—প্রতীকী ছবি।
কোভিড অতিমারির সময় প্রথম চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তরুণী। তাঁর সঙ্গে আরও ১০ জন সহকর্মী ছিলেন যাঁরা সেই সংস্থায় চাকরিজীবন শুরু করেছিলেন। অতিমারির সময় সব কাজ বাড়ি থেকে অনলাইন মাধ্যমে সারতেন তাঁরা। এক দিন তাঁর অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মী অনলাইন মিটিংয়ে সকলকে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মেনে অন্য কর্মীদের সঙ্গে মিটিংয়ে যোগ দিয়েছিলেন তরুণীও। কিন্তু অনলাইন মিটিংয়ে মুচকি হেসে ফেলার জন্য নাকি চাকরি খোয়াতে বসছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সমাজমাধ্যমের পাতায় পোস্ট করেন তরুণী (যদিও তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)।
‘আর/ইন্ডিয়ানওয়ার্কপ্লেস’ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে রেডিটের পাতায় একটি পোস্ট করা হয়েছে। কোনও নামোল্লেখ না করে তরুণী তাঁর কর্মজীবনের একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, কোভিড অতিমারির সময় এক বেসরকারি সংস্থায় চাকরিজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। তরুণীর মতো আরও ১০ জন সেই সংস্থার হাত ধরেই চাকরিজীবন শুরু করেছিলেন। চাকরির প্রথম দিনে সকল অধস্তন কর্মীকে নিয়ে সেই অফিসের ঊর্ধবতনেরা একটি অনলাইন মিটিংয়ের আয়োজন করেছিলেন। সেই মিটিংয়ে অধস্তনেরা বাকিদের সঙ্গে পরিচয়পর্ব সারছিলেন।
তরুণীর দাবি, তাঁর কাছে একটি গেমিং ল্যাপটপ ছিল। সেই ল্যাপটপের ক্যামেরা নীচের দিকে লাগানো ছিল। তরুণী ল্যাপটপটি এমন ভাবে ধরেছিলেন যে, একনজরে দেখলে মনে হত তিনি বিছানায় শুয়ে কথা বলছেন। কিন্তু তিনি সোজা হয়ে বসেই মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই মিটিংয়ে অধস্তনদের সঙ্গে ঠাট্টা করছিলেন এক ঊর্ধ্বতন। তরুণীর এক বান্ধবীকে নিয়েও মজার কথা বলেন তিনি। সে কথা শুনে মিটিংয়ে উপস্থিত সকলেই হাসাহাসি শুরু করে দেন। তরুণীও মুচকি হেসে ফেলেন। কিন্তু সকলকে এড়িয়ে ঊর্ধ্বতনের নজর গিয়ে পড়েছিল তরুণীর দিকে।
মিটিংয়ে তরুণীর নাম উল্লেখ করে সেই ঊর্ধ্বতন প্রশ্ন করেন, ‘‘তোমার এত হাসি কেন পাচ্ছে? কী হয়েছে?’’ সকলের সামনে এই প্রশ্ন শুনে অপ্রস্তুত হয়ে যান তরুণী। তিনি উত্তরে বলেন, ‘‘কিছু না, স্যর। সব ঠিক আছে।’’ এই ঘটনায় বেশ অবাক হয়েছিলেন তরুণী। তার পর আরও ছ’মাস কেটে গিয়েছিল। তরুণী সেই সময়ের মধ্যে কাজের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতনদের প্রশংসাও অর্জন করে ফেলেছিলেন। কিন্তু বেঁকে বসেছিলেন মিটিংয়ে তরুণীর হাসি নিয়ে প্রশ্ন করা সেই ঊর্ধ্বতন। তরুণী জানতে পারেন যে, সেই ঊর্ধ্বতন নাকি তরুণীর কাজের হিসেবনিকেশ চেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সংস্থার কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন।
মিটিংয়ে উপস্থিত থাকাকালীন তরুণী বিছানায় শুয়েছিলেন, তা-ও নাকি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন তিনি। অফিসের অন্য ঊর্ধ্বতনেরা এই বিষয়ে অবগত হলেও কেউ আর তরুণীকে তা জানাননি। পরে সব জানতে পেরে চিন্তিত হয়ে পড়েন তিনি। সেই ঊর্ধ্বতন নাকি তরুণীকে চাকরি থেকে বার করে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতনের প্রস্তাবে সম্মতি জানাননি অফিসের অন্যেরা। বরং তাঁরা তরুণীকে সমর্থন করে বলেছিলেন, ‘‘তোমার চিন্তার কোনও কারণ নেই। তুমি ভাল কাজ করো। সে দিন তুমি যে ওঁর কথা শুনে হেসেছিলে, তাতে অপমানিত বোধ করেছিলেন তিনি। শোধ তুলতেই তোমার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানিয়েছেন।’’
তরুণী তাঁর অফিসের অন্য ঊর্ধ্বতনদের কৃতজ্ঞতা জানালেও সেই বিশেষ ঊর্ধ্বতনের প্রতি ক্ষোভপ্রকাশ করেন। পরে অবশ্য সেই সংস্থার চাকরি ছেড়েও দেন তিনি। তরুণীর এই অভিজ্ঞতার কথা শুনে এক নেটাগরিক লিখেছেন, ‘‘অফিসের রাজনীতি ভয়ঙ্কর। আমায় এক ঊর্ধ্বতন কেক খেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি কেক খাই না বলে তাঁর কাছ থেকে কেক নিইনি। তা নিয়ে যে অফিসে তিনি কী অশান্তি বাধিয়েছিলেন তা ধারণার বাইরে!’’ আবার এক নেটাগরিক সেই তরুণীকে পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, ‘‘দিনের শেষে নিজের কাজের জায়গায় সৎ থাকুন। তা হলে দেখবেন সময়মতো কর্মফলও পাবেন।’’