Bratati Bandyopadhyay

Bengal Polls 2021: দলের থেকে কিছু পাওয়ার লোভে নয়, আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজনীতিতে পা রাখুক নতুন প্রজন্ম

আমার ছোটবেলায় নির্বাচন আর রেডিয়োর খবরের দারুণ বন্ধুত্ব। এটাই ছিল আমাদের বাড়ির রেওয়াজ।

Advertisement

ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১ ১৫:১৫
Share:

‘সেই সময় শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পেতেন মেধা অনুসারে।’

আমার ছোটবেলায় নির্বাচন আর রেডিয়োর খবরের দারুণ বন্ধুত্ব। এটাই ছিল আমাদের বাড়ির রেওয়াজ। ভোট এলেই সারাদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মা-বাবা খুঁটিয়ে নির্বাচনী সংবাদ শুনতেন। তার উপর আমাদের বাড়িতে তেরঙা পতাকার প্রভাব। স্বাধীনতা-পরবর্তী যুগে ঠাকুরদার আমল হয়ে বাবার সময়েও দেখেছি, বাড়ির সবাই ডান ঘেঁষা। ইন্দিরা গাঁধীর প্রচণ্ড ভক্ত।

Advertisement

জরুরি অবস্থা জারির পরে চারিদিকে সমালোচনার ঝড় বইছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। তার মধ্যেও আমাদের বাড়ি যেন ব্যতিক্রম। কংগ্রেস জিতলে অন্দরমহলের চেহারাটাই যেন বদলে। সবাই খুশি। বাড়িতে যেন অলিখিত উৎসব! তখন আমি অনেকটাই ছোট। রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা একেবারেই তৈরি হয়নি। কিন্তু ভোটের দিনে হঠাৎ বদলে যাওয়া বাড়ির পরিবেশ ছুঁয়ে যেত আমাকেও।

ধীরে ধীরে বড় হলাম। রাজনৈতিক বোধ তৈরি হল। স্পষ্ট হল মানসিকতাও। তখন আমি একটি সরকারি আবাসনের বাসিন্দা। কলকাতা উত্তাল নকশাল আন্দোলনে। আমার অঙ্কের স্যার অনির্বাণদা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝকঝকে ছাত্র। অঙ্কের সঙ্গে সমকালীন সমাজ, সময় উঠে আসত তাঁর আলোচনায়। রোজ অঙ্কের ক্লাসের পর তাঁর ওই আলাচনাই আমায় তখনকার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করেছিল। আরও একটি ঘটনা হঠাৎ করেই যেন রাজনৈতিক দুনিয়া সম্বন্ধে সজাগ করে দিয়েছিল আমাকে। আমাদের ৪ তলা ফ্ল্যাটের সিঁড়ি, ছাদ থেকে রোজ রাতে ভেসে আসত পুলিশের বুটের মচমচানি। পরে মা-বাবা, পাড়ার বয়ঃজ্যেষ্ঠদের থেকে শুনতাম, পুলিশ এসেছিল নকশালদের খোঁজে। ওই সময়েই এক দিন অনির্বাণদা ধরা পড়লেন পুলিশের হাতে।
এর পর আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পালা। স্নাতক-স্নাতকোত্তর পাঠের জন্য কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে কিন্তু তথাকথিত রাজনৈতিক দাদাদের দেখা পাইনি। অর্থাৎ, আমাদের সময়ে কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতির দখলদারি ততটা ছিল না। কলেজে সিট পেতে গেলে সেই সময় কোনও দলে নাম লেখাতে হত না। শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পেতেন মেধা অনুসারে।

Advertisement

‘কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগে রাজনীতি চলত তার মতো।’

বাবাদের আমলের কংগ্রেসের প্রতিপত্তি আমাদের কলেজবেলায় অনেকটাই স্তিমিত। রাজনীতির আঙিনায় উঠে আসছে বাম দল। কানে ভেসে আসত সেই দলের আন্দোলনের টুকরো খবর। এ ভাবেই কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেল সেক্রেটারিও হয়েছি। তবে কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়। নির্দল প্রার্থী হিসেবে। তত দিনে বাচিক শিল্পী হিসেবে আমি জনপ্রিয়। সবাই বেশ পছন্দ করতেন। ফলে, রাজনীতির ছত্রছায়া আমায় ঢেকে ফেলেনি। বরং অধ্যাপক, শিক্ষার্থী, কলেজের সাধারণ কর্মীরা ভালবেসে ভোট দিয়ে জিতিয়ে দিতেন নির্দ্বিধায়। প্রিয় ছাত্রী হিসেবে কোন কোন অধ্যাপকদের স্নেহ পেয়েছি জানেন? অসীম দাশগুপ্ত, বিপ্লব দাশগুপ্তের মতো বাম দলের প্রথম সারির নেতাদের। যাঁরা পরবর্তী কালে মন্ত্রীত্ব সামলেছেন।

২১ শতকে দাঁড়িয়ে তখনকার একটি বিষয়ের কথা না বলে পারছি না। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগে রাজনীতি চলত তার মতো। ছাত্রেরা তাঁদের ইচ্ছেমতো। কখনও আমাদের জোর করে কেউ প্রভাবিত করেনি বা করার চেষ্টাও করেনি। আমরা স্বাধীন ভাবে যে যার আদর্শ বেছে নিয়েছি। আদর্শে না মিললে নির্দলকে সমর্থন করেছি। তাই নিয়ে কখনও সংঘর্ষ বাঁধেনি। এখন ছাত্র রাজনীতি নানা রঙে রঙিন! সংবাদমাধ্যমের দৌলতে সেই সব খবর কানে আসে। নিজের চোখেও দেখি।
এই রঙিন রাজনীতি কিন্তু আমাকে আর আকর্ষণ করে না। নানা ধরনের ঘটনা দেখতে দেখতে, বুঝতে বুঝতে, শুনতে শুনতে এক এক সময় যেন ক্লান্ত লাগে। হাসিও পায়।

‘খেলাতেও ইদানীং রাজনীতি শব্দটির দৌরাত্ম্য।’

'রাজনীতি' শব্দের প্রকৃত অর্থ কী? রাজার নীতি। জগতের শ্রেষ্ঠ নীতি হিসেবে পরিচিত এই নীতি তো কুর্নিশের যোগ্য! বদলে দেখুন, কথায় কথায় ইদানীং সবাই কেমন বলেন, 'এই! তুই কিন্তু সব বিষয় নিয়ে রাজনীতি করবি না'। অর্থাৎ, গণ্ডগোল করিস না। রাজনীতি এখন গণ্ডগোলের নামান্তর?
এমনকি, খেলাতেও ইদানীং 'রাজনীতি' শব্দটির দৌরাত্ম্য। এখানে তার অর্থ দুর্নীতি! একুশ শতক এসে রাজার নীতির মানেই বদলে দিল! তাও আশা করতে কে না ভালবাসে? আমিও আশায় বাঁচি, আগামী নির্বাচন সুস্থ, সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে। আমরা সমস্ত প্রলোভন থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখব। কোনও রং দেখে নয়, দলের থেকে কিছু পাওয়ার লোভে নয়, আগামী প্রজন্ম নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে রাজনীতিতে আসবেন। আর একান্তই দলের রং যদি তাঁদের টানে বলব, সেই দলের নীতিকে নিজের আদর্শ হিসেবে মানতে শিখুন। অনুভব করুন। তার পরে না হয় সেই দলে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখবেন। রাজার নীতি তবেই তো প্রকৃত মর্যাদা পাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন