীয়। খাস বাংলাতেই এত ধরনের খাবার রয়েছে যে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে পর্যটকেরা কলকাতাতেও খাদ্য পর্যটনে আসেন।

এ শহরের ফুচকা, ঝালমুড়ি, কাঠি রোলের মতো সুস্বাদু ‘স্ট্রিটফুড’ চেখে দেখার পাশাপাশি চেলো কাবাব, কলকাতা বিরিয়ানি-চাঁপ, চিকেন আলা কিভ, কাটলেটের ফিউশন খাবারও চেখে দেখতে ভোলেন না খাদ্যপ্রেমীরা। আর তার সঙ্গে বাংলার খাস মিষ্টি দই, রসগোল্লা, ছানার মিষ্টি তো রয়েছেই। তবে কলকাতার সঙ্গে খাবারে টক্কর দেওয়ার মতো এ দেশে আরও বেশ কিছু শহর রয়েছে। যেখানে আপনি খাদ্য পর্যটনে যেতে পারেন। তেমনই পাঁচটি শহর আর তার বিশেষ খাবারের নাম জেনে নিন।

Advertisement

১। লখনউ

মুখে দিলেই গলে যাওয়া গলৌটি কবাব। যাকে 'টুন্ডে কবাব' নামেও চেনেন লখনউয়ের কবাবপ্রেমী মানুষজন, শুধু সেটিই খাওয়ার জন্য লখনউয়ে যাওয়া যায়। তবে এক বার গিয়ে পড়লে লখনউয়ের নিজস্ব স্টাইলে বানানো বিরিয়ানি, রাত থেকে ভোর অবধি রান্না হওয়া নিহারি, সুগন্ধী কোর্মা খেয়ে দেখতে ভুলবেন না। মোগলাই খাবারের খাঁটি স্বাদ পেতে হলে বেড়াতে আসতে হবে এই নবাবের শহরে। আর মিষ্টিতে মাখন মালাই, শিরমল এবং শাহি টুকরা না খেলে লখনউ ভ্রমণ বৃথা।

২। অমৃতসর

এ শহরে এসে অমৃতসরি কুলচা না খাওয়া ‘পাপ’। আলু-পনির এবং অন্য সব্জির পুরে ঠাসা এই পঞ্জাবি তন্দুরী রুটি মুখে দিলেই স্বাদের ঘনঘটা। এর পাশাপাশি অমৃতসরের যে খাবারটি গোটা বিশ্বে বিখ্যাত, তা হল বাটার চিকেন। টম্যাটোর পিউরি আর মুরগির মাংস যে কোন অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে তা এই রান্না মুখে দিলে বোঝা যায়। এ ছাড়া পঞ্জাবকে থালা দিয়ে চিনতে হলে মক্কি দি রোটি আর সর্ষো দা শাগ না খেলেই নয়। অমৃতসরের একটি জনপ্রিয় ‘ফাস্টফুড’ বান টিক্কি। পাউরুটির মধ্যে আলুর প্যাটি দিয়ে চাটনি সহ পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া লস্যি, কুলফা, জিলিপির মতো মিষ্টিও আছে। তবে যেটা না খেলে অমৃতসরের খাদ্যভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, তা হল স্বর্ণমন্দিরের লঙ্গরখানার লঙ্গর এবং সুজির হালুয়া। যাকে 'কড়া প্রসাদ' বলেন পঞ্জাবিরা।

৩। ইনদওর

মধ্যপ্রদেশের এই শহর বিখ্যাত তার স্ট্রিট ফুডের জন্য। যার মধ্যে অন্যতম হল বিভিন্ন ধরনের চাট, পোহা-জলেবি (যা আদতে চিঁড়ের পোলাও আর জিলিপি কিন্তু একটু অন্য স্বাদে), ভুট্টে কা কিস, খোপরা প্যাটিস এবং নানা ধরনের কচুরি। এর মধ্যে ভুট্টে কা কিস খাবারটি আসলে কোরানো ভুট্টার সঙ্গে মশলা এবং দুধ দিয়ে তৈরি এক অদ্ভুত সুস্বাদু খাবার। খোপরা প্যাটিস আসলে আলুর প্যাটির ভিতরে নারকেল এবং নানা ধরনের মশলা দিয়ে তৈরি। যা চাটনি সহযোগে পরিবেশন করা হয়। ইনদওর তার কচুরির জন্যও বিখ্যাত। এর মধ্যে কড়াইশুঁটির পুর দেওয়া বাফলা কচুরির স্টলে ভিড় থাকে সব থেকে বেশি। তবে ইনদওরে গেলে সেখানারকার সরাফা বাজারে গিয়ে জিলিপি, রাবড়ি, মালপোয়া, কুলফি না খেলে বেড়ানো বৃথা যাবে।

৪। হায়দরাবাদ

হায়দরাবাদের খাবার মানে রাজকীয় ব্যাপার-স্যাপার। এখানে গেলে গুছিয়ে খাওয়াদাওয়া করার জন্য কিছু বাড়তি সময় চাই। কলকাতার মানুষ যতই নিজেদের বিরিয়ানি নিয়ে উন্নাসিক হোন, হায়দরাবাদে এলে সেখানকার বিরিয়ানি চেখে দেখতেই হবে। সঙ্গে মির্চি কা সালান। রমজান মাসের সময়ে যদি আসেন, তবে মিস করা যাবে না হায়দরাবাদি হালিমও। আর কী কী খাবেন নিজামের শহরে? একটি অবশ্যই পত্থর কা গোস্ত। যে মাংস রান্না করা হয় গরম পাথরের উপর। খেতে হবে কিমা সামোসাও। বাঙালি শিঙাড়ার থেকে আলাদা হলেও এর স্বাদের জুড়ি মেলা ভার। হায়দরাবাদের কবাবেরও সুখ্যাতি আছে। তবে এখানে আরও একটি জিনিস যেটি না খেলে চলবে না, তা হল ইরানি চা। হায়দরাবাদের রাস্তায় পুরনো দোকানে এই চা খেতে হবে ওসমানিয়া বিস্কুট দিয়ে। মিষ্টিতেও হায়দরাবাদ পিছিয়ে নেই। এখানে এলে খেতে পারেন কুরবানি কা মিঠা এবং ডাবল কা মিঠা।

৫। দিল্লি

খাবারের শহরের কথা হলে দিল্লিকে বাদ দিয়ে কি সম্ভব? দিল্লির চাঁদনি চকের পরাঠেওয়ালে গলির খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তবে সুস্বাদু খাবারের এমন ঠিকানা দিল্লির গলিতে গলিতে। মঞ্জু কা টিল্লার মোমো হোক বা দরিয়াগঞ্জের বাটার চিকেন, পুরনো দিল্লির কবাব-নিহারি হোক বা দৌলত কি চাট কিংবা সাতসকালে দিল্লির কোনও এক ‘খাদ্যগলি’র ছোলে বাটুরে দিয়ে প্রাতরাশ— দিল্লির খাবার আপনার দিল জিতে তবে দম নেবে। এক কালে মোগলাই বাদশাহদের রাজধানী দিল্লিতে খাঁটি মোগলাই খাবার চেখে দেখার বহু জায়গা আছে। তবে তার সঙ্গে রয়েছে মন ভাল করে দেওয়া মিষ্টির সম্ভারও। রাবড়ি-ফালুদা, শোহ্‌ন হালুয়া, কুলফি, জিলিপিও বিখ্যাত রাজধানী শহরের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement