Travel and Tourism

পায়ে হেঁটে গাড়োয়াল হিমালয়ের বাগিনি হিমবাহের অন্দরে

শীত এসে গেল প্রায়। শীতের বেড়ানো চলবে। কিন্তু এরই পাশাপাশি মোটামুটি চেনা রুটে ট্রেক করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ফেলুন। কারণ, ট্রেকিং শুরু হবে এপ্রিল-মে থেকে। গাড়ি চেপে বেড়ানো ছাড়াও যাঁদের তৃপ্তি পায়ে হেঁটে মাটির আরও কাছে পৌঁছন, তাঁদের জন্য কয়েকটি পর্বে রইল গাড়োয়াল হিমালয়ের পাঁচটি রুট। আজ প্রথম পর্ব।ট্রেনে হরিদ্বার। তারপর বাসে যোশীমঠ (দূরত্ব ২৭৮ কিমি)। যোশীমঠ থেকে মালারিগামী জিপে ৮০ কিলোমিটার দূরে জুমা গ্রাম। জুমা থেকে সে দিনই হাঁটা শুরু হয়ে যায়।

Advertisement

রতনলাল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ২১:৫২
Share:

বাগিনি লোয়ার ক্যাম্প

বাগিনী হিমবাহ

Advertisement

নন্দাদেবী জাতীয় উদ্যানের উত্তরদিকের প্রাচীরগাত্রে বাগিনি হিমবাহের বিস্তার। স্বভাবতই এই হিমবাহের মাঝে পৌঁছে নন্দাদেবী স্যাংচুয়ারির আউটার ওয়ালের উপর অবস্থিত বহু প্রসিদ্ধ শৃঙ্গমালাকে কাছ থেকে দেখা যাবে।

বাগিনি আপার ক্যাম্প

Advertisement

ট্রেনে হরিদ্বার। তারপর বাসে যোশীমঠ (দূরত্ব ২৭৮ কিমি)। যোশীমঠ থেকে মালারিগামী জিপে ৮০ কিলোমিটার দূরে জুমা গ্রাম। জুমা থেকে সে দিনই হাঁটা শুরু হয়ে যায়।

১ম দিন জুমা-রুইং (২২৮৬মি)- ৩ কিমি

ধৌলিগঙ্গার উপর ব্রিজ টপকে চলে আসবেন এর বামতটে। সহজ বনপথে ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে উঠে আসবেন রুইং গ্রামে। গ্রামের অনেকটা নীচে দুনাগিরি নালা মিশেছে ধৌলিগঙ্গার সঙ্গে।

বরফে মোড়া দুনাগিরি শৃঙ্গ

প্রথম দিনের হাঁটা এখানেই শেষ করা শ্রেয়। রুইং গ্রাম পর্যন্ত মোটরপথ তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে।

দ্বিতীয় দিন রুইং গ্রাম-ছাজা-দুনাগিরি গ্রাম (৩৩৫৩মি)-৭কিমি

রুইং গ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্বমুখী পথ উঠে চলেছে দুনাগিরি গাডের উজানে। ক্রমে নালাটির প্রবাহ নীচে চলে যাবে ও সেই সঙ্গে গাছপালাও কমে যাবে। পৌঁছে যাবেন ছাজা। এর পর সবুজের আধিক্য কমে যাবে। চড়াইপথে রিজ্ ধরে, আবার কখনও ঝুড়ো পাথরের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উঠে চলুন।

ছবির মতো সুন্দর দুনাগিরি গ্রাম

পরপর কয়েকটা স্পার পেরনোর পর দূর থেকেই দুনাগিরি গ্রামটিকে দেখতে পাবেন। কংক্রিটের পথে উঠে যাবেন প্রাচীন গ্রামটির কাছে। গ্রামটি বেশ বড়। এখান থেকে হাতি ও ঘোড়ি (৬৭২৭মি) পর্বতচূড়া দেখা যাবে। গ্রামকে বাঁ দিকে রেখে ডানপাশে পঞ্চায়েতের বিশ্রামগৃহ।

তৃতীয় দিন দুনাগিরি গ্রাম-লংতোলি-লোয়ার বেসক্যাম্প (৪০০০মি)

গর্পক গ্রাম

গ্রাম টপকে পথ নেমেছে দুনাগিরি নালার ধারে। নদীটি পেরিয়ে এর ডান তীর ধরে চড়াইপথ। বেশ কিছুটা চলার পর আপাত সমতল পথ। চলার পথে নদীর ওপারে ছোট ছোট ঘাসের জমি দেখতে পাবেন। এখানে বাগিনি নালা মিশেছে দক্ষিণ দিক থেকে নেমে আসা দুনাগিরি নালার সঙ্গে। বাগিনি নালা ধরে দক্ষিণ-পূর্বমুখী চড়াই পথে ছোট-বড় পাথরের মধ্য দিয়ে মোরেনের মাঝে পৌঁছে যাবেন। এরই মাঝে কয়েকটি জলধারা লাফিয়ে পেরোতে হবে। দেখতে পাবেন ঋষি, সাতমিনল, হরদেওল শৃঙ্গমালা। ডান দিকের গ্রামরেখা ধরে পৌঁছে যাবেন পাথরে ঘেরা সমতল প্রান্তে। পরপর ক্যাম্পসাইটে থাকাই ভাল। ডান দিকে থাকবে বাগিনি হিমবাহের প্রবাহ।

চতুর্থ দিন লোয়ার বেসক্যাম্প-আপার বেসক্যাম্প (৪৩০০মি)

পাথুরে পথে এগিয়ে চলুন ঋষি পাহাড়ের উদ্দেশে। বোল্ডারের পথে উঠে আসবেন ঘাসে ঢাকা পাহাড়ের ঢালে। একটি নালাকে সঙ্গী করে উপরে উঠে দেখতে পাবেন বাগিনি হিমবাহের বিস্তার। আরও এগিয়ে একটি চোর্তেনকে লক্ষ্য করে উঠে চলুন। হিমবাহটি নেমেছে পশ্চিম দিকে। চোর্তেন থেকে দেখতে পাবেন চ্যাঙাব্যাং, কলঙ্ক, সাতমিনল, হরদেওল ও ঋষি পর্বতচূড়াগুলিকে। হিমবাহটি ক্রমে ডান দিকে বাঁক নেবে। এটি পূর্ব দুনাগিরি, কলঙ্গ ও চ্যাঙাব্যাং শৃঙ্গমালা অঞ্চল থেকে উত্তরদিকে নেমে এসেছে। চোর্তেনের কাছাকাছি তাঁবু টাঙিয়ে নিন। এখান থেকে এই সকল তুষারাবৃত চূড়াগুলিকে হাতের নাগালে মনে হবে।

পঞ্চম দিন থেকে ষষ্ঠ দিন আপার বেসক্যাম্প-দুনাগিরি-রুইং-জুমা

একই পথে দুনাগিরি ও রুইং গ্রাম হয়ে জুমা ফিরে আসবেন। সে দিনই জুমা থেকে গাড়ি চেপে যোশীমঠে ফিরে আসতে পারবেন। যোশীমঠ থেকে হরিদ্বার গাড়িপথ।

ফেরার সময় সেম খড়ক হয়ে অন্য পথে কানাড়ি খাল ও কাল্লা খাল হয়ে তিন দিনে মালারি ফিরে আসতে পারবেন। সেম খড়ক থেকে কানাড়ি খাল (৩৮৪০মি) রাত কাটিয়ে পরদিন রুই হয়ে জুমা পৌঁছন যাবে দুপুরের আগেই। লোয়ার বেসক্যাম্প থেকে এগিয়ে বাগিনি হিমবাহের ডান পার্শ্ব গ্রাবরেখা ধরে কঠিন পথে ঋষিকুণ্ড পৌঁছন যাবে এক দিনে।

মালবাহক ও প্রয়োজনীয় রসদ যোশীমঠ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। নন্দাদেবী বায়োস্ফিয়ারের অন্তর্গত এই অঞ্চলে যাওয়ার জন্য যোশীমঠ থেকে অনুমতি নিতে হবে।

(লেখক পরিচিতি: আক্ষরিক অর্থেই রতনলাল বিশ্বাস ভূপর্যটক। তাঁর ট্রেকিংয়ের শুরু সেই ১৯৭২ সালে। ট্রেকিংয়ে সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তিনি। এ পর্যন্ত মোট ১০১টি ট্রেকিং সম্পন্ন। ব্যাঙ্কে না ঢুকে পূর্ব রেলে চাকরি নিয়েছিলেন বেড়ানোর নেশায়। শুধু পাহাড়েই নয়, গঙ্গাসাগর থেকে হেঁটে মুম্বইয়ে আরব সাগরের উপকূল পর্যন্ত পৌঁছেছেন রতনলাল, সে যাত্রায় পেরিয়েছেন প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। হেঁটেছেন শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ উপকূল ধরেও। ’৭৮ সাল থেকে নেপালে ট্রেক করেছেন পর পর ২৫ বছর। ’৮৭ থেকে ৩০ বছর ধরে যাচ্ছেন লাদাখে। এ পর্যন্ত ট্রেকিং পথ পেরিয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার। পাশাপাশি চলেছে নিরন্তর ক্যামেরার লেন্সে চোখ রাখা। এ পর্যন্ত লিখেছেন ভ্রমণ সংক্রান্ত আটটি গ্রন্থ। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন বছর তিনেক। কিন্তু পদব্রজে বিশ্ব পরিক্রমার নেশা থেকে অবসর নেবেন, এমনটা স্বপ্নেও ভাবেন না রতনলাল।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন