ভরতপুরে এ ভাবেই দেখা পেয়ে যেতে পারেন এগ্রেটের।
পক্ষীপুর ভরতপুর
ধূসর রাজস্থানে পাখি দেখার সেরা ঠিকানা। মাঝে মাঝে ছোট ছোট জলাশয়। কুয়াশার জমায়েত। ভরতপুর কেওলাদেও ন্যাশনাল পার্কের অন্দরমহলে প্রায় ৪০০ প্রজাতির পাখির আনাগোনা। নভেম্বর থেকে মার্চ, এখানে পাখিদের দেখা মেলে। ইউরেশিয়ান স্পুনবিল, আইবিশ, গ্রে হর্ন, বার-হেডেড গুজ, রুডিশেল ডাক, কটন পিগমি গুজ, ফেরুজিনাস ডাক। গোল থালার মতো ডুব সূর্যের সঙ্গে পেলিকানদের ওড়ার দৃশ্য অনবদ্য।
কী ভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ১২৩০৭ যোধপুর এক্সপ্রেসে সরাসরি ভরতপুর চলে আসুন। দিল্লি হয়েও আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন: পর্যটন দফতরের হোটেল সারস (০৫৬৪৪-২২৩৭৯০) ভাড়া ১৩০০-১৮০০ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে নানা বেসরকারি হোটেল।
পার্পল হেরন।
আরও পড়ুন: ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রতীক রয়্যাল কোট অব আর্মস এ শহরে!
জমজমাট জিলিং
আপাত নিঝুমপুর। পাখির কুজন, নীরবতা ভেঙে খান খান করে দেয়। চার দিকে আপেলের বাগিচা, পাইন, ওক আর রডোডেনড্রনের মায়াময় পরিবেশ। আর এখানকার পাখিদের পাঠশালা। কুমায়ুনের এক অল্পচেনা পাহাড়ি গ্রামের নাম জিলিং। পাহাড়ের কোলে বসানো সুন্দর ব্রিটিশ আমলের বাংলো। নীল আকাশের নীচে গাছেদের পাতায়-পাতায়, শাখায়-শাখায় ঘুরে বেড়ায় উডপেকার, রাসেট স্প্যারো, ব্ল্যাক হেডেড জে, ব্লু হুইসলিং থ্রাস, কোকলাস ফ্লেজ্যান্টদের রাজ্যপাট। তাই পক্ষীপ্রেমীরা এখানে বারে বারে ছুটে আসেন। পাখি দেখার জন্য জিলিংয়ের জুড়ি মেলা ভার।
কী ভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ট্রেনে লালকুয়া নেমে মাটিয়াল। এখান থেকে আড়াই কিমির হালকা ট্রেক অথবা পনির পিঠে চেপে চলে আসা যায় জিলিং।
কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার জন্য রয়েছে জিলিং এস্টেট। www.jillingestate.com
পক্ষীপ্রেমীদের প্রিয় জিলিংয়ে এদিক ওদিক এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে।
লাভলি লাটপাঞ্চার
৪৫০০ ফুট উচ্চতায় এক চিরবসন্তের দেশ। মহানন্দা অভয়ারণ্যের পাদদেশে গহিন শালের জঙ্গলমহল আকাশ ছুঁতে চাইছে। ঠিক যেন রণপা পরা সৈনিকের দল গোটা জঙ্গলমহল তাদের দখলে রেখেছে। পাহাড়ের ঢালে ছোট্ট পাহাড়ি জনপদের নাম লাটপাঞ্চার। শিশিরভেজা পাথরের গায়ে নানান রঙের প্রজাপতিদের মেলা।পাহাড়ের ধাপে অর্গানিক ফসলের চাষ। পাহাড় গ্রামে হোমস্টের অসাধারণ আতিথেয়তার আপ্যায়নের মুগ্ধতা। ছিমছাম রিসর্টের বারান্দা থেকে সূর্যস্নাত দিনে উপভোগ করা যায় লাটপাঞ্চারের অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা। সবুজবনে নানান পাখির আনাগোনা, পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। গালভরা নাম তাদের। রেড-হেডেড ট্রোগেন, স্কারলেট মিনিভেট, গ্রে বুশচ্যাট, ব্লু-উইংড মিনলা, ফেয়ারি ব্লুবার্ড, রাস্তি-চিকড সিমিটার এবং দুর্লভ প্রজাতির রুফাস-নেকড হর্নবিল। এরা অদ্ভুত ধরনের ‘সাঁই সাঁই’ শব্দ করে ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেড়ায়। লাটপাঞ্চারের জঙ্গলমহলের বন্যপ্রাণের লাটসাহেবি দেখলে অবাক হতে হয়। মালাবান জায়েন্ট স্কুইরেল, শ্লথ বিয়ার, চিতা এবং প্রাগৈতিহাসিক যুগের উভচর, বিরল প্রজাতির হিমালয়ান স্যালামান্ডার। সারা দিন উপত্যকার আনাচকানাচ ঘুরে বেড়িয়ে, দিনের শেষে চলে এলাম অহলদাঁড়া ভিউপয়েন্টে। সূর্যাস্তের অপরূপ শোভামাখা লাটপাঞ্চারকে কনে দেখা গোধূলির আলোয় মনে হবে এ যেন এক মায়াজগৎ।
পর দিন ভোরের আলো ফুটতেই অপার্থিব লাবণ্য ছড়িয়ে পরতেই বেরিয়ে পড়লাম নামথিং পোখরির দিকে। তার পর চাতকের প্রতীক্ষার পর দেখা মিলল হিমালয়ান স্যালামান্ডারের যারা আজ লুপ্তপ্রায়।
কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোমস্টে।
কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে এনজেপি। দূরত্ব ৬০ কিমি। কালীঝোরা থেকে মাত্র ১৫ কিমি।
স্কারলেট মিনিভেট।
আরও পড়ুন: অপার নিস্তব্ধতায় মোড়া ভালবাসার চারখোল
কেতাবি কিতাম
দক্ষিণ সিকিমের বার্ডওয়াচিং ডেস্টিনেশন। মেল্লি থেকে নামচি যাওয়ার পথে প্রায় ৩,২০০ ফুট উচ্চতায় ৬ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে পাখির এক আবাসভূমি। প্রায় ১১০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। ছোট ছোট গ্রামের বাড়িতে ফুলের আসর। লেপচা, শেরপাদের গ্রাম পেরিয়ে তমাল সরোবর চলে আসুন। চোখের সামনে ওরিয়েন্টাল হোয়াইট আই, ব্লু থ্রোটেড বারবেট, ব্ল্যাক ড্রঙ্গো-সহ আরও নানা পাখির কলরবে মেতে থাকুন কয়েকটা দিন।
কী ভাবে যাবেন
এনজেপি থেকে মেল্লি হয়ে নামচির পথে প্রায় ১১০ কিমি। সময় নেবে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা। গাড়ি ভাড়া করে চলে আসা যায়।
তমাল সরোবরের কাছে এক জোড়া ব্ল্যাক ড্রঙ্গো।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোমস্টে। এশা লজ (০৯৪৭৪৮৩৩৫৫৩), ভাড়া ৯০০-১,২০০ টাকা। থাপা হোমস্টে (০৯৭৩৩১০৪৮২৫) ভাড়া ৯০০- ১,২০০ টাকা। থাকাখাওয়া সমেত মাথাপিছু।
চলো চাকুং
নামের মতোই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাহার। পশ্চিম সিকিমের এক আনকোরা ডেস্টিনেশন। চাকুং। জোড়থাং থেকে প্রায় ১৩ কিমি। গাছে গাছে কমলার বাহার। আকাশছোঁয়া ধুপি, পাইনের বাহার। পাহাড়ের ধাপে ধাপে অরগানিক ফসলের ক্ষেত। ঝকঝকে নীল আকাশ, কাঞ্চনজঙ্ঘার হাসিমুখ, আর গাছে গাছে পাখিদের কূজন। এই নিয়েই একদম আনকোরা চাকুং। তাদের নামধাম চমকে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। স্কারলেট মিনিভেট, লংটেল ব্রডবিল, প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার, ব্ল হুইসলিং থ্রাস-সহ নানান পাখির আড়ম্বর।
পক্ষীপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চাকুং।
কী ভাবে যাবেন
এনজেপি থেকে জোড়থাং। সেখান থেকে ১৩ কিমি গেলেই চাকুং।
কোথায় থাকবেন
এখানে থাকার একটাই ঠিকানা। কাজি হোমস্টে (০৯৮৩৬৮০১৩৫২) ভাড়া ১,৩০০-১,৫০০ টাকা। জনপ্রতি, থাকাখাওয়া সমেত।
মায়াবী মাগুরমারি
উত্তরবঙ্গের এক অল্পচেনা ঠিকানা। যেখানে গা ছমছমে গভীর জঙ্গল আর তার মাঝে ওঁরাও জনজাতিদের গ্রাম। এনজেপি থেকে মিশকালো গজলডোবাগামী রাস্তায় ঢুকে পরুন। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল ডিভিশনের আপালচাঁদ গহিন অরণ্যর মাঝে কাঠামবাড়ির জঙ্গল মোড়। জঙ্গলের মাঝে ডান দিকে ঢুকে গিয়েছে মখমলি, কৈলাশপুর চা বাগান। এই কাঠামবাড়ি অরণ্যর গা ঘেঁষে মেঠো পথের ধারে ঢেউখেলানো সবুজ ধানক্ষেত। তারই মাঝে ওঁরাও জনজাতিদের গ্রাম। মাগুরমারি। ভোরের মায়াবি আলতো আলোর ম্যাজিক্যাল এফেক্ট মাখা বাংলার এক আদিবাসী গ্রামের ছবি অসাধারণ। এখানে ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। শীতে এখানে প্রায় ১২০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। মাগুরমারি পক্ষীপ্রেমীদের এক নতুন ঠিকানা।
গ্রেট বারবেট।
আরও পড়ুন: ভুবনবিখ্যাত গুহাচিত্রের সন্ধানে অজিণ্ঠায়
কী ভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে ট্রেনে এনজেপি। সেখান থেকে দূরত্ব ৪৭ কিমি। মাগুরমারির নিকটবর্তী রেলস্টেশন ওদলাবাড়ি। দূরত্ব ২২ কিমি। গাড়িতে চলে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
এখানে থাকার জন্য রয়েছে মাগুরমারি ইকো ট্রাভেলার্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির চারটি সুন্দর কটেজ। যোগাযোগ ৯৯৩২৩১৭২৯৯/৩৫৩-২৫৪০-৮০৯ ভাড়া ১,৫০০ টাকা। খাওয়াদাওয়া ৪৫০ টাকা জনপ্রতি।
ছবি: সিদ্ধার্থ দে ও মৌসুমী চক্রবর্তী।
(লেখক পরিচিতি: ক্লাস নাইনে পড়াকালীন পাড়াতুতো মামার সঙ্গে মাত্র ৭০০ টাকা পকেটে নিয়ে সান্দাকফু ট্রেক। সুযোগ পেলেই প্রিয় পাহাড়ে পালিয়ে যাওয়া। কুয়াশামাখা খরস্রোতা নদী কিংবা চলমান জীবনছবিতে ক্লিক, ক্লিক। লাদাখে গর্তে সেঁধিয়ে যাওয়া মারমটের ছবি তুলতে ভিজে মাটিতে সটান শুয়ে অপেক্ষায় থাকা— এই নিয়েই ক্যামেরা আর কলম সঙ্গী করে ২৪টা বছর। প্রকৃতির টানে ছুটে বেড়ানো থামেনি।)