গুলফাম হোসেন। নিজস্ব চিত্র।
সাপের ছোবলে মৃত মেয়েকে বাঁচানোর বুজরুকি দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল এক গুনিন। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম গুলফাম হোসেন।
বুধবার রাতে বসিরহাটের ধলতিথার পশ্চিমপাড়ার এই ঘটনায় সেরিনা খাতুন (১৪) নামে মৃত কিশোরীর দেহ বসিরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। চিকিৎসকেরা জানান, চব্বিশ ঘণ্টা আগেই মারা গিয়েছে মেয়েটি। দেহের ময়না-তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গুলফামের মা বিলকিস বেগমের অবশ্য দাবি, সাপে কাটা রোগীর দেহে সাত দিন পর্যন্ত প্রাণ থাকে। ছেলের মন্ত্রে সেরিনা যখন বেঁচে উঠছে, তখন সব বুজরুকি বলে আত্মীয়েরা ষড়যন্ত্র করে পুলিশকে খবর দিয়ে ফাঁসিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্দেশখালির খাস সাকদা গ্রামে থাকত মাদ্রাসা ছাত্রী সেরিনা। ইদের দিন গিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার অমলেশ্বরপুর গ্রামে পিসির বাড়িতে। দুপুরে ভাত খাওয়ার সময়ে শশা তুলতে মাঠে যায়। সেখানেই সাপে ছোবল মারে পায়ে।
সেরিনাকে হাসপাতালের বদলে নিয়ে যাওয়া হয় এক হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে। এ দিকে, সেরিনাকে সাপে ছোবল মেরেছে জানতে পেরে তার বাড়ির লোক অমলেশ্বরপুর গ্রামে যায়। ততক্ষণে ওঝা-গুনিন দিয়ে শুরু হয়েছে সেরিনাকে বাঁচানোর চেষ্টা।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সন্দেশখালির সরবেড়িয়া হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, সময় মতো আনলে হয় তো বাঁচানো যেত মেয়েটিকে। তা শুনে শেষকৃত্যের জন্য বাড়িতে আনা হয় দেহ। মঙ্গলবার কবর খোঁড়া থেকে শুরু করে বাকি কাজ শেষ হয়। এমন সময়ে গ্রামের একজনের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় গুলফামের সঙ্গে। গুলফামের লোক যায় সন্দেশখালির খাস সাকদা গ্রামে। সেখান থেকে গাড়িতে করে দেহ আনা হয় বসিরহাটে। ততক্ষণে দেহে পচন ধরে গন্ধ বেরোচ্ছে।
সন্ধ্যা থেকে গুলফামের ডেরায় শুরু হয় ঝাড়ফুঁক। ভিড় জমতে থাকে। পরে খবর পেয়ে হাজির হয় পুলিশ।
মৃতার কাকা জামির আলির পরে আফসোস, ‘‘সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে গেল হয় তো মেয়েটা বেঁচে যেত। অন্যের কথায় বুজরুকদের বিশ্বাস করতে গিয়ে এই অবস্থা হল।’’
সংস্কার অবশ্য কাটেনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরেই ওঝা-গুনিনদের দৌরাত্ম্য মুছতে গাঁ-গঞ্জে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনের পক্ষে বিজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেকেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে গুনিন পেশা ছেড়েছেন বটে, তবে ওই পেশার দাপট এখনও যথেষ্ট।’’