ঝুঁকির মুখে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য
Coronavirus

সাত হাজার মাস্ক চেয়ে মিলেছে ৪০টি

অনেক চিকিৎসক মনে করছেন, পিপিই পেতে দেরি হলে তা পরবর্তী সময়ে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। অনেকে এ প্রসঙ্গে করোনায় উজাড় হয়ে যাওয়া ইটালির উদাহরণ তুলে আনছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ০৬:২০
Share:

ভাঙড়ের একটি ক্যাম্পে পিপিই কিট ছাড়াই স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: সামসুল হুদা

বিষয়টির সমাধানে তিনি যে চেষ্টা চালাচ্ছেন, তা জানিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ১০ লক্ষ ‘পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই)’ বরাত দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রের কাছে বার বার চেয়েও পর্যাপ্ত পিপিই পাচ্ছেন না বলে তাঁর অভিযোগ। ফলে, করোনা-মোকাবিলায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত পরিমাণে কবে মিলবে, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছেই।

Advertisement

অনেক চিকিৎসক মনে করছেন, পিপিই পেতে দেরি হলে তা পরবর্তী সময়ে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। অনেকে এ প্রসঙ্গে করোনায় উজাড় হয়ে যাওয়া ইটালির উদাহরণ তুলে আনছেন। তাঁদের মতে, সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত ৬০ জন চিকিৎসক এবং অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন শুধুমাত্র প্রথম দফায় ঠিকঠাক নিরাপত্তা সরঞ্জাম না-থাকায়। ইটালির করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার এটাও অন্যতম কারণ বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। অথচ, ইটালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইউরোপের অন্যতম সেরা বলে ধরা হয়। তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টিই করোনা-লড়াইতে অগ্রাধিকার পাওয়ার উচিত বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের অনেকেই।

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু হাসপাতালে কথা বলে জানা গেল, প্রয়োজনের তুলনায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার অনেক কম। তাই ঝুঁকি এড়াতে সে সবের ব্যবস্থা তাঁদের নিজেদেরই করতে হচ্ছে। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে চিকিৎসক, নার্সদের মধ্যে।

Advertisement

বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, সাফাই কর্মী মিলিয়ে মোট কর্মী ৪৫০ জন। জ্বরের রোগীদের জন্য চালু হয়েছে ফিভার ক্লিনিক। হাসপাতাল সূত্রে খবর, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, গ্লাভস, হেড ক্যাপ বা পোশাক অপ্রতুল। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিপদের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে। হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “সরকারি ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক, এবং বিভিন্ন ব্যক্তি মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দিয়ে সাহায্য করছেন। টেনেটুনে চলে যাচ্ছে।” গাইঘাটা ব্লকে সরকারি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা ৪৭০ জন। সরকারি ভাবে মাত্র ২০০টি মাস্ক পাওয়া গিয়েছে। সুরক্ষা পোশাক পাওয়া গিয়েছে দু’টি! চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সবই সার্জিক্যাল মাস্ক। ফলে সেগুলি একবারের বেশি ব্যবহার করার কথা নয়। ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। ব্যারাকপুর বিএন বসু হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, হাসপাতালে সার্জিক্যাল এবং এন-৯৫ মাস্ক রয়েছে। আপাতত সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব নেই।

বসিরহাট জেলা এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষা সরঞ্জাম আছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারের অভাব রয়েছে। হাসপাতাল জীবাণুমুক্ত করার সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সলিউশন আরও প্রয়োজন। হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, “প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৪০০-র বেশি মাস্ক, ১২০টি মতো হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার, ১০ হাজারের বেশি গ্লাভস রয়েছে।” হাসনাবাদ, মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ ও সন্দেশখালি ব্লকের গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, টুপি, স্যানিটাইজ়ার, হ্যান্ডওয়াশ আপাতত দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। এক বার ব্যবহারযোগ্য সার্জিকাল থ্রি লেয়ার মাস্ক ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে দু’তিনদিন ব্যবহার করতে হচ্ছে। এক বিএমওএইচ জানান, সাত হাজার মাস্ক চেয়ে তিনি পেয়েছেন ৪০টি। ফলে সকলেই নিজেরাই ব্যবস্থা করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট সলিউশনের সরবরাহ অনেক কম।ডায়মন্ড হারবার থেকে শুরু করে ক্যানিং, কুলতলির হাসপাতালগুলিতেও দেখা যাচ্ছে একই ছবি। কুলতলি ব্লক হাসপাতালের এক কর্মী জানান, হাসপাতালে দু’টি সম্পূর্ণ সুরক্ষা কিট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন অনেক বেশি। বাধ্য হয়ে শুধু মাস্ক এবং গ্লাভস পরেই কাজ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। গ্রামে গ্রামে গিয়ে যে সব আশাকর্মী বাইরে থেকে ফেরা লোকজনের উপরে নজর রাখছেন, তাঁদেরও ভরসা শুধুই মাস্কই। ক্যানিং ২ ব্লকের এক সরকারি চিকিৎসক বলেন, এই সময়ে অনেকেই জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। ব্লক হাসপাতালেই প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু ব্লক স্তরের চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কোনও রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হয়নি। যে কোনও সময়ো যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। অনেকেই নিজেদের উদ্যোগে মাস্ক, গ্লাভস জোগাড় করেছেন। হাসপাতালগুলিতে স্যানিটাইজারের অভাব আছে। ভাঙড়ের এক স্বাস্থ্যকর্মীর অভিযোগ, ‘‘সরকারি নির্দেশ মতো মানুষকে সচেতন করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অথচ সরকারি ভাবে আমাদের সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। জানি না কী হবে।’’

কেন স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা কিট দেওয়া হচ্ছে না? দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পিপিই-র (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) জোগান কম। তাই রাজ্য জুড়েই এই পরিস্থিতি চলছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জামের কথা বলেছি। আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা কিটের সরবরাহ না থাকায় ব্লক বা মহকুমা হাসপাতালগুলিতে পাঠাতে পারছি না।” দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরিমল ডাকুয়া বলেন, “প্রাথমিক ভাবে কিছু পার্সোনাল প্রটেকশান কিট হাসপাতালগুলিতে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। চেষ্টা চলছে দ্রুত আরও কিট সরবরাহ করার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন